আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ছাঁটাই করা হল নিগৃহীত শিক্ষককে।।
অনলাইন প্রতিনিধি :-বিচারের আগেই শাস্তি পেলেন তেলিয়ামুড়ার কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিগৃহীত কম্পিউটার শিক্ষক বিপুল বিশ্বাস।রাজ্যের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে একজন নিগৃহীত শিক্ষক আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ পেলেন না।উল্টো তার চাকরি কেড়ে নিলো বেসরকারী সংস্থা।আর রাজ্যের করিৎকর্মা শিক্ষা দপ্তর ঘটনার পাঁচদিন পর তদন্তে গিয়ে খোয়াই জেলার কৃষ্ণপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলির পাঁঠা বানিয়ে বদলি করে দিলেন। অথচ সরকারী স্কুলে বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে নিযুক্ত কম্পিউটার শিক্ষকের উপর কেন প্রাণঘাতী হামলা হলো, কারা এই হামলার সাথে যুক্ত এবং কীভাবে সরকারী স্কুলে বহিরাগত দুর্বৃত্তরা এসে শিক্ষকের উপর প্রাণঘাতী হামলা করলো এই বিষয়ে কোনও তদন্তই করলো না রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর।
অবাক করার বিষয় হল শিক্ষা দপ্তর এখন প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার জন্যে এক নির্দেশিকা জারি করে দিলো।শিক্ষা দপ্তর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের সমস্ত স্কুলে প্রতি পনেরোদিন অন্তর অন্তর ছাত্রছাত্রীদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্যে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এ মর্মে প্রথম বৈঠক হবে আগামী ত্রিশ নভেম্বর।তবে কেন শিক্ষা দপ্তর স্কুলের শিক্ষক- শিক্ষিকাদের নিরাপত্তা রক্ষার প্রশ্নে কোনও পদক্ষেপ নিলো না।এমনকী ঘটনায় জড়িত সমাজদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মামলা করলো না, এ নিয়ে রাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে।
এদিকে,তেলিয়ামুড়া বিদ্যালয় পরিদর্শকের অন্তর্গত কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিগৃহীত কম্পিউটার শিক্ষক বিপুল বিশ্বাস এবার বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সহ মোট এগারোজনের বিরুদ্ধে তেলিয়ামুড়া থানায় সুস্পষ্টভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন বৃহস্পতিবার।এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাতে সংবাদ লেখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে প্রকাশ্যে শিক্ষক নিগৃহীত হওয়ার পর বর্তমানে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক জামিনে মুক্ত। এবার এর পরবর্তীতে এগারোজনের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট মামলা করার ফলে গোটা বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে তেলিয়ামুড়া জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।যদিও এই ঘটনার পরই বিদ্যালয়ের পূর্বতন প্রধান শিক্ষক থানায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।তাই পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে।
রাজ্যে একটা নতুন সংস্কৃতির আমদানি হয়েছে।যে কোনও ঘটনার শিক্ষক- শিক্ষিকাদের দৈহিক নির্যাতন চলছে।আর প্রত্যেকটি ঘটনার বিশেষ করে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে প্রকাশ্যে বেধড়ক মারধর করা হয়।তবে তদন্তে প্রতিটি ঘটনায় প্রমাণিত হচ্ছে যে শিক্ষকরা আদতে নির্দোষ। অবাক করার বিষয় হল ঘটনায় ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেই।সারা রাজ্যের স্কুল সংলগ্ন এলাকার স্বঘোষিত নেতাদের উদ্যোগেই এই হামলাগুলি হচ্ছে বলে অভিযোগ।আর শিক্ষক পেটানোর এই মুহূর্তগুলি আবার এক শ্রেণীর মানুষ মোবাইল ক্যামেরাতে বন্দি করতে ব্যস্ত থাকছেন। এমনকী এরপর তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।এভাবেই রাজ্যের শিক্ষক জনসমাজকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে পরিবর্তনের ত্রিপুরাতে। তবে সর্বক্ষেত্রেই নীরব দর্শক রাজ্য সরকার।
এদিকে,এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে অল ত্রিপুরা স্কুল কম্পিউটার শিক্ষক সংঘ।এমনকী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনায় জড়িত প্রকৃত দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছে কম্পিউটার শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সংঘের দাবি কোনও তদন্ত ছাড়া কোন্ ক্ষমতা বলে নিগৃহীত শিক্ষককে ছাঁটাই করা হলো। এর কোনও জবাব নেই এই বেসরকারী সংস্থার কাছে।
উল্লেক্য, সম্প্রতি ওই স্কুলে গিয়েছিলেন, ওই এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা। তিনি অবশ্য স্কুলে গিয়ে বৈঠক করে ঘটনার নিন্দা করেছিলেন।তার মত ছিল এই ঘটনা হবার কথা ছিল না।এটা খুবই অন্যায় কাজ হয়েছে।তবে অবিযুক্ত শিক্ষককে যেভাবে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে তাতে শিক্ষাদান কলঙ্কিত হয়েছে।একজন শিক্ষককে যেভাবে শিক্ষাঙ্গনে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে,ঝাঁটাপেটা করা হয়েছে তাতে সভ্য সমাজে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছে বলে মনে করছে রাজ্যের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজন।