জোটের ভেতরে জোট!!

 জোটের ভেতরে জোট!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

হরিয়ানা,জম্মু-কাশ্মীর এবং মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের হতাশাজনক ফলাফল ইন্ডিয়া জোটের ভেতরে নেতৃত্বের প্রশ্নে নতুন রসায়ন ভারতীয় রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা দিতে চলেছে।২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস জিততে না পারলেও,ইস বার ৪০০ পার বিজেপির বহু চর্চিত স্লোগান মুখ থুবড়ে পড়েছিল কংগ্রেসের আক্রমণাত্মক ভূমিকার কারনেই।শুধু তাই নয়,কেন্দ্রে মোদি সরকারকে ২৪০ এর মধ্যে বেঁধে রেখে, কংগ্রেস শক্ত চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিয়েছিল লোকসভার নির্বাচনে।বিজেপির ঘৃণার বাজারে তিনি মহবুতের দোকান খুলতে এসেছেন প্রচার করে রীতিমত জনগণের আস্থায় এবং বিশ্বাসের ভিতকে দৃঢ় করতে পেরেছিলেন রাহুল গান্ধী। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত প্রথমে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ এবং পরবর্তী সময়ে লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে ‘ন্যায় যাত্রা’র মাধ্যমে রাহুল গান্ধী যেটা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন তা হল, আর্থিক অসাম্য, সামাজিক ন্যায় এবং সংবিধানের সুরক্ষার প্রশ্নে বিজেপির তুলনায় কংগ্রেস অনেক বেশি নিরাপদ।শুধু তাই নয়, মূল্যবৃদ্ধি,বেকারত্ব, কৃষকদের সমস্যা এবং আমজনতার রুটি রোজগারের প্রশ্নেও রাহুল মানুষের মনে একটি ইতিবাচক রেখাপাত করতে পেরেছিলেন বলেই লোকসভার ভোটে বিজেপির একচ্ছত্র প্রচার সত্বেও ভোটের বাক্সে জনগণের পূর্ণ সমর্থন অর্জন করতে পারেনি।কিন্তু সমস্যা হলো লোকসভার নির্বাচনে বিজেপিকে বড়সড় ধাক্কা দিতে পারলেও যেহেতু তিনি নিজে সংগঠনের নিচুতলা থেকে উঠে আসেনি, তাই সাংগঠনিক দূর্বলতা থেকে দলকে বের করে আনতে পারেননি।আর সেই কারণেই সংগঠনের উপর লাগামহীন কংগ্রেস নেতৃত্ব হরিয়ানার নির্বাচনে যেভাবে ধাক্কা খেয়েই, ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে মহারাষ্ট্রের ভোটে।এই ভোটগুলো একটি বিষয় পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ভোটারদের একই স্লোগান দিয়ে বারবার যেমন তাদের মন পাওয়া যায় না,তেমনি সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য ন্যূনতম যে কাজগুলো করা দরকার সেগুলো রাজ্যে রাজ্যে একের পর এক নির্বাচনে ধরাশায়ী হওয়া পরও কংগ্রেস নিজেকে প্রস্তুত করতে পারছে না। রাজস্থানে বিধানসভায় যে পথে কংগ্রেস হেরেছে, সেই একই কারণে মধ্যপ্রদেশেও হার হয়েছে কংগ্রেসের। এবার হরিয়ানাতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির পরেও চোখ খুলল না কংগ্রেস হাইকমান্ডের। ফলে বারবার সাংগঠনিকভাবে অন্তঃসার শূন্য কংগ্রেসের কঙ্কাল চেহারাটা প্রকাশ্যে এলেও নিজেদের সংশোধনের কোনও তদ্বির দলের নেতৃত্বের তরফে দেখা যাচ্ছে না।একটা জাতীয় দল হিসাবে দেশকে এবং বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা কংগ্রেসের নিশ্চয় আছে।কিন্তু কংগ্রেসের সেই
জমিদারী চলন এবং ব্যবহার কোনভাবেই কমানো যাচ্ছে না।কংগ্রেসকে একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ২৪০ আসনে আটকে রাখার কৃতিত্ব যতটা না বিরোধী দলগুলো, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে জনগণের। কিন্তু লোকসভা ভোটে একা ৯৯ টি আসন জিতে কংগ্রেসের জমিদারী মানসিকতা এবং আত্মবিশ্বাস এতটাই চরমে পৌঁছেছে, লোকসভা পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনে বিরোধীদের পরাজয় এবং কংগ্রেসের ব্যর্থতা সত্বেও তাদের দৃষ্টিশক্তি সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। ফ্রি রেশন,২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ফ্রি,বেকার ভাতা, মহিলাদের অ্যাকাউন্টে মাসিক ও তিন হাজার টাকার সংস্থান আর মহিলাদের জন্য বাসে ফ্রি চলাচলের বন্দোবস্ত করলেই সব রাজ্যে ভোটে জেতা যায় না এই সহজ সত্যটি এখনও হৃদয়াঙ্গম করতে নারাজ কংগ্রেস।যে কারণে মুখে ইন্ডিয়া জোট হলেও সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনের জোটের শরিকদের মধ্যে বোঝাপড়ার কোনও লক্ষক্ষ্মণ চোখে আসছে না। বরং ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্বের প্রশ্নে প্রথমে এনসিপি এবং শিবসেনার পর এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বীকৃতি দিচ্ছেন আর জেডির মতো দল।ইতিপূর্বে সমাজবাদী পার্টির অখিলেশের মুখ থেকে মমতা বন্দনা এবং জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নে মমতাকে সমর্থনের ইঙ্গিত মিলেছিল।লোকসভায় ইন্ডিয়া জোটের মোট সদস্য সংখ্যা যদি ২৩০ হয়,তাহলে অখিলেশ যাদব, উদ্ধব, শারদ ও মমতার হাতেই আছে ৮৩ জন সাংসদ।এটা সত্য যে, ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে এককভাবে কংগ্রেস হল সবচেয়ে বড় দল।কিন্তু এই চার দলের মিলিত সাংসদের সংখ্যাও কংগ্রেস থেকে খুব একটা পেছনে নয়।অর্থাৎ জোটের রাশ যে ধীরে ধীরে কংগ্রেসের হাত থেকে চলে যাচ্ছে তার অভাস কিন্তু স্পষ্ট।ইতিমধ্যে আগামী বছর দিল্লীর বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়াল একাই ভোটে লড়ার কথা বলেছেন। বিহারের নির্বাচনেও কংগ্রেস সেই আগের জোট-অবস্থানকে স্বীকৃতি নাও দিতে পারেন লালু।সব
মিলিয়ে বড়সড় সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.