রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
দর্শনধারী!!
গুণ-বিচার পরে, আগে তো দর্শনধারী!এই আপ্তবাক্য আজকের ডিজিটাল জেট যুগে একেবারে সর্বাংশে সত্য। দর্শন অথে এখানে নিজেকে উপস্থাপন।এই উপস্থাপন তথা দর্শন আদতে যে একটি শৈলী, ভারতীয় রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে নরেন্দ্র মোদি আবির্ভূত হওয়ার আগে পর্যন্ত বাকিরা বুঝতেই পারেননি।বস্তুত, তাকে দেখেই বাকিরা পরবর্তী সময়ে দর্শনে মনোনিবেশ করেন।এই যে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সেই ভারত জোড়ো যাত্রা থেকে সাদা টি-শার্ট পরা ধরেছেন, তার মধ্যে দিয়ে কোনও ‘ব্র্যান্ড রাহুল’ সৃষ্টি হচ্ছে কি না পরের প্রশ্ন,তবে তিনি প্রয়াস জারি রেখেছেন।
নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রথম দিন থেকে মোদি ব্র্যান্ডটিকে উজ্জ্বল করতে চেয়েছেন। বেশভূষা হোক, পরিবেশপ্রেমী ভাবমূর্তিই হোক কিংবা নোটবন্দির ঘোষণা অথবা কোভিডকালে দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা, শ্বেতশুভ্র শ্মশ্রু শোভিত হয়ে বঙ্গের নির্বাচনি প্রচারে রবীন্দ্রনাথের পংক্তি আওড়ানো, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তিনি প্রচারের তীব্র আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করেছেন। তিনি এই ডিজিটাল জেট যুগের অবিসংবাদী নেতা।
এই যুগ বিজ্ঞাপনের, বৈদ্যুতিন মাধ্যমের, গতি এবং আত্মবিপণনের মাধ্যমে পাদপ্রদীপে থাকার।এই যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, কেবল আত্মজাহির করে নিজেকে প্রচারের আলোয় ভাসিয়ে রাখার দুর্নিবার প্রয়াস ছাড়া আর কী!এ হলো নীতি,আদর্শের বাইরে ব্যক্তি বন্দনায় মেতে উঠার যুগ।নেতা হতে কিংবা সর্বাধিনায়ক হতে আত্মত্যাগের পরিবর্তে আজ চাই মেন্টর,বিজ্ঞাপনের ঝলকানি, সর্বোপরি অত্যন্ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কুশলী দল, যে ক্রমাগত প্রচারের হাতুড়ি ব্যবহার করে অখ্যাত মানুষকেও রাতারাতি নেতা পর্যায়ে উন্নীত করতে পারবে। আজ আর আন্দোলন, প্রতিবাদ, প্রতিরোধের আগুন নেতা তৈরি করে না, সেই জায়গা নিয়েছেন ভোটকুশলীরা।তারা অর্থের বিনিময়ে দলের কর্মসূচি, ভাষ্য তৈরি করেন, যেখানে আন্দোলন নামক শব্দটির অস্তিত্বই নেই।
জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর নিজে বিভিন্নভাবে ধিকৃত হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। পরে তিনিই আবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচন জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এর পিছনে ছিল তার নেতৃত্বগুণ, নিজের প্রতি আস্থা এবং দেশবাসীর প্রতি শ্রদ্ধা।রাজনৈতিক নেতাকে বিপণন করার জন্য, ভোটদাতাদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা মাপার জন্য কোনও বিশেষ সংস্থা সেই যুগে ছিল না, তার প্রয়োজনও সেই সময় কেউ অনুভব করেননি।তাই পরিবেশ সচেতনতা দেখাতে সাগর পাড়ে ইন্দিরা গান্ধীকে কখনও প্লাস্টিক ব্যাগ কুড়াতে দেখা যায়নি, চিত্রগ্রাহকদের সঙ্গে নিয়ে ধ্যানে বসতে হয়নি,অথবা মধ্যরাতে নিজের নির্বাচনি এলাকার রেল স্টেশনে ঘুরতে হয়নি।কিন্তু নরেন্দ্র মোদিকে প্রায়ই এগুলির আশ্রয় নিতে হচ্ছে কারণ এই যুগ দৃশ্যমাধ্যমের।মানুষ এখন তাদের মোবাইলের পর্দায় সব কিছু দেখতে চান।
‘এক দেশ, এক ভোট’ এই দাবি সংবিধান সংশোধন করে কার্যকর করতে হলে অনেকটাই জটিলতা দেখা দিতে পারে,তা মোদি জানেন। কিন্তু এই দাবিটি জারি রেখে রাজনৈতিক দিশা ঠিক করতে এবং ভোটবাক্স ভরাতে তো বাধা নেই! প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হলো তার ‘নরেন্দ্র মোদি’ নামক ভাবমূর্তি।ইংরেজিতে লার্জার দ্যান লাইফ বলে যে কথাটি রয়েছে,তা প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে একেবারে সুপ্রযুক্ত।কিন্তু বিগত লোকসভা নির্বাচনে ব্র্যান্ড মোদি এবং মোদি কি গ্যারান্টি শব্দবন্ধ দুটি ধাক্কা খেয়েছে।এই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের ব্র্যান্ড বাঁচাতে তার সামনে একটাই রাস্তা খোলা ছিল। তা হলো, তিনি নিজের লক্ষ্যে স্থিতপ্রজ্ঞ, নিজের কর্মসূচিতে ব্রহ্মনিষ্ঠ, সেটি জনগণের সামনে তুলে ধরা।তাকে প্রমাণ করতে হতো, যতই বিজেপির আসনসংখ্যা ২৪০-এ নেমে গিয়ে থাকুক, যতই তার সরকার শরিক-নির্ভর হয়ে পড়ুক, তা সত্ত্বেও বিজেপি নিজের নির্বাচনি মাঠে নামেও, তা হল ২০৩৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচন এক সঙ্গে হতে পারে, তার আগে নয়, যখন তার জৈবিক বয়স হবে চুরাশি বছর।এতৎসত্ত্বেও এক দেশ, এক ভোট নিয়ে মাঠে নেমে মোদি প্রমাণ করতে চাইছেন,ভোটের ফলে তিনি টোল খাননি।তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটি হচ্ছে, তার এই কর্মসূচির বিরোধিতাই বিরোধী শিবিরকে ব্যস্ত রাখা।তবে তাবৎ কর্মযজ্ঞের জন্য নিজের দর্শনটি আগে যথার্থ রাখতে হবে, সেখানে
বিচ্যুতি নৈব নৈব চ।