মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, বন্ধ ইন্টারনেট,, কার্ফু জারি!!
অনুপ্রবেশ!!
জল জঙ্গল ও প্রাকৃতিক খনিজের রাজ্য ঝাড়খণ্ড। আদিবাসীদের নিজভূমের দাবিতে সামাজিক আন্দোলনের জেরে বিহার ভেঙ্গে তৈরি হয়েছিল ঝাড়খণ্ড রাজ্য। একদিকে অপার খনিজের ভাণ্ডার, অন্যদিকে বৈধ এবং অবৈধ পথে সেই সম্পদ চলে যাচ্ছে একশ্রেণীর বিত্তশালীদের হাতে। রাঁচি, বোকারো, ধানবাদের মতো শহরগুলি থেকে কিছুটা দূরে গেলেই প্রদীপের নীচস্থ গাঢ় অন্ধকার টের পাওয়া যায়। এত খনিজ সম্পদ সত্ত্বেও বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে আদিবাসী-মূলবাসী মানুষের হাতে সেই অর্থে কর্মসংস্থান নেই। শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো বুনিয়াদি সুবিধাও অপ্রতুল। পিছিয়ে পড়া রাজ্যে তাই তৈরি হয় সাইবার গ্যাং- কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাং। অথচ ৮১ বিধানসভার ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে এগুলি একটিও ইস্যু নয়। মূল ইস্যু অনুপ্রবেশ তথা অনুপ্রবেশকারী। ১৩ তারিখ প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। ২০ তারিখ শেষ দফার নির্বাচন। নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ‘প্যাটার্ণ’ সম্পর্কে অবহিতদের কাছে এটা স্বীকার্য যে, ভোট-প্রচারের জাদুকর হিসাবে তার অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে নিজের কর্মসূচির বিরোধিতাতেই বিরোধী শিবিরকে ব্যস্ত করে রাখা অবশ্য শুধু তিনিইবা কেন, বিরোধী শিবির নিজে কোনও বিষয় তুলে আনবে, সরকারকে জবাব দিতে হবে এই পরিস্থিতির থেকে যে কোনও সরকারই চায়, বিরোধীরা সরকারের কর্মসূচি নিয়ে বিতর্ক, বিরোধিতায় ব্যস্ত থাকুক। কিন্তু লোকসভা ভোটে বিজেপি ধাক্কা খাওয়ার পর থেকে বিরোধীরা বিতর্কের দিশা ঠিক করে দিচ্ছিলেন। হরিয়ানায় কার্যত জেত ম্যাচ কংগ্রেসের হেরে যাওয়ার পর হিন্দি বলয়ে ঝাড়খণ্ডই প্রথম নির্বাচনের ময়দান। ভোট-মেরুকরণের বিবিধ আয়ুধ বিজেপির তৃণীরে রয়েছে, তা নতুন কথা নয়। কিন্তু, এবার ঝাড়খণ্ডে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রচারে মূল সুরই বেঁধে দেন ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ’। স্বাস্থ্য-শিক্ষা, কর্মসংস্থা ইত্যাকার বুনিয়াদি বিষয়ের বদলে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনে জেএমএম কংগ্রেস জোটও ব্যস্ত হয়ে পড়ে পাল্টা জবাব দিতে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ’ ইস্যুকে সামনে রেখে ইতিপূর্বে দেশের কোন রাজ্যে কোনও নির্বাচনের বাজার তপ্ত হয়েছে কিনা, তা সমাজতাত্ত্বিকেরাই বলতে পারবেন। ঝাড়খণ্ডের গাড়োয়া জেলার জনসভায় বিরোধীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী মোদি হেমন্তের নেতৃত্বাধীন শাসক জোটকে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থক আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘এরা আপনাদের রুটিও ছিনিয়ে নিচ্ছে, আপনাদের বেটিও ছিনিয়ে নিচ্ছে, এরা আপনাদের মাটিও হরফ করছে।’ জেএম এম পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে, এগারো বছর ধরো কেন্দ্রে আপনার সরকার, সীমান্তে সুরক্ষাব্যবস্থা আপনার, তা সত্ত্বেও এত অনুপ্রবেশকারী কী উপায়ে ভারতে ঢুকে আদিবাসীদের জনবিন্যাস বদলো দিয়ে রোটি-বেটি-মাটি ছিনিয়ে নিচ্ছে? এই ‘শংসাপত্র’ প্রধানমন্ত্রী কাকেন দিচ্ছেন, বিএসএফ নাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নাকি প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাকি নিজের তৈরি বিদেশনীতিকে? মোদ্দা বিষয়, এ হেন মেঠো তরজায় দেশের দ্বাদশ বৃহত্তম আদিবাসী রাজ্যের উন্নয়ন চলে গেছে পিছনের বেঞ্চিতে। ঝাড়খণ্ডে আদিবাসীদের মধ্যেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রয়েছে। ফলে যতক্ষণ না জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন বা এনআরসি) থেকে প্রয়োজনীয় নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ততক্ষণ কাউকে দোষারোপ করা কতটা সমীচীন সে প্রশ্ন ভোটের বাজারে বৃথা। এ রাজে মূলত তিনটি ভোটব্যাঙ্ক- হিন্দু, মুসলিম এবং সাঁওতাল। আদিবাসীদের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৬ শতাংশ। হিন্দুদের মধ্যে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা এ রাজ্যের সূচনালগ্ন থেকেই বেশি। গত বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ও কংগ্রেস মিলে সাঁওতাল পরগনা ১৮টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসন জিতেছিল। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র চারটি আসন। ফলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ইস্যু ওই এলাকার সাঁওতাল আদিবাসীদের ভোট পেতে সাহায্য করতেই পারে। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সে রাজ্যের প্রতিটি জনসভায় বলে চলেছেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের কারণে সাঁওতাল পরগনার জনবিন্যাস বদলে গিয়েছে। অথচ, ঝাড়খণ্ডের ওই সমস্ত অঞ্চলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বাড়ছে এই দাবির স্বপক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার আদালতে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেশ করতে পারেনি। ২০২১ সালে জামশেদপুরের বাসিন্দা দানিয়াল দানীশ ‘বাংলদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টে একটা জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। সৌ সময় এর জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আদালতে হলফনামা দিয়ে জানায়, ঝাড়খন্ড রাজ্য-সহ ভারতে বসবাসকারী এই ধরনের বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য তাদের কাছে উপলব্ধ নেই। ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও সীমান্ত নেই। বিহার, ছত্তিশগ ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ঘেরা একটি রাজ্য। তবে অনুপ্রবেশ কেন মূল ইস্যু? আদালতে প্রশাসন কী চায়, তা ইতিমধ্যে গ্রীষ্মরৌদ্রে মতো খরস্পষ্ট। শাসক রাজধর্ম বিস্মৃত হন, এ কথা ভারতে নতুন নয় কিন্তু সেই বিস্মৃতিকে ঘোষিত ও গরিমান্বিত করার এই প্রকরণটি নতুন।