কৃশকায় কৃষক!!

 কৃশকায় কৃষক!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আগষ্টের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে কি সরকারী ত্রাণ আদৌ কোনওদিন পৌঁছাইবে? তিন-সাড়ে তিন মাস গত হইতে চলিল,কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে কিছুই পৌঁছাইলো না।বেসরকারী আয়োজন সে যতই বিশাল হোক,তা সাময়িক প্রয়োজন মিটাইতে পারে, এর বেশি কিছু নয়।ছয়-সাতদিন ধরিয়া জল দাঁড়াইয়াছিল নানান জায়গায়।মাটির ঘর সহ স্থানীয়ভাবে যে সকল ঘরে বসবাস করিয়া থাকেন অধিকাংশ মানুষ,তাহাদের ঘর মাটিতে মিশিয়া গিয়াছে কিংবা ভাসিয়া গিয়াছে। তাহারা নতুন ঘরের আশ্বাস পাইয়াছেন বটে, এর বেশি কিছুই মিলে নাই আজতক।
অনেকের শস্যখেত বালিতে ঢাকিয়া গিয়াছে,সেই জমি হইতে বালি তুলিবার কোনও সহায়তা তারা পান নাই। এককথায় কৃষি দপ্তর কৃষক সহায়তায় এক-দুই হাজার টাকা দিয়াছে,এর বাইরে কানাকড়িও জোটে নাই। ত্রিপুরা দীর্ঘ দশক পর রাজ্যের মানুষ এমন ভয়াবহ বন্যা দেখিয়াছেন।সেই খবর দিল্লীতে পৌঁছাইলে বন্যার্ত মানুষের উদ্ধারে কেন্দ্রীয় বাহিনী, হেলিকপ্টার ইত্যাদি পাঠানো হয়।ফলে প্রাণহানি ছিল আশঙ্কার চাইতে কম। কিন্তু যাহারা সেই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত হইতে বাঁচিয়া আসিয়াছেন,তাহারা আজ বুঝিতেছেন জীবন কতটা সংগ্রামের, লড়াইয়ের।
কৃষক, কৃষিনির্ভর এই গ্রামীণ মানুষগুলির জীবন বড় কঠিন হইয়া পড়িয়াছে এই কয়েক মাসে।শাসক দলের স্থানীয় লোকেরা প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকারী সহায়তার আশ্বাস দিয়া আসিয়াছেন উঠানে পৈঠায় দাঁড়াইয়া।কারণ তাহারা ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণ লইয়া সময় সময়ের সরকারী ভাষ্য জানিয়াছিলেন। আমরাও জানিয়াছি, শুনিয়াছি- সরকারের মন্ত্রীরা বলিয়াছেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চারশত কোটি।কেন্দ্রীয় নিরুপণকারী দল আসিয়াও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করিয়া গেলেন। অবশেষে প্যাকেজ ঘোষণা হইলো ৫৬৪ কোটি টাকার। কিন্তু কোথায় প্যাকেজ? তিন-সাড়ে তিন মাস অতিক্রান্ত, কেহই প্যাকেজের চেহারা দেখিতে পান নাই।গ্রামের জমি ফসলশূন্য। মাঠের পর মাঠ খাঁ খাঁ করিতেছে।সেই সকল মাঠে কতগুলি হাড্ডিসার গরু চরিয়া বেড়ায়।অপরাহ্ণ কৃষক খেতের আলে আসিয়া দাঁড়ায়।তাহার শূন্যদৃষ্টি আকাশপানে।সেই দৃষ্টিতে জড়াইয়া আছে অসহায়তা। ঋণ পরিশোধের উদ্বেগ আর জীবনযাপনের নিত্য টানাটানি কেবলমাত্র রেশনের সস্তা বা বিনামূল্যে চাল দিয়া সম্ভব যে নয় এই কথা কেনা জানে?জানে না শুধু সরকার বাহাদুর।কৃষকের পাশে দাঁড়াইতে কোনও তাগিদ বোধ করিতেছেন না সরকারের নীতিপ্রণেতারা। ফলে ৫৬৪ কোটি টাকার প্যাকেজ কেবল কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ, এর প্রকাশ কেবল নেতার ভাষণে আর কৃষকের বিনিদ্র চোখের পাতায়।
সুখের কথা, কোনও কোনও মহল্লায় বন্যায় ঘরহারা লোকের হাতে ২০ হাজার টাকা ধরানো হইয়াছে।তবে তাহাও শেষ পর্যন্ত চরম রসিকতায় পর্যবর্ষিত হইতেছে।বলা হইলেও সেই সব পরিবারের অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা পয়সা এখনও জমা পড়ে নাই।তবে ক্বচিৎ কাহারো হাতে সত্যই কুড়ি হাজার টাকা গেছে বলে জানা যায়।বহু কৃষক যাহার রবিশস্যের কথা ভাবিতেছেন তাহারা সহায়তার জন্য পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে টু মারিতেছেন বটে কিন্তু সহায়তার কোনও সুযোগ তারা দেখিতে পান নাই। মুখ্যমন্ত্রী প্যাকেজে কৃষকদের বীজ কিনিবার জন্য ২০ কোটি টাকা রাখা হইলেও কৃষক খোলাবাজার ইতেই চড়া দামে বীজ সংগ্রহ করিতে বাধ্য হইতেছেন।বহু পুকুর ভাসিয়া গিয়াছে। তাহারা অকূল পাথারে পড়িয়াছেন।তাহাদের জন্যও কাথাও ছিটাফোঁটা সহায়তার কথা শোনা যাইতেছে না। তাহা হইলে ৬৪ কোটির প্যাকেজ কোথায় কীসের শোভাবর্ধন করিতেছে কেহই জানেন না।কৃষকদের অসহায়তা, হতাশা দিনে দিনে বাড়িতেছে।
কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে সহায়ক মূল্যে ধান কিনিতে শুরু করায় কৃষিতে ফিরিয়া গিয়াছিলেন অনেক কৃষক। তাহারা এই বন্যার পর ফের কৃষি হইতে দূরে সরিয়েছেন। যেকোনও দিন সকালবেলা অমরপুর, উদয়পুর, সোনামুড়া থেকে আগরতলাগামী ট্রাক, ভ্যানগুলির প্রতি নজর করিলেই দেখা যাইবে প্রকৃত চিত্র।দলে দলে কৃষিজীবী মানুষ শহরমুখী হইতেছেন নির্মাণশ্রমিকের কাজের খোঁজে।অদক্ষ শ্রমিক হিসাবে সারা দিন গতর খাটাইয়া তারা ঘরে ফিরিয়া যান এই ভাবেই গুজরান হয় কৃষকের পরিবারের।এই সকল মানুষকে কৃষিতে ফিরাইয়া লইয়া যাইবার প্রয়োজন কে ভাবিবে? কে বুঝিবে?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.