পিসিআই নিয়ম তোয়াক্কা না করে নিজেই নিয়ম বানাচ্ছে রিপস্যাট!!

 পিসিআই নিয়ম তোয়াক্কা না করে নিজেই নিয়ম বানাচ্ছে রিপস্যাট!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-রিপস্যাট বা রিজিওনাল ইন্সটিটিউট অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মাথা থেকে দুর্নীতিবাজরা আর সরছেই না।প্রতিষ্ঠানটির আপাদমস্তক ঘিরে রয়েছে দুর্নীতিচক্র।দুর্ভাগ্যের বিষয় আমলাতান্ত্রিক গ্যাঁড়াকলে পড়ে এনইসি পরিচালিত এই শিক্ষা সংস্থাটির দিকে রাজ্য সরকারেরও প্রয়োজন মাফিক কোনও নজর নেই। ফলে এই প্রতিষ্ঠান দিনে দিনে ডিগ্রির কারখানা হয়ে উঠেছে।প্রতিষ্ঠানটির এই ধরনের দুর্দশার কারণে রাজ্যে মার মার করে বেসরকারী ফার্মাসি কলেজ মাথা তুলছে।তাদের প্রাথমিক উদ্দেশই হলো মুনাফা করা। এই ঝোল ঠেকাতে নেই কোনও উদ্যোগ।
রিপস্যাট অধ্যক্ষশূন্য দীর্ঘদিন।অস্থায়ীভাবে সাময়িক দায়িত্বপ্রাপ্ত এক অধ্যাপক ঋষিরাজ ছেত্রী বছরের পর বছর ভার সামলাচ্ছেন।কারণ অধ্যক্ষ নিয়োগের কোনও উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।অথচ এমন নয় যে রাজ্যে অধ্যক্ষ পদের জন্য যোগ্য ব্যক্তির অভাব রয়েছে।সিনিয়রিটির দিক থেকে অনেক পেছনে পড়ে থাকা ঋষিরাজ দত্ত তাই সাময়িক দায়িত্বকে নিজের ইচ্ছামতো কাজে লাগিয়ে চলেছে।এই অভিযোগ হাওয়ার ওপর ভিত্তি করে নয়।সম্প্রতি তার কিছু কাজকর্ম রিপস্যাটের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বভারতীয় যে নীতিনির্দেশিকা রয়েছে পুরোপুরি তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ফার্মাসি পরীক্ষার জন্য একটি নিয়মমাফিক পরীক্ষণ বোর্ড গঠন করেছেন অধ্যক্ষ।এই বোর্ডে তিনি নিজেই চেয়ারম্যান।মেম্বার সেক্রেটারি হয়েছেন তার পছন্দের এক কর্মচারী বিপ্লব দে।বাকি সদস্য পদগুলিতে রয়েছেন অন্যান্য ফার্মাসি কলেজের অধ্যক্ষরা।অর্থাৎ কলেজগুলির পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়ম দূর করতে অধ্যক্ষরাই দায় নিলেন।মানে কোর্স কন্ডাক্ট অথরিটি আর এঞ্জামিনিং অথরিটি একই ব্যক্তি।এই ঘটনা ভূ-ভারতে নেই।আরও চমকপ্রদ ঘটনা হলো,এই বোর্ডের অফিসটি রিপস্যাটের অধ্যক্ষের ঘরেই ঠিকানা নিয়েছে।অর্থাৎ কোনও ফার্মাসি কলেজের নামে যদি পরীক্ষায় গণ টোকাটুকির অভিযোগ আসে তাহলে সেই অভিযোগের তদন্ত করবেন সেই কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই।
এহেন ঘটনা ফার্মাসি শিক্ষণের ইতিহাসে এই দেশে বিরল।দেশে ফার্মাসি বিদ্যা যে আইনের দ্বারা পরিচালিত হয় সেটি হলো, ১৯৪৮ সালের ফার্মাসি অ্যাক্ট।এই আইনের ১২ এর ১ এবং ২ উপধারায় শিক্ষা সংস্থান ও পরীক্ষা সংস্থানকে পৃথক করা হয়েছে। দুইটিতেই পিসিআই বা ফার্মাসি কাউন্সিল অফ ইণ্ডিয়ার অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। রিপস্যাটের অধ্যক্ষ যে ধরনের অনৈতিক ও বেআইনি বোর্ড বানিয়েছেন সেইগুলিতে পিসিআই যে অনুমোদন দেবে না তা তারা ভালোই জানা, তাই পিসিআইয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়াও হয়নি।
সম্প্রতি ইউপিএসসি এবং নিট এর প্রশ্নপত্র ফাঁস ইস্যুতে সারা দেশে তোলপাড় ঘটে যায়।কিন্তু এরপরেও রাজ্য প্রশাসনের আমলারা কীভাবে ফার্মাসি শিক্ষায় এই ধরনের অনৈতিক কাজ চলতে দেয় তা বুঝা যায় না। জানা যায় পছন্দের ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রি পেতে যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয় সেই জন্যই বাণিজ্যবান্ধব এই রকম একটি ব্যবস্থা তৈরি করে রাখা হয়েছে রিপস্যাটে। শুধু বোর্ড গঠনই নয়, রিপস্যাটে স্নাতকোত্তর শিক্ষার ক্ষেত্রেও অনিয়ম সীমাহীন চেহারা নিয়েছে।
পিসিআইয়ের ২০১৪ সালের রেগুলেশন অনুযায়ী পোস্ট গ্রাজুয়েট ফার্মাসি শিক্ষক তারাই হবেন যারা পিসিআই স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে এম ফার্ম, ফার্ম ডি পাসের পর পাঁচ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বা পিএইচডি করার পর তিন বছরের শিক্ষকতা করেছেন। রিপস্যাটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেই আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়েছে এবং গত ১৯ জুলাই একটি নোটিশ (No.F3(2) Routine/RIPSAT/H&FW/2021(L)/3516-22) জারি করে নিজেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিউটিক্সের ছাত্রছাত্রীদের সুপারভাইজর নিযুক্ত করেছেন।একজন আয়ুর্বেদ শিক্ষিকা ডা. সাগরিকা দাশগুপ্তকে নিযুক্ত করেছেন জয়েন্ট সুপারভাইসর।যদিও পিসিআই অনুমোদিত কোর্সে সঙ্গে আয়ুর্বেদ সঙ্গতিহীন বিষয়।
২০১৪ সালের রেগুলেশনে বলা আছে কোনও শিক্ষক যদি রেগুলেশন উল্লঙ্ঘন করে তাহলে পিসিআই অনুমোদিত কোনও শিক্ষাঙ্গণে তিন বছর অবধি শিক্ষকতা করা থেকে বিরত করে রাখা হবে।এরপরেও রিপস্যাটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একের পর এক নিয়ম উল্লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন। আবার প্রশাসনের কিছু আমলাও সংবিধান বহির্ভূত ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে ঘুঁটি সাজিয়ে চলেছেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.