সার্বজনীন কৃতাঞ্জলি!!

 সার্বজনীন কৃতাঞ্জলি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কদমতলার ঘটনায় শিহরিত গোটা ত্রিপুরা।রাজ্যে এই ধরনের ক ঘটনা প্রথম ঘটিতে দেখা গেল।এই ঘটনাটি আমাদের উৎকণ্ঠায় রাখিতেছে।গত কয়েক মাস ধরিয়া একাধিক অনভিপ্রেত কিছু ঘটনার সাক্ষী হইয়াছে ত্রিপুরা।গণ্ডাছড়ার ঘটনায় দুর্গাপূজা বন্ধ হইয়া গিয়াছে ওই এলাকায়।এরপর দেখা গেল মোহনপুর সংলগ্ন কৈতরাইবাড়ির ঘটনাটি। অবশেষে কদমতলার ঘটনা। যা ত্রিপুরাবাসীর জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা।ঘটনাস্থল কদমতলায় একটি পূজার আয়োজকদিগের চাঁদাবাজির ঘটনা কেন্দ্র করিয়া এই বিশাল ঘটনা ঘটিয়াছে,যাহা কাহারও কল্পনায় ছিল না কোনও দিন।
সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখিতে সকল রকম চেষ্টা চালাইয়াছে।অনেকেরই মতে প্রশাসনকে আরও সতর্ক থাকা দরকার ছিল।এমন কথা শোনা গিয়াছে গণ্ডাছড়ার ঘটনার পরেও। প্রশাসন আরও সতর্ক থাকিলে এই সকল ঘটনা এড়াইয়া যাওয়া সম্ভব হইতো কিনা তাহা স্পষ্ট হইতে আরও দিন কতক লাগিবে।তবে ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অনেকেই একমত। প্রশাসনের তরফে সরাসরি বলা না হইলেও ষড়যন্ত্রের আঁচ তাহারা পাইতেছে। বিরোধী দল কংগ্রেস, সিপিএম তো বটেই শাসক জোটের মথাও যড়যন্ত্রের কথাই বলিতেছে।
সিপিএম কদমতলার ঘটনায় শাসকদল এবং আরএসএসের হাতের কথা প্রকাশ্যেই বলিতেছে।কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ, বলিয়াছেন সরকার উদাসীন আর শাসকদল ঘটনার গভীরতা অনুমান করিতে চাহিতেছে না।মথার শীর্ষকর্তা প্রদ্যোত দেববর্মণ আশঙ্কা করিলেন,গোপন ষড়যন্ত্র চালাইয়া ত্রিপুরাকে মণিপুর বানাইয়া দেওয়ার চেষ্টা চলিতেছে।ত্রিপুরার ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা যে অভূতপূর্ব তাহা স্বীকার করিয়া দোষীদের খুঁজিয়া বাহির করিবার কথা বলিয়াছেন প্রদ্যোত।প্রশ্ন আসিতেছে ত্রিপুরায় এই ধরনের পরিবেশ,পরিস্থিতির কথা ত্রিপুরার মানুষ কোনদিন কল্পনাতেও আনে নাই- কিন্তু সেইসব কী মতে ঘটিতেছে?কৈতরাই হইতে কদমতলা- এই সকল ঘটনা অনভিপ্রেতই নহে, অভাবনীয়।
এই ধরনের বাতাস কি কাঁটাতারের অপর পার হইতে আসিয়াছে?আমরা ত্রিপুরার মানুষ কি সেই গরম হাওয়ার দাপটে আত্মপরিচিতি ভুলিতে বসিয়াছি?আমরা কি হারিয়া যাইতেছি, হারাইয়া যাইতেছি?প্রদ্যোত দেববর্মণের মণিপুর আশঙ্কার পর মনে করিতে হয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উচ্চারিত “সেভেন সিস্টারের” কথা।বাংলাদেশ আজ এক চরম অস্থিরতা আর নৈরাজ্যকর অবস্থায় দিন কাটাইতেছে।সেই অস্থিরতা, যাহা আজ মণিপুরে বিদ্যমান তাহা কি সত্যই আমাদের ত্রিপুরাতেও ছড়াইয়া দেওয়ার চেষ্টা হইতেছে?আর আমরা কি অতি সহজেই সেই ষড়যন্ত্রের বলি হইতে চলিয়াছি? আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কি নিঃশেষিত?
ত্রিপুরা রাজ্যের জন্মের সময় হইতে এই ধরনের পরিস্থিতি কখনো দেখা যায় নাই।তাহা হইলে এই সাম্প্রদায়িক ভাবনা আজ কোথা হইতে আসিয়া আমাদের গ্রাস করিতেছে?সকল রকম ভেদবুদ্ধির ঊর্ধ্বে থাকিয়া মিলিয়া মিশিয়া থাকিবার যে শক্তি আমাদের এই ছোট্ট রাজ্যকে অগ্রগতির পথে আগাইয়া নিতেছে আমরা কি সেই পথ হইতে সরিয়া আসিব?নিশ্চয়ই না। আমাদিগের পথ থাকিবে নির্ভুল,সেই পথে আমাদিগকে অটল থাকিতে হইবে।তাই ঘরের ভেতর বা বাহির যেইখান হইতেই ষড়যন্ত্র আসুক তাহা আমাদের মিলিত শক্তি দিয়া প্রতিহত করিতে হইবে।রুখিয়া দাঁড়াইতে হইবে সকল ভেদবুদ্ধির বিপরীতে।ইহাই এই দেশের ঐতিহ্য।ইহাই রাজন্য ত্রিপুরা হইতে পূর্ণ রাজ্য ত্রিপুরা সবখানেই অনুসৃত পথ।
আমাদের এই পথ হইতে আমরা যাহাতে ভ্রষ্ট না হই আজ মাতৃপূজার দিনে ইহাই হইবে আমাদের প্রধান প্রার্থনা।অন্ধকার হইতে আলোয় উত্তরণের এই পূজা প্রার্থনায় সকলের মঙ্গল আর ঐক্যবদ্ধ সমাজের জন্যই হইবে প্রাণের অঞ্জলি। সার্বজনীন এই কামনা পূর্ণ হইবে, আমরা এই রাজ্যের মানুষ চির ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচয় লইয়াই আগাইয়া যাইব বিকাশের পথে, এক শ্রেষ্ঠ ভারত, এক শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরার অভীষ্টে- এই আশায় বুক বাঁধিবার দিন আজ সমাগত।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.