মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, বন্ধ ইন্টারনেট,, কার্ফু জারি!!
পালাবদলে দেশ বদলায়?
আমেরিকায় পালাবদলের পর বিশ্বের অশান্ত এলাকাগুলিতে,যুদ্ধবিধ্বস্ত সকল অঞ্চলে নতুন ভাবনাচিন্তা শুরু হইয়াছে। বিশেষত দুইটি যুদ্ধ এলাকা-ইউরেশিয়ায় দুই বৎসর ধরিয়া চলিয়া আসা রুশ এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ আর মধ্যপ্রাচ্যে গাজা ভূখণ্ডকে সামনে রাখিয়া প্যালেস্তাইন বনাম ইরানের সংঘাত হয়তো নতুন মোড় লইবে,এমন ভাবা হইতেছে। বাস্তবে কী হইবে তাহা সময়ই বলিবে।ভোট প্রচারে ট্রাম্প যে সকল কথা বলিয়াছেন তাহা কি সবই কথার কথা?মার্কিন মুলুকে এমন হয় না সাধারণত।কথা বলিয়া অস্বীকার করিয়া লওয়া আমাদের দেশের নেতাগণের স্বভাব, সেই দেশে নহে।
ট্রাম্পের প্রচারের মূল কথা ছিল দেশের আর্থিক দুরবস্থা। নাগরিকেরা দৈনন্দিনের তেল আটা সবজি মাংস সংসারের তৈজসপত্র কিনিতে যাইয়া ফতুর হইতেছেন।চার বৎসরে পেট্রোলের দাম বাড়িয়াছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় সাংসারিক সামগ্রীর দাম বাড়িয়াছে ১০ হইতে ৪০ শতাংশ।তিনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে লাগাম লাগাইবেন।দেশের অনর্থক খরচ কমাইয়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কমাইবেন।কী সেই অনর্থক খরচ?ট্রাম্পের ভাষায় অন্য দেশে যাইয়া যুদ্ধ চালাইয়া যাওয়া একটি বহুল ব্যয়। যুদ্ধ যে ব্যয় বাহুল্য এই কথা সকলেই জানে।এরপরেও যুদ্ধ ছাড়া আমেরিকা কীভাবে থাকিবে, আজ ইহাও একটি বড় প্রশ্ন।
আধুনিক বিশ্বে প্রায় ৯০ খানা ছোটবড় যুদ্ধে সবখানেই আমেরিকার উপস্থিতি রহিয়াছে।আজ যে দুইটি যুদ্ধ চলিতেছে তাহাতে যথাক্রমে ইউক্রেন এবং প্যালেস্তাইনের সঙ্গে রহিয়াছে আমেরিকা। আপাত দৃষ্টিতে ইউক্রেনের জয় পরাজয়ে আমেরিকার কোনও লাভালাভ নাই। আবার সত্যসত্য ইরানের পতন ঘটিলে বিশাল পেট্রো ডলার আসিবে।কিন্তু এর জন্য খরচ বিশাল।সেই যাহাই হোক,এই হিসাব নিকাশ করিবেন জো বাইডেন আর জানুয়ারীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভোটের মুখে হিন্দু ভোটের জন্য দুই চার কথা বলিয়াছেন ট্রাম্প, সমালোচনা করিয়াছেন বাঙ্গলাদেশকে।সেই দেশটিকে নৈরাজ্যের দেশ বলিয়াছে। তাই আমেরিকার পালাবদলে দক্ষিণ এশিয়াও তোলপাড়।বাংলাদেশ এবং ভারতের ভাবনা তাহা হইলে কি বাংলাদেশে আরও একবার ক্ষমতায় পালাবদল হইতে চলিয়াছে?এই কথা ঠিক যে আমেরিকার কলকাঠিতে দেশ ছাড়িতে হইয়াছে শেখ হাসিনাকে।আবার হাসিনার পর যিনি বাংলাদেশে এখন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা,তিনিও আমেরিকান স্কুলের মেধাবী ছাত্র।এই ক্ষেত্রে ট্রাম্প শ্যাম কূল কীভাবে রক্ষা করিবেন তাহা জানিতে হয়তো জানুয়ারী অবধি অপেক্ষা করিতে হইবে।তবে এই কথা ঠিক,আট বৎসর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে আমেরিকার দায়িত্বে আসিয়াছিলেন সেই আমেরিকার অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে আট বৎসরে।ভোটের ফল প্রকাশের পর আমেরিকার মানচিত্রটি যেভাবে চিত্রিত দেখানো হইয়াছে তাহাতে লালের প্রাধান্য বেশি রহিয়াছে।সেই দেশে লাল রঙ রিপাবলিকানদের।নীল ডেমোক্রাটদের।মানচিত্রে কোথাও কোথাও ছিটাফোটা রহিয়াছে নীলের অংশ। তথাপিও দুইটি দলের ব্যবধান অঙ্কের হিসেবে সামান্য।প্রায় ৫০/৫০ ব্যবধান বজায় রাখিয়াও গোটা মানচিত্র লালে লাল হয় কীভাবে?এই প্রশ্ন আমাদের সকলেরই।দেখা গিয়াছে, রিপাবলিকানরা যে সকল প্রদেশগুলি বা কাউন্টিগুলি দখল করিয়াছে তাহার সবগুলি রহিয়াছে গ্রামে। সামান্য কিছু রহিয়াছে শহরতলিতে।গ্রাম এবং শহরতলিতে লোকসংখ্যা কম।অন্যদিকে শহরগুলিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব বিপুল, বিশাল।এই অংশে ঘাঁটি রক্ষা করিতে পারিয়াছে ডেমোক্রাট পার্টি।এই বড় শহরে এগজিট পোলে এবং ফলাফলে ডেমোক্রাটরা ৬০-৪০ ব্যবধানে জিতিয়াছে।আর গ্রামে ঘটিয়াছে একেবারে উল্টো ঘটনা।
