মণিপুর: অশান্তির শেষ কোথায়?
পূর্বোত্তরের এক কোনে পড়ে থাকা মণিপুরে গত দেড় বছর আগে সে অশান্তির আগুন জ্বলেছিলো তা থামার কোনও লক্ষণ নেই।বরং দিন দিন তা বাড়ছে।বর্তমানে ফের মণিপুরে অশান্তি মাথাচাড় দিয়েছে।দুই বিবাদমান জাতিগোষ্ঠী কুকি জো এবং মেইতেই মণিপুরিদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থামতেই চাইছে না।অশান্ত মণিপুরে কেন্দ্রের তরফে হিংসা দমাতে বারংবার নিরাপত্তা বাহিনী পাঠিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না সম্প্রতি মণিপুরে ফের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে রয়েছেন।
মণিপুর জ্বলছে।প্রধানমন্ত্রীর কোনও বিবৃতি নেই।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহারাষ্ট্রে ভোট চলাকালীন ভোটের প্রচার কাটছাঁট করে দিল্লীতে গিয়ে মণিপুর নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করছেন পরপর ২দিন।মণিপুরে হিংসা দমাতে রাজ্য সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ গত দেড় বছর ধরে।এরপর, ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং।তিনি পদত্যাগ করেননি। সাম্প্রতিক হিংসায় তার পৈত্রিক বাড়িও ‘আক্রান্ত হয়েছে।শুধু তাই নয়, মন্ত্রিসভার আরও বেশ কজন সদস্য এবং বিধায়কের বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে।এতে কি প্রমাণ করে?রাজ্যের সরকারের উপর মানুষের আস্থা নেই।তবুও কেউ মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করছে না। মুখ্যমন্ত্রী তার পদ দখল করে বসে আছে।
মণিপুরে গত দেড় বছর আগের অশান্তির মূল কারণ হচ্ছে মেইতেই সম্প্রদায়কে এসটি তকমা দেবার একটি দাবিকে ঘিরে।একটি মিছিলের উপর আক্রমণের ঘটনা থেকে হিংসার সূত্রপাত।গত বছরের ৩রা মে’র ঘটনা এটি।সেই থেকে রাজ্যে অশান্তির বাতাবরণ চলছে।বারংবার দাবি উঠেছে,প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মণিপুর গিয়ে সে রাজ্যের মানুষের উদ্দেশ্যে শান্তির বার্তা রাখুন।কিন্তু আজ অবধি প্রধানমন্ত্রী সে রাজ্যে পা মাড়াননি। সাম্প্রতিক হিংসা চলাকালীন সময়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সে রাজ্যে যাবার জন্য আর্জি জানিয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী।কিন্তু এত সবের পরও প্রধানমন্ত্রীর কোন বিবৃতি নেই সুদূর বিদেশ থেকেও।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দিন বৈঠক করেই দায়িত্ব শেষ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী নির্বিকার, রাজ্যে সরকারের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা বোঝা যায়।গত দেড় বছর ধরে কুকি সম্প্রদায়ের মানুষজন মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষজনের উপর হামলা করেছে। মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষজন কুকি সম্প্রদায়ের মানুষজনের উপর হামলা করেছে।মণিপুর এখন আড়াআড়ি ভাবে দুই ভাগে বিভক্ত।পাহাড় কুকিদের দখলে।তারা সমতলে আসে না আবার উপত্যকার, সমতলের মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষজন পাহাড়ে যান না।অর্থাৎ সর্বত্র এক অবিশ্বাসের বাতাবরণ। রাজ্য যেন দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে।এ রাজ্যের এখন পর্যন্ত সরকারী হিসাব মতোই প্রাণ গেছে প্রায় তিনশ নরনারীর।গৃহহীন হয়ে আশ্রিত প্রায় এক লক্ষ সাধারণ মানুষ।তারা বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রয়েছেন বর্তমানে।
মণিপুরে হিংসা চলাকালীন ২ বার সে রাজ্যে গিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এমনকী কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তার দ্বিতীয় দফার ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা সূচনা করেন ইম্ফল থেকে। এর সুফলও পায় কংগ্রেস। মণিপুরের ২ টি আসনেই গত লোকসভা আসনে কংগ্রেস জয়লাভ করে। মানুষ বিজেপিকে বর্জন করে। বর্তমানে রাজ্য সরকারও প্রায় অনাস্থার মুখে,সম্প্রতি সরকারের শরিক, এনপিপি রাজ্য সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করে।
এছাড়াও সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং এনডিএর যে বৈঠক ডাকেন তাতে শরিক সহ শাসক বিজেপি দলেরও অনেক বিধায়ক শামিল হননি।
এই অবস্থায় মণিপুরে সত্যি সত্যিই এক অরাজক অবস্থা চলছে গত দেড় বছর ধরে।
সংসদে বহুবার এ নিয়ে আলোচনার দাবি জানানো হয়।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে কথা বলেছেন খুবই অল্প সময়ের জন্য।মণিপুর ভারতের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ,একটি অঙ্গ রাজ্য। মণিপুরের অবস্থা ভালো নয়। এই অবস্থায় কেউ চুপ করে বসে থাকতে পারে না।ফের মণিপুরে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বেশ কিছু অঞ্চলে বলবৎ করা হয়েছে।এই মণিপুরই হচ্ছে আন্দোলনের আঁতুড়ঘর যেখানে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে মহিলারা নগ্ন হয়েও প্রতিবাদ জানান।শর্মিলা চানু বছরের পর বছর অনশন করেছেন।গোটা বিশ্বে নজর কেড়েছে তার এই আন্দোলন।শেষ পর্যন্ত পূর্বোত্তর থেকে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) প্রত্যাহৃত হয়েছিলো।
কিন্তু বর্তমানে ফের হিংসা চলাকালীন সময়ে মণিপুরের বেশ কয়েকটি জেলার অন্তত ৬ টি থানা এলাকায় এই বিশেষ ক্ষমতা আইন বলবৎ করা হয়েছে।এর জেরে ফের মণিপুর জুড়ে শুরু হয়েছে আন্দোলন।সুশীল সমাজ এরই প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে। সব মিলিয়ে বলা যায় অগ্নিগর্ভ মণিপুরের শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবাইকে দলমত নির্বিশেষে একটা প্রচেষ্টা নেওয়া দরকার।সংসদের অধিবেশনে শুরু হবে আগামী কিছুদিনের মধ্যে।কংগ্রেস দাবি করেছে মণিপুর ইস্যুতে যেন সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়।কিন্তু আদৌ কেউ কি তা ডাকবে?মণিপুর ইস্যুতে কেন্দ্রের সদর্থক ভূমিকা আশু প্রয়োজন।দেড় বছর ধরে মণিপুরে অনেক অশান্তি হয়েছে।কিন্তু আর নয়।এবার সময় এসেছে মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার।এজন্য সবার মিলিত প্রচেষ্টা দরকার
রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে।