শীতকাব্য ও এই সময়!!
গভীর সমুদ্রের খামখেয়ালিতে থিতু হইতে পারিতেছে না শীত।তবে শীত অনুভূত হইতেছে কম বেশি। যেইহেতু ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ আসিতে আরও বাকি, তাই জম্পেশ শীতের জন্য আকুতি শোনা যাইতেছে না কোনও শীত বিলাসীর তরফেই।সকলেই জানি ওই সময়টিতে শীত পড়িয়া থাকে। শীতকাল আসিলে প্রকৃতিতে, প্রকৃতির বাইরে মানুষের সামাজিক জীবনে কিছু কিছু বিষয় আসিয়া যায় আমাদের ঋতু বৈচিত্রেরর কারণেই। মানুষ শীতের বশে নানান উৎসবে মাতিয়া থাকে। পকেটে পয়সা থাকিলে শীতে ভিন্ন খানাপিনার মোচ্ছবও হয়। আবার শীতকাল যেইহেতু কৈশোর-যৌবনের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক এক ঋতু, শারিরিকভাবে আরামপ্রদ বলিয়া পরিগণিত হইয়া থাকে। তাই এই সময়ে সামাজিক উৎসব বেশি হয়। শুধু সামাজিক কেন, রাজনৈতিক উৎসব বা কর্মকাণ্ডও • দেখা যায় শীতকালে। তবে সেই সকল কর্মকাণ্ড বাৎসরিক নহে, ত্রৈবাৎসরিক হইয়া থাকে।
এই সময়ে হালকা হইতে মাঝারি শীতের সময়ে রাজ্যে এক রাজনৈতিক মুখরতা চলিতেছে। ইহা সাংগঠনিক। শাসক দল বিজেপি এবং প্রধান বিরোধী বাম দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এই সময়ে নিত্যদিনকার সংবাদ। শাসক দলে মণ্ডল স্তর হইতে সর্বভারতীয় সকল স্তরে দলে পুনর্গঠন চলিতেছে। দলীয় ভাবে বিজেপি এই কর্মকাণ্ডকে সংস্কার বলিতেছে। মণ্ডল পর্যায়ে সভাপতি হইলেন শীর্ষ ব্যক্তি। তাহার অধীনে থাকিবে মণ্ডল কমিটি। বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিটি বিধানসভা ক্ষেত্রে একটি মণ্ডল। সেই হিসাবে যাটখানা মণ্ডলে এই সময়ে কমিটি পুনর্গঠনকার্য চলিতেছে। সভাপতি নতুন আসিবে কী বর্তমানকেই আরও তিন বৎসরের জন্য দায়িত্ব ন্যস্ত করা হইবে- এই লইয়া দলের সাংগঠনিক স্তরে তৎপরতা এখন তুঙ্গে। মণ্ডল কমিটির পরে রহিয়াছে জেলা কমিটি। সেইখানেও সংস্কার প্রস্তুতি রহিয়াছে। তৃতীয় স্তরে হইবে রাজ্য কমিটি পুনর্গঠন। সভাপতি নির্বাচন বা মনোনয়ন হইবে।
ত্রিপুরা দলের যিনি সভাপতি ছিলেন তিনি বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ হইয়াছেন। দিল্লীতে তাহার কাজ বাড়িয়াছে। তাহার উত্তরাধিকার হিসাবে দল অন্য কাউকে বাছিবে নাকি তাহাকেই পুনরায় দায়িত্বে রাখিবে এই লইয়া দলের ভেতরে ভাবনাচিন্তা চলিতেছে। আবার নতুন মুখ আনিতে গেলে বহু প্রত্যাশীর মধ্যে হইতে এক কোন জনকে চয়ন করা হইবে ইহাও নিঃসন্দেহে কঠিনতর বিষয়। জানা যায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা যেইহেতু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগদান করিয়াছেন তাই দলে এই এইবার নতুন কাউকে সভাপতি করা হইবে। সাংসদের পক্ষে সম্ভব হইলেও মন্ত্রীর পক্ষে দুই দায়িত্ব দীর্ঘদিন ধরিয়া রাখা চেয়ার অফ প্রফিট দোষে দুষ্ট হইতে পারে।