ক্যান্সার হাসপাতালেই ক্যান্সার!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের ক্যান্সার হাসপাতালেই কি ক্যান্সার দানা বেঁধেছে?রাজ্যের ক্যান্সার হাসপাতালে পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে মুখে বড় বড় কথা বললেও আদতে এই হাসপাতালে জরুরি বিভাগই নেই।নেই আইসিইউ-ও।অথচ নেতা-মন্ত্রীরা ভাষণে বলেন যে উত্তর-পূর্বের মধ্যে নাকি সবচেয়ে ভালো এবং উন্নত চিকিৎসা এই ক্যান্সার হাসপাতালেই হয়।ক্যান্সার মানেই ভয়,আতঙ্ক, বিভীষিকা।ক্যান্সারের নাম শুনলেই সবাই প্রথমেই মুষড়ে পড়েন।এরপর চিকিৎসা শুরুর পর আস্তে আস্তে বেশিরভাগ রোগীই আরও সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে।তবে চিকিৎসকরা বলেন যে, ক্যান্সার যদি প্রথমাবস্থায় ধরা পড়ে তা অনেকাংশেই নিরাময়যোগ্য।এক্ষেত্রে ক্যান্সার রোগীর আয়ু অনেকাংশেই বাড়ানো সম্ভব হয়।কিন্তু বাস্তব সত্য হলো অধিকাংশ ক্যান্সার রোগীরই রোগ ধরা পড়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে।সে সময়ে চিকিৎসকের পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এই অবস্থায় জীবনের শেষদিকে এসে ক্যান্সার রোগীরা চায় তাদের যেন সহানুভূতির চোখে দেখা হয়। তারা চান একটু চিকিৎসার সুযোগ। কিন্তু সেই চিকিৎসার সুযোগ যদি না পাওয়া যায় তাহলে কী হবে?
আগরতলার ক্যান্সার হাসপাতালটি রাজ্যে চালু হয় ১৯৮০ সালে।বর্তমানে এটি রিজিওনাল ক্যান্সার হাসপাতাল হিসাবে উন্নীত হয়েছে ২০০৮ সালে।ফলে এখানে পরিকাঠামো থাকার কথা একেবারে উন্নত স্তরের। নয়া প্রযুক্তির ব্যবহার, নয়া নয়া মেশিন, নয়া ভবন, প্রচুর অর্থ বরাদ্দ সবকিছুই রয়েছে। কিন্তু সব কিছু থেকেও যেন অনেক কিছুই নেই এখনও এ রাজ্যে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে,এ রাজ্যে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দিনদিনই বাড়ছে। প্রচুর সংখ্যক ক্যান্সার রোগী প্রতিদিনই রাজ্যের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করান।কেউ ছুটেন মুম্বাই,কেউবা কলকাতা, কেউবা চেন্নাই, কেউবা হায়দ্রাবাদ, কেউবা বেঙ্গালুরুতে গিয়ে নিজের শেষ সম্বলটুকু উজাড় করে দিয়ে চিকিৎসা করান। তবুও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শেষরক্ষা হয় না।
সেইক্ষেত্রে শেষ সময়ে আগরতলা ক্যান্সার হাসপাতালকেই অনেকেই ভরসার শেষ কেন্দ্র হিসাবে বেছে নেন।আর যারা রাজ্যেই ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা করান সেক্ষেত্রে আগরতলার ক্যান্সার হাসপাতালেই তাদের প্রথম থেকে শেষ অবধি চিকিৎসা করান।সেক্ষেত্রে সবাই-ই চান ক্যান্সার হাসপাতালে সব ধরনের পরিকাঠামো থাকুক।খবরে প্রকাশ, আগরতলা রিজিওনাল ক্যান্সার হাসপাতালে এখনও কোনও ইমার্জেন্সি বিভাগ নেই।কোন ক্যান্সার হাসপাতালে আপৎকালীন বিভাগ নেই তা একাধারে বিস্ময় করার মতো ঘটনা।অথচ এটি একটি রিজিওনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট।এছাড়াও এটি শ্রেষ্ঠ ক্যানাসার ইনস্টিটিউট হিসাবেও স্বীকৃত।এই অবস্থায় এই সমস্ত চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতি কেন এতদিনেও হলো না তাই প্রশ্ন। স্বভাবতই আপৎকালীন চিকিৎসা যাদের দরকার তারা সেই চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়াও খবরে প্রকাশ,এই ক্যান্সার হাসপাতালে বহু যন্ত্রপাতি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।একটি পেট সিটি মেশিন আনা হয়েছিল বহু কোটি টাকা ব্যয় করে। পেট সিটি হচ্ছে ক্যান্সার নিরূপণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মেশিন। কিন্তু সেটিও কিছুদিন পরপর অচল হয়ে পড়ে।অথচ এই ক্যান্সার রোগ নির্ণয়কারী পেটি সিটি মেশিনে এই পরীক্ষাটি করার জন্যই ক্যান্সার রোগীদের বহি:রাজ্যে ছুটে যেতে হয়।
আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ক্যান্সার হাসপাতালে আইসিইউ পর্যন্ত চালু নেই। অথচ কেন এটি এখনও চালু হলো না সেই ব্যাখ্যা নেই রাজ্য সরকারের কাছে।ফলে রাজ্যের মুমূর্ষু ক্যান্সার রোগীরা এই আইসিইউর সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।রোগীরা এক্ষেত্রে দুর্ভোগে পড়ছেন।এছাড়াও আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে কী করে এটিকে রিজিওনাল হাসপাতালের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।দেশের সমস্ত ক্যান্সার হাসপাতালে এই ধরনের বিভাগ থাকলেও আগরতলায় এটি চালু নেই কেন এ নিয়ে রাজ্য সরকারের সুস্পষ্ট কোনও বক্তব্য নেই।রাজ্য সরকারকে রাজ্যবাসীর স্বার্থে, রাজ্যের মুমূর্ষু ক্যান্সার রোগীদের স্বার্থে অবিলম্বে ক্যান্সার হাসপাতালের পরিকাঠামো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন এ রাজ্যের সচেতন নাগরিক মহল।