সংস্কার শেষে ভোট!!

 সংস্কার শেষে ভোট!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনুসের উপর সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করানোর জন্য চাপ ক্রমাগতই বাড়ছে। কেন না হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে গত দুই দফায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।প্রথম দফার বৈঠকটি ছিল পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের তরফে অন্তবর্তী সরকারকে সমর্থন করে তার পাশে এসে দাঁড়ানো।ফলে প্রথম বৈঠকে রাজনৈতিক কচকচানি থাকলেও তাতে নির্বাচন প্রসঙ্গ ততটা মুখ্য হয়ে উঠেনি।কিন্তু দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তবর্তী সরকারের যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে তার আলোচ্যসূচি ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।দেখা গেছে, সর্বশেষ বৈঠকে প্রায় সবকটি প্রধান রাজনৈতিক দলই নির্বাচনের সময়সীমা কবে নাগাদ হতে চলেছে সেই সম্পর্কে অন্তবর্তী সরকার থেকে একটি সুনির্দিষ্ট ধারনা পেতে চাইছে।কেন না, হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি দল যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দিকে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে।যদিও শুরু থেকে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে একটি বার্তা সবগুলো রাজনৈতিক দলের কাছেই পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে যে,নির্বাচনি কাজে নির্বাচন কমিশনের তরফে কিছু জরুরি সংস্কার সম্পন্ন করা বাকি আছে।সেটি শেষ করে দিতে পারলেই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দিকে যাওয়াই হবে অন্তবর্তী সরকারের একমাত্র কাজ। এটা যেকোন নাগরিকের কাছেই পরিস্কার যে, নির্বাচনের দায়িত্ব অন্তবর্তী সরকারের উপর ন্যাস্ত এবং নির্বাচনের যেতে হলে সবার আগে দেশে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
কিছু একথাও মাথায় রাখতে হবে, সব কয়টি রাজনৈতিক দলই বহু বছর পর একটি আদর্শ নির্বাচনের পরিবেশের ও পরিস্থিতির জন্য যে মুখিয়ে আছে সেটা গত সর্বশেষ বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা থেকেই পরিষ্কার।অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা এবং মত বিনিময় থেকেই এই বিষয়টির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আবার এটাও ঘটনা, রাজনৈতিক দলগুলো দেশে যথা সম্ভব তাড়াতাড়ি নির্বাচন করানোর জন্য অন্তবর্তী সরকারকে তাগদা দিলেও সেক্ষেত্রে সরকারও কিন্তু তাদের পূর্ববর্তী অবস্থান অর্থাৎ প্রথমে নির্বাচনি সংস্কার তারপর নির্বাচন-এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের একটি বক্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।সম্প্রতি তিনি এক সাক্ষাৎকারে অন্তবর্তী সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে বলেছেন,আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন সেটাই হবে তারিখ।সম্প্রতি দেশের সেনাপ্রধানও বলেছেন বর্তমান অবস্থা থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য প্রায় দেড় বছরের মতো সময় লাগতে পারে।লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের বয়স প্রায় দুই মাস হয়ে গেল।গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোতে একটি দেশে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্পূর্ণ রূপেই দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল।প্রয়োজনীয় নির্বাচনি সংস্কার শেষে গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর মধ্যে দ্রুত নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই যে প্রকৃষ্ট কাজ এই কথা গণতান্ত্রিক চেতনা ও মনোভাবে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষই স্বীকার করবেন।এক্ষেত্রে কম সময়ের মধ্যে নির্বাচিত সরকারের শাসন পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই হবে আসল সংস্কার।কিন্তু ঘটনা হলো, বিগত দুই মাসে অন্তবর্তী সরকারের সময়ে সরকারের সাফল্য, ও দৃশ্যমান অগ্রগতি খুবই কম।বরং বলা যায়, যথেষ্ট নিরাশা জনক।তা সত্বেও একথা সত্য নির্বাচিত সরকার ছাড়া সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব নয়।তাই নির্বাচনি সংস্কার, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সবগুলো রাজনৈতিক দলকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের উপযুক্ত পরিবেশ ও পরিকাঠামোতে যুক্ত করতে হবে।যদিও বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু সুষ্ঠু গণতন্ত্রের জন্য অবাধ নির্বাচনের মুখোমুখি হতে জনগণের মনের যে আকাঙ্ক্ষা তাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে অন্তবর্তী সরকারকে যথোচিত ভূমিকা নিতে হবে এবং একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য দেশকে প্রস্তুত করতে হবে। তাহলেই গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন জনগণের ইচ্ছার সদর্থক প্রতিফলন ঘটবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.