মূল্যস্ফীতির চাপ!!

 মূল্যস্ফীতির চাপ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতোই এখন সাধারণ মানুষের জীবনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি স্থায়ী রূপ নিয়েছে।এটা এখন নিশ্চিত হয়ে গেছে,আয় না বাড়লেও সাধারণ মানুষের জীবন নির্বাহ করার জন্য খরচের পরিমাণ হু হু করে বাড়বে।কিন্তু এর মধ্যে লাগাম পরানোর কোন বিষয় নেই। যদিও এটা মনে করা হয়, সরকারের অন্যতম কাজ হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করে তোলার জন্য তার নিত্যদিনের ব্যয়ের পরিমাণকে কমিয়ে এনে জীবনের মানকে উন্নত করা। এতে ব্যক্তির জীবনের মান যেমন বৃদ্ধি পাবে,ঠিক তেমনি এর সঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্রেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু বাস্তব জীবনে হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটাই।দিন যত যাচ্ছে, জীবনধারণের ব্যয় তত বাড়ছে।অথচ ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানুষের আয় বাড়া তো দূরে থাক, বরং মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো আরও গভীর সংকটের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে।আর এর ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন দিন এনে দিন খাওয়া এবং স্থির আয়ের মানুষগুলো।যদিও একথা বলা হচ্ছে যে,এই মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা একটি নির্দিষ্ট কোন দেশ বা গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।বরং গোটা বিশ্বজুড়েই এই সংকট এখন মাথাচাড়া দিচ্ছে।গোটা দুনিয়াজুড়েই বিজ্ঞানী এবং সমাজ বিশ্লেষকরা অনেক আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে এটা একরকম স্পষ্ট,মূল্যবৃদ্ধির সতর্কবার্তার সময়সীমার অনেক আগেই দরজায় দরজায় খাদ্য ও নিত্যপণ্যের জিনিসের বাড়তি মূল্য এসে কড়া নাড়া শুরু করে দিয়েছে।অর্থাৎ জীবন নির্বাহের সংকট এবার আরও অনেক কঠিন থেকে কঠিনতর হতে চলেছে। শুধু জনসংখ্যা বৃদ্ধিই এর জন্য দায়ী নয়।কিংবা জিনিসপত্রের বিশাল চাহিদার তুলনায় জোগানের অপর্যাপ্ততা দিয়েও এই সংকটকে নিরুপণ করা যাবে না।মূল্যবৃদ্ধির পেছনে অস্বাভাবিক রকম ভূমিকা পালন করছে পৃথিবীর পরিবর্তিত আবহাওয়া ও জলবায়ু।এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল মেরুকরণ এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি।বিগত বছরগুলোর তথ্য দেখলে দেখা যাবে,গত ছয় বছরে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন এই পরিস্থিতিকে আরও অনেকটাই জটিল করে তুলেছে।একদিকে প্রাকৃতিক দুর্বিপাক,বিপর্যয় যেমন পূর্বের তুলনায় প্রায় ছয়গুণ বেড়েছে,তেমনি বৃষ্টির বিভ্রাট এবং বেশ কিছু অঞ্চলে উষ্ণায়ন ও অত্যধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ফসলের উৎপাদন প্রায় দুই তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। একটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ২.৯ শতাংশ।আর এই চার বছরের মধ্যে সেই মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৩ শতাংশ।এর মধ্যে বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে লাগামহীন যুদ্ধ পরিস্থিতি।এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্য যেন বিস্ফোরণের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এক আগ্নেয়গিরি।একদিকে পশিচমা দেশগুলোর কূটনৈতিক দ্বিচারিতা এবং তাদের মৌন সমর্থনেই শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়,গোটা বিশ্বজুড়েই রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা অস্থির হয়ে উঠেছে।ফলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে হু হু করে।যে কারণেই সংকট ঘনীভূত হোক না কেন, এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে খাদ্য ও পণ্যমূল্যের উপর। চলতি ব্যবস্থায় এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা পুরোপুরিই অসম্ভব।তবে ভারতের বর্তমান অবস্থার নিরিখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কিত বক্তব্যটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।তাদের মতে, খাদ্যের মূল্যস্ফীতিকে ভারতে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না মূলত জলবায়ুর অস্বাভাবিক মতিগতির কারণেই।গত সেপ্টেম্বরে প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস স্বীকার করেছেন ভারতীয় অর্থনীতির গ্রামীণ চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি মানুষের ব্যক্তিগত খরচ বেড়েছে ৭.৪ শতাংশ।আবার অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। গ্রামীণ পরিবারে যেখানে মাসিক খরচ ছিল গড়ে ১৪৩০ টাকা, সেটা ২০২২-২৩ সালে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে ৩,৭৭৩ টাকা।এটাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলার চেষ্টা করা হলেও,খরচের ধরনগুলির মধ্যে যে বিশেষ কোন পরিবর্তন হয়নি,অর্থাৎ জীবনযাত্রার গুণ-মান সেই অর্থে না বাড়লেও খরচ বাড়ছে।অর্থাৎ দেশের মানুষের আয় যেভাবে বাড়ছে এর তুলনায় ব্যয় বাড়ছে তীব্র গতিতে।নিম্নবিত্তের কিছু মানুষ সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বিভিন্ন সরকারী সুবিধা পেলেও বাড়তি খরচের চাপে পিষ্ট হচ্ছেন মধ্যবিত্তরা।জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস উঠছে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান কমছে। সঞ্চয় ভেঙে অনেককেই দৈনিক চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।যে গতিতে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে তা অশুভ সংকেত।তাই আন্তর্জাতিক মন্দা,জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা বিশ্ব রাজনীতিতে যুদ্ধ পরিস্থিতির অছিলায় সরকার যদি নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করে,তাহলে তা পরোক্ষে মূল্যবৃদ্ধিকেই মদত দেওয়ার শামিল বলে গণ্য হবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.