মোদি-পুতিন-শি!!
একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে।অন্যদিকে ইজরায়েল- হামাসের মধ্যে ভয়ঙ্কর লড়াই শুরু হয়েছে। এই দুই লড়াইয়ের প্রভাব পড়েছে গোটা বিশ্বে।গোটা বিশ্বজুড়ে একটা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।এই চলমান অস্থিরতার মধ্যেই রাশিয়ার কাজান শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্রিকস সম্মেলন।এই সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবারই রাশিয়ার কাজার শহরে পৌঁছেছেন। প্রথমেই বৈঠক হয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে।ব্রিকস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে,এবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তিপ্রস্তাব আসা উচিত।এই উদ্যোগে ভারত সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। শুধু তাই নয়,মোদি-পুতিন বৈঠকশেষে যৌথ বিবৃতিতে উঠে এসেছে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে তৈরি হওয়া সম্প্রীতির আরও শক্তিশালী ইতিবাচক বার্তা।বলা হয়েছে, মোদি এবং পুতিনের পরস্পরের সঙ্গে ভাষা বুঝতে কিংবা আলোচনা করতে নিছক অনুবাদকের প্রয়োজন পড়ে না।তারা যেমন দু’জনেই দু’জনের মনোভাব এবং বক্তব্য ভাষা না জেনেও বুঝতে পারেন,তেমনি ভারত এবং রাশিয়াও পরস্পরকে বোঝে বহুকাল ধরেই।সেই ঐতিহাসিক সম্পর্ক আরও বেশি করে শক্তিশালী বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে।মোদি ও পুতিনের এই বৈঠক এবং যৌথ বিবৃতিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল।
কিন্তু এরই মধ্যে উঠে এসেছে অন্য আলোচনা।ব্রিকস সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দ্বি-দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক। বুধবারই এই বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সম্মেলন উপলক্ষে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের দেওয়া নৈশভোজে তিন রাষ্ট্রপ্রধানের(মোদি-পুতিন- শি)হাসিমুখে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং পাশাপাশি বসে খাওয়ার ছবি কূটনৈতিক মহলে তুমুল চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত ব্রিকসের নৈশভোজে এমন ছবি নয়া মাত্রা পেয়েছে।কেননা, এই গোষ্ঠীর বিগত সম্মেলনগুলিতে এমন সৌহার্দ্যের দৃশ্য এর আগে চোখে পড়েনি।রাশিয়ায় দেখা গেল এক ফ্রেমে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন মোদি-পুতিন-শি।পাশেই দাঁড়িয়ে তিন দেশের দোভাষীরা।পরে নৈশভোজের টেবিলে সম্মেলনের আয়োজক দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের দুই পাশে বসেন মোদি ও শি।খেতে খেতে কথায় হয় তিনজনের। মোদি ও শি’র মধ্যে এমন সময় কথা হল, যখন লাদাখ এবং অন্যান্য সীমান্তে সেনা টহল নিয়ে দুই দেশ একটি বোঝাপড়ায় পৌঁছেছে।
শুধু তাই নয়,সৌহার্দ্যের এই ফ্রেম রাশিয়া ও চিনের মধ্যে গভীর সম্পর্কের বার্তাও তুলে ধরেছে।কূটনৈতিক মহলের দাবি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সময় থেকেই রাশিয়ার সাথে চিনের সম্পর্ক নয়া উচ্চতায় পৌঁছায়, যা নিয়ে গভীর চিন্তায় আমেরিকা। মোদির রাশিয়া প্রীতিকেও ভালোভাবে নিচ্ছেন না হোয়াইট হাউসের কর্তারা। যদিও মাস দুই আগে প্রধানমন্ত্রী মোদির ইউক্রেন সফরের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ভারত ও রাশিয়া এই দুই দেশের কূটনীতিকদের আলোচনাতেও আমেরিকা বারবার বোঝাতে চেয়েছে যে ভারত-রুশ সম্পর্ককে তাঁরা ভালো চোখে দেখছে না। এখন মোদি-শি আরও কাছাকাছি আসা নিয়ে গভীর চিন্তায় পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও আমেরিকার পক্ষ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। আর কয়েকদিন পরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভোট। বিদায়ী সরকার এই ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া দেবে কিনা নিশ্চিত নয়। তবে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে মোদি-পুতিন- শি এক-ফ্রেমে আরও কাছাকাছি আনা নিয়ে যে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে, তাতে বিশ্ব রাজনীতির নয়া সমীকরণের ভাবনা ও তত্ত্বকে উসকে দিয়েছে।স্বাভাবিকভাবেই চিন্তায় আমেরিকা।