দিল্লীর সর্বভারতীয় কমিটির এই পরিবর্তন জানুয়ারীর মধ্যেই সম্পন্ন করিবার প্রয়াস রহিয়াছে বলিয়া শোনা যায়। ফলে এর আগেই শেষ করিতে হইবে রাজ্যে সভাপতি নির্বাচনের কাজটি।
অপরদিকে রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল সিপিএমেও চলিতেছে সাংগঠনিক সভা সম্মেলন। মহকুমা স্তরে এই সময়ে সভা চলিতেছে, চলিতেছে কমিটি গঠন। আবার যেই সকল জেলায় মহকুমা সম্মেলনের পর্যায় শেষ হইয়া গিয়াছে সেই সকল জেলায় জেলাস্তরের সম্মেলনে সাংগঠনিক সভা ও কমিটির নির্বাচন চলিতেছে। দলটির সাংগঠনিক গনতন্ত্র অনুযায়ী সকল মহকুমা এবং জেলা সম্মেলন শেষে অনুষ্ঠিত হইবে রাজ্য সম্মেলন।রাজ্য সম্পাদক জিতেন চৌধুরীই বহাল থাকিবেন নাকি নবীন কেউ আসিবে নাকি বৃদ্ধতন্ত্রেই চলিবে দল এই লইয়া দলের সকল পর্যায়েই আলোচনা চলিতেছে।তাহার প্রভাবেই প্রভাবিত হইতেছে দলের সকল সম্মেলন।তবে ত্রিপুরা সিপিএমেও রাজ্য সম্মেলন জানুয়ারীতে, এই শীত থাকিতে থাকিতেই অনুষ্ঠিত হইতে চলিয়াছে।জাতীয় স্তরে এপ্রিলে তামিলনাডুতে দলের পার্টি কংগ্রেসের আগেই যে সকল রাজ্যে দলটির ছোট বা বড় সংগঠন রহিয়াছে তাহাদের সম্মেলন শেষ হইয়া যাইবে আগামী তিন বৎসরের জন্য।শীতে ত্রৈবার্ষিক এই রাজনৈতিক উৎসবের পাশাপাশি পারিবারিক বিবাহ ইত্যাদি অনুষ্ঠানের জন্যও পরিবারগুলি শীতকালকেই বেশি পছন্দ করিয়া থাকে।পৌষ বাদ দিলে শীতকাল মানেই বিবাহের ঋতু।সামাজিক চিত্রে এই সময় বাৎসরিক হরিনাম সংকীর্তন,উরুশের যথাক্রমে খিচুড়ি ও সিন্নির উপাদেয় কাল। প্রচুর শাকসবজি,ছোট বড় মাছের প্রচুর জোগানের পাশাপাশি পাহাড়ের কমলালেব ও গাছের ডগার খেজুর রস পল্লী, নগর নির্বিশেষে ব্যক্তিজীবনকে আমোদিত করিয়া রাখে,যদিও কমলা বা গুড়ে আগের মতন সৌরভ নাই।সকল কিছুর পর বলিতে হয়,যাহাদের মাথায় ছাদ আছে এবং বিছানায় পর্যাপ্ত লেপ কম্বল, ট্যাগে আছে কিছু রোজগার- তাহাদের জন্য শীত বড়ই আশীর্বাদ। আনন্দে গীত গাইবার সময় এখন।মনে রাখিতেই হয় পৌষ মানে বুড়ির ঘর আর পিঠাপুলির সময়, যদিও পিঠা সকলের পেটে সয় না। তবে শীতে সকলের পিঠই রৌদ্র চায়।এমন সুখের ঋতুতে সকলের মুখে রৌদ্রকরোজ্জ্বল হাসি যদি অমলিন ফুটিয়া থাকিত তাহা হইলে ঋতুতান্ত্রিক শীতের গণতান্ত্রিক যে ব্যস্ততা চলিতেছে দলে দলে তাহাদের সেই রাজনৈতিক আয়োজনকে সার্থকতর বলা যাইতো।চারপাশে হাসিয়া থাকিত অগণিত রেডোডেন্ড্রনের আভা।