স্মার্টফোনের মহালয়া!!

 স্মার্টফোনের মহালয়া!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সময় এবং দিন বদলের সাথে সাথে বদলে গেছে অনেক কিছুই।বদলেছে শহর,গ্রাম। বদলে গেছে আনন্দ উৎসবের রং।বদলে গেছে পরিবেশ, জলবায়ু।বদলে গেছে আকাশের রং,ঋতুর চরিত্র। দিনে দিনে আধুনিকতা আর সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটে সব কিছুই এখন বদলে গেছে। যেমন শরৎকাল।শরৎকাল কি সেই আগের মতো আছে? শিউলির গন্ধ ভেসে আনে? হাল্কা শীতের আমেজ, ভোরবেলা টুপটাপ শিশির পড়ার শব্দ পাওয়া যায়? শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ছুটোছুটি আগের মতো চোখে পড়ে?
আধুনিকতা ও ইন্টারনেটের যুগে মহালয়া এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের দাপটে রেডিও অনেক আগেই ব্রাত্য হয়ে গেছে।বেতার কেন্দ্রগুলি এখন শুধু স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছে।মহালয়ার ভোরে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্ত্রোত্র পাঠ এবং পঙ্কজ মল্লিকের সুরে মহিষাসুর মর্দিনী আজও নিয়ম করে সম্প্রচারিত হয়।কিন্তু সেই কালজয়ী সৃষ্টি কি আজও সমানভাবে হিন্দোল তোলে বাঙালির মননে?সময় এবং অগ্রগতির হাত ধরে বর্তমান সমাজ যেন ক্রমেই হয়ে উঠছে গতির পূজারি।গান শোনা থেকে সিনেমা,সবই টিভি, রেডিও থেকে এসে থেমেছে ল্যাপটপ, কম্পিউটার এবং মুঠোফোনে।
আজকাল মহালয়া শোনার জন্য হাতে এসেছে আধুনিক প্রযুক্তি।রেডিওর জায়গায় জায়গা করে নিয়েছে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম। মহালয়ার ভোর মানেই একটা সময় প্রায় সব বাড়ি থেকেই রেডিওতে ভেসে আসতো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কালজয়ী কণ্ঠ।ঠিক ভোর চারটায় শহর থেকে গ্রাম বাঙালির প্রতিটি ঘর থেকে শুধুমাত্র এই একটা কণ্ঠই শুনতে পাওয়া যেত। মহালয়ার এই সকাল এখন অনেক পুরনো হয়ে গেছে। এই ছবি এখন অনেকটাই বদলে গেছে। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বাঙালি এখন আর রেডিওতে নয়, মোবাইলেই শুনে নেয় মহালয়া।কেউ আবার রিমোট হাতে নিয়ে বসে পড়ে টিভির সামনে।সেখানেও মহালয়া শোনা এবং দেখা দুটোই চলে।কিন্তু সেই আবেগ অনুভূতি কোথায়?মহালয়া প্রতি বছরই আসে।কিন্তু আগের মহালয়া আর এখনকার সময়ের মহালয়ার মধ্যে যেন একটা বড় পার্থক্য অনুভূত হয়।কেবলই অনুভব হয়- কি যেন নেই।তারপরও এই দিনটা এলে মনের ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠে। একটা বিশেষ আনন্দ অনুভব করতে মনটা আনচান করে। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবন থেকে একটু মুক্তি পাওয়ার বাসনা জাগে।বছর ঘুরে আনন্দময়ীর এই আগমন সান্নিধ্যে বাঙালি তার দুঃখ, যন্ত্রণা ভুলে কিছুটা পরিত্রাণ পেতে চায়।অভাব,যন্ত্রণা ক্লিষ্ট, অগ্নিমূল্য বাজার, রাজনৈতিক অস্থিরতা, কর্মহীনতা, বৈভব অহংকার, প্রতিযোগিতা,আত্মকেন্দ্রিকত,নেশাগ্রস্ততা, অবৈধ কার্যকলাপ এই উৎসবে আনন্দের আবর্তকে করে তুলেছে পঙ্কিল।তারপরও আমরা নতুন আশায় বুক বাঁধি।স্বপ্ন বুনি পুরাতন বছরের সকল দুঃখ ব্যর্থতা ভুলে নতুন একটা বছরের, নতুন একটা ভবিষ্যতের আনন্দময় সফলতার আশায়।মহালয়া এবং দেবীপক্ষের সূচনা লগ্নে একটাই প্রার্থনা, আধুনিকতার জাঁতাকলে বাঙালি যেন তার ঐতিহ্য, পরম্পরা ভুলে না যায়। স্মার্টফোনে মহালয়া শুনলেও, শিকড় যেন আঁকড়ে রাখে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.