রাজনীতির গতিপ্রকৃতি!!
গত এপ্রিল মে মাসে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর গত চার পাঁচ মাসে ২ টি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।আগামী ১৩ এবং ২০ নভেম্বর দেশের আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা দেশ।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর ২০২৫- এর নভেম্বরের মধ্যে দিল্লী এবং বিহারেও বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।জুন মাসে লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর হরিয়ানা এবং জম্মু কাশ্মীরের বিধানসভার নির্বাচনের দিকে সবার নজর ছিল।হরিয়ানা এবং জম্মু কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনে বুথফেরত ভোট সমীক্ষায় যে ফলাফলে আভাস দেওয়া হয়েছিল,ইভিএমের গণনার সময় সেই পূর্বাভাস মেলেনি। প্রায় সব সমীক্ষাতেই বলা হয়েছিল হরিয়ানাতে কংগ্রেস নিশ্চিতভাবে ক্ষমতা দখল করবে।কিন্তু ফল দেখা গেল পুরো উল্টো।অন্যদিকে জম্মু কাশ্মীরের নির্বাচনে ঝুলন্ত বিধানসভার ইঙ্গিত দিলেও সেখানেও ফল অন্যরকম হয়েছে।এই অবস্থায় নভেম্বরের মাঝামাঝিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের নির্বাচন পর্ব চলছে। সেই সাথে দেশের ১৪ টি রাজ্যের ৪৮ টি বিধানসভা আসনের জন্যও একই সাথে ভোট নেওয়া হচ্ছে। লোকসভার ১টিমাত্র আসন কেরলের ওয়ানাদের জন্যও উপনির্বাচন হচ্ছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী রারেরিলি আসন রেখে অন্যটি ছেড়ে দেওয়া প্রিয়াঙ্কা ছেড়ে দেওয়া আসনে ভোটে লড়ছেন।
লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফলের পর বিজেপি অনেকটাই ম্রিয়মাণ ছিল। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত প্রাকৃ মুখে শাহ নিজেদের অনেকটাই যেন গুটিয়ে নিয়েছিলেন গতচার মাসে।কিন্তু হরিয়ানার ভোটে সবাইকে চমকে দিয়ে, ভোট-ভবিষ্যৎবক্তা, ব্যাপ সেফোলজিস্ট সকলকেই ভুল প্রমাণিত করে হরিয়ানায় পদ্মফুলের চমকপ্রদ জয় আচমকাই গোটা দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়াকেই অভিন যেন অনেকটা বদলে দিয়েছে।দলে এবং সঙ্ঘের মধ্যে অনেকটাই আটোসাঁটো হয়ে পড়া মোদি-শাহ জুটি হরিয়ানা দখল করেই ফের চাত স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছেন।বিশেষ করে মহারাষ্ট্র পর এবং ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনি প্রচারে তাদের সদম্ভ উপস্থিতি এটা প্রায় দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট করে তুলেছে যে, লোকসভায় কোনঠাসা হয়ে পড়া বিজেপি আবার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে পূর্ণশক্তিতে ময়দানে বিচরণ করছে। মহারাষ্ট্র কিংবা ঝাড়খণ্ডে ভোটের প্রচারে মোদি যখন দলের ট্যাগলাইন স্থির করে দিয়ে বলেন-‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’- তখন বুঝতে হবে মোদি কেন মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনকে অসম্ভব গুরুত্ব দিচ্ছেন।কারণ একটাই-হরিয়ানা দখলের পর এবার যদি দেশের আর্থিক রাজধানী মহারাষ্ট্র পুরোদস্তুর কব্জা করা যায় তবে ভারতে আগামীদিনে এর রাজনৈতিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে বাধ্য।যদিও মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই হচ্ছে দুই জোটের মধ্যে। কিন্তু বাস্তবে এই লড়াইটা হচ্ছে মারাঠী নেতা শারদ পাওয়ার বনাম বিজেপির মোদি-শাহ জুটির মধ্যে। এবং লড়াইটা যে প্রতিটি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে কঠিন লড়াই সেটাও সত্য।এই লড়াই উভয় শিবিরের জন্যই যেমন মরিয়া লড়াই,তেমনি অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইও।গত জুন মাসের লোকসভার নির্বাচনে ৪৮ আসনের মহারাষ্ট্রে ৩০ টি জিতেছিল শারদ-উদ্ধব- কংগ্রেস জোট। ১৭ টি জিতেছিল বিজেপি জোট।১টি আসন পায় নির্দল।লোকসভা ভোটের মাত্র ৫-৬ মাসের মধ্যে এবার বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে অ মানুষের মানসিকতায় খুব একটা নড়চড় হয় না। সেক্ষেত্রে বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি জোটের বিরুদ্ধে আবার ভোট হবে এমনটা মনে করা ভুল।তবে নির্বাচনের পরাস্ত হলে শাসকের জন্য ধাক্কাটা বড় হবে। যদিও হরিয়ানায় ভূপিন্দর-শৈলজা-সুরযেওয়ালার খেয়োখেয়ি মহারাষ্ট্রে নেই।মহারাষ্ট্রের তুলনায় বরং ঝাড়খন্ডে বিজেপি অনেকটা এগিয়ে।একই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের ৯টি বিধানসভার নির্বাচনকেও কোনভাবে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।পাশাপাশি কর্ণাটক, বিহার, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ,পাঞ্জাব,কেরল এবং পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনের গুরুত্বও কম নয়।যদিও কংগ্রেস তার পরম্পরা ও ঐতিহ্য মেনে দেশে এতগুলি উপনির্বাচন ও ২ রাজ্যে বিধানসভার ভোট হলেও দল কিন্তু পুরোশক্তি ওয়ানাদেই কেন্দ্রীভূত করেছে।তবে এটা বলা যায় দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতির একটা ছোট্ট বালক এই উপনির্বাচন ও ২ রাজ্যের ভোটে আশা করা যেতে পারে।