উৎসব হোক দূষণমুক্ত!!

 উৎসব হোক দূষণমুক্ত!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

গোটা দেশ জুড়েই চলছে এখন উৎসবের মরশুম। বিশ্বকর্মা পুজো দিয়ে যার অনুষ্ঠানিক সূচনা,সেটাই গণেশ চতুর্থী হয়ে নবরাত্রি, দূর্গাপুজো,লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো,দীপাবলি, ছটপুজো,ভাইফোঁটা এবং জগন্ধাত্রী পুজোর মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়।স্বাভাবিক কারণেই এই উৎসবকে ঘিরে আবেগে ভাসেন সবাই।কিন্তু মনে রাখতে হবে,উৎসবের আনন্দ এমন হোক,যেখানে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা থাকে।কারণ দুর্গাপুজোর পর থেকে মানে কার্তিক মাস থেকে ক্রমশ আবহাওয়া বদলাতে থাকে।সকাল সন্ধ্যায় খানিকটা হিমেলপরশ ও হাল্কা ঠান্ডা অনুভূত হয়। এই সময় বাতাস ও কিছুটা দূষিত হতে শুরু করে।কারণ উত্তর ও মধ্য ভারতে বিভিন্ন শস্য ও ফসল উৎপাদনের পর সেই জমিতে আগুন দিয়ে আগাছাগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হয়।এর সঙ্গে যুক্ত হয় লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো ও দীপাবলিতে আতশবাজি পোড়ানোর ধুম।কিন্তু এর জেরে বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেড়ে যায়।দূষণ না বলে বরং একে বলা যায় বাতাসে বিষ বায়ু।যা শুধু মানুষ সহ গোটা জীব জগতেরই ক্ষতি করছে,বরং পুরো পরিবেশকেই নষ্ট করে দিচ্ছে।দুর্গাপুজোর সময় অতিমাত্রায় লাউডস্পীকার ব্যবহার করে এমনিতেই পরিবেশকে দূষিত করে তোলা হয়।পুজোকে ঘিরে অতিরিক্ত যানজট বিদ্যুতের ঝলকানি, শব্দ ও ডিজের দৌরাত্ম্য পরিবেশকে অসহনীয় করে তোলে। দুর্গাপুজো কে ঘিরে শেষ হতেই কালীপুজো,দীপাবলি, ছটপুজোকে ঘিরে লাগামহীন শব্দবাজির তাণ্ডব পরিস্থিতি ও পরিবেশকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে।মনে রাখতে হবে শব্দবাজি ও আতশবাজি দুটোই দুই ধরনের বাজি।এদের দুজনেরই ভয়ানক দোষ। শব্দবাজি যদি শব্দদূষণ ঘটায়, তবে আতশবাজি ঘটায় বায়ুদূষণ।কোন দূষণই আমাদের জন্য সুখকর নয়। বাজির ধোঁয়া ফুসফুস এবং হৃদপিন্ডের সমস্যা বাড়ায়। শ্বাস প্রশ্বাসে অসুবিধার সৃষ্টি করে।চোখে জ্বলুনি,গলা ব্যাথা,কাশির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।আর শব্দবাজির কথা বলে তো লাভ নেই।অতি বিকট শব্দ মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডের যেমন ক্ষতি করে। তেমনি শব্দ তাণ্ডবে মানুষ সহ পশু পাখীদের আতঙ্কটা আরও বেশি।যা স্নায়ু রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকক্ষেত্রে তা চিরকালীন বধিরতাও ডেকে আনতে পারে।
একটা কথা খুব পরিষ্কার ভাবেই আমাদের সবার উপলব্দি করা দরকার যে, দীপাবলি আলোর উৎসব, একে যেন আমরা শব্দ ও দূষণের উৎসবে পরিণত না করি।যে কোন ধরনের উৎসবেরই মূল কথা মিলন ও নিরাপদ আনন্দ।কিন্তু সেই উৎসবের নামে আমরা যদি পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক করে তুলি সেটা কোনভাবেই সমাজ ও সভ্যতার জন্য কাম্য নয়। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট ২০১৮ সালে সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিল যে, আলোর উৎসব দীপাবলিতে রাত ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত এই দুই ঘন্টার জন্য বাজি পোড়ানো যাবে।অথচ বাস্তবের অভিজ্ঞতা বলছে বিকালের পর থেকেই পরদিন ভোর পর্যন্ত বিকট সব বাজি পোড়ানোর ধুম চলে।যা শব্দ যন্ত্রণায় চরম সীমাতে গিয়ে পৌঁছায়।দুর্গাপুজোর দেবীর ভাসানের মধ্যে দিয়ে শব্দ দানবের যে উৎকট দৌরাত্ম শুরু হয়, সেটা দীপাবলিতে পূর্ণরূপ নেয়।বর্ণময় এই উৎসবের মরশুমকে এভাবেই আমরা বিপজ্জনক চেহারা দিই।যদিও নিরাপদ ও দূষণমুক্ত উৎসব পালনের লক্ষ্যে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনীয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট পরিবেশবান্ধব ‘সবুজ বাজি’ পোড়ানোর কথা বলছে।হয়তো এই বাজিতে দূষণের মাত্রা কম থাকে।কিন্তু বাতাসে বিষ মানে তো বিষই।ক্ষতি অল্প আর বেশি এই যা ফারাক্কা। পরিবেশকে বাঁচাতে।নিজেদের বাঁচাতে আমরা এখন থেকেই উদ্যোগী না হই, তাহলে বিপদ ক আরো বাড়বে।আমাদের বাতাসে যে বিষ ছড়াচ্ছে তা শুধু জটিল রোগকেই ডেকে আনছে না, ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাচ্ছে।তাই আলোর উৎসবে শব্দ ও বিষয়কে বিদায় দিয়ে পরিবেশ বাঁচাতে অন্যভাবেও প্রদীপ ও রকমারি আলোয় নিজেদের ঘর বাড়ি প্রতিষ্ঠানকে সাজিয়ে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা যদি আমরা দিতে পারি তবে সেটাই হবে নিরাপদ উৎসব।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.