সেই সকল এলাকায় ট্রাম্প জিতিয়াছে ৬৫-৩৫ ব্যবধানে।নির্বাচনে গ্রাম শহরের এমন ব্যবধান আর কোনও দেশে দেখা যায় কিনা সন্দেহ। শহরতলি এলাকায় মিশ্র অংশের বসবাস।এই সকল এলাকায় লড়াই হইয়াছে তুমুল।যদিও ট্রাম্পই আগাইয়া গিয়াছেন ৫১-৪৭ ব্যবধানে।বলা হইয়া থাকে মার্কিন দেশে এই ব্যবধান ত্রিশ বছর আগেও এত তীব্র ছিল না।গত তিন তিনটি নির্বাচনে লক্ষ্মণরেখা কাটিয়া এই ব্যবধান স্পষ্ট করিয়া দেওয়া হইয়াছে।এই রেখা কীসের।এই রেখা গ্রাম শহরের।এই রেখা ধনী দরিদ্রের।তাহা হইলে কি আমাদের দেশের অবস্থা আমেরিকাতেও?গ্রামে নিরন্ন মানুষের লড়াই হয়তো নাই কিন্তু দারিদ্র্য ঠিকই রহিয়া গিয়াছে!ইহা বড়ই বিস্ময়ের কথাও বটে।যে দেশ বিশ্ব শাসন করিতে চাহে,যে দেশ এই গ্রহের অন্যতম শক্তিধর এবং যুদ্ধবাজ, যাহাদের সঙ্গে শত্রুতাকে ‘বিপদজনক’ এবং বন্ধুতাকে ‘মারাত্মক বিপদ’ বলিয়া ব্যঙ্গ করা হইয়া থাকে তাহাদের দেশেও গ্রাম শহরে বৈষম্য!শহরতলিতে মিশ্র লোক বসবাস করেন। একেবারে গরিব মানুষ যেমন থাকিবেন তেমনি আধুনিক শিক্ষিত সাদা চামড়ার মানুষ থাকিবেন।গরিবস্য গরিবেরা কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ হইবেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী শহরের ৬০ শতাংশ মানুষ সার্ভিস সেক্টরে কাজ করেন। ফিনান্স, রিয়েল এস্টেট, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আইটি ইত্যাদি ক্ষেত্রের চাকুরে। গরিবস্য গরিব কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ ও এই মানুষেরা একচেটিয়া ডেমোক্রাটদের ভোট দিয়াছে।অন্যদিকে মোটামুটি রোজগার করেন সংগঠিত, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা যারা বরাবর ডেমোক্রাটদের ভোট দিতেন তাহারা এইবার শিবির পাল্টাইয়াছেন। অন্যদিকে গ্রামে যেখানে সার্ভিস সেক্টরের মানুষ ৪০ শতাংশের কম,বাদবাকিরা মধ্যবিত্ত,গরিব চাষী,হাতে গোনা বড়লোক,কিছু সরকারী কর্মচারী লওয়া মূলত শ্বেতাঙ্গ মানুষের এলাকা তাহার সকলে রিপাবলিকানদের পক্ষের ভোটার।এই ধরনের এলাকার বিস্তৃতি বিশাল।
দেখা গিয়াছে ডেমোক্রাটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রচারে অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা লইয়া কথা বলিলেও এই দুইটি ক্ষেত্র যে ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে এই কথা বলে নাই, তুলনায় ট্রাম্পকে সাম্প্রদায়িক,জাতিবিদ্বেষী, নারীবিদ্বেষী ইত্যাদি কথাই বেশি বলিয়া গেছে।বিভিন্ন কর্পোরেট ক্ষেত্রে,সার্ভিস সেক্টরগুলিও এই কৌশলের সমর্থক হইয়াছে।যদিও দেশের মহিলা ভোটারেরা এই পলিটিক্স গ্রহণ করেন নাই। কারণ হিলারি ক্লিন্টন মহিলাদের ১৩ শতাংশ ভোট পাইয়াছিলেন, বাইডেন পান ১৫ শতাংশ আর কমলা হ্যারিস পাইয়াছেন মাত্র ৮ শতাংশ।অন্যদিকে ট্রাম্প কেবল অর্থনীতির কথা বলিয়াছেন।এই কথাগুলি গ্রাম এবং পশ্চাৎপদ এলাকায় কাজ করিয়াছে, ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতরকমভাবে বিজয়ী হইয়াছেন।
এক কথায় দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ বিশ্বাস করিয়াছেন দেশের অর্থনীতি ভালো না, অন্ধকারের দিকে ধাবমান, তাহারা ট্রাম্পকে ভোট দিয়াছেন।ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গ ভোট বাদে মহিলা হিস্পানিক সর্বত্রই থাবা বসাইতে পারিয়াছেন।এই ঘটনা ট্রাম্পকে আট বছর আগের ট্রাম্পের চাইতে অন্যরকম করিয়া জনসমক্ষে, বিশ্বসমক্ষে উপস্থাপন করিতে পারে। তবে নিজের দেশের স্বার্থ চুলমাত্র যে ভুলিবেন না এবং সমগ্র বিশ্বকে শাসন করিবার পরম্পরাও তাহার পক্ষে হারাইয়া ফেলা সহজ না,এই কথা জানে সমগ্র বিশ্ব।