প্রোমো ফেস্ট ইস্যুতে মানিকের বক্তব্যের চ্যালেঞ্জ জানালেন সুশান্ত।।

 প্রোমো ফেস্ট ইস্যুতে মানিকের বক্তব্যের চ্যালেঞ্জ জানালেন সুশান্ত।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-পর্যটনের নামে বিগত দিনে আক্ষরিক অর্থে তেমন কিছুই করা হয়নি। যেটুকু হয়েছে তা কার্যত ২০১৮ সালের পর। শুক্রবার রাজধানী আগরতলায় দলীয় এক কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সুযোগ বুঝেই রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রকে গালমন্দ করতে ছাড়েননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। এমনকী প্রোমো ফেস্টের নামে সম্প্রতি সাত কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে বলেও তার তুলোধুনো থেকে বাদ যায়নি রাজ্যের পর্যটন দপ্তর। পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এরই প্রসঙ্গ টেনে শনিবার বুঝিয়ে দিলেন যে কেন তার দপ্তর এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করলো কিংবা কী-ইবা খরচ হলো এই অনুষ্ঠানে। একই সাথে দীর্ঘ বাম শাসনের পঁচিশ বছরের সাথে এ দিন তুলনা টেনে তিনি বুঝিয়ে দিলেন যে বর্তমান সরকার কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রকে।
ত্রিপুরা টুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের উদ্যোগে এ দিন গীতাঞ্জলি গেস্ট হাউস থেকে পর্যটনমন্ত্রীর স্পষ্ট জবাব, কোনও অবস্থাতেই সাত কোটি টাকা খরচ করা হয়নি প্রোমো ফেস্ট-এর ওই অনুষ্ঠানে। সর্বাধিক দেড় কোটি টাকা খরচ হয়ে থাকতে পারে বলে তার অনুমান। তবে সবটাই বলবে অডিট। যে টাকা খরচ করা হয়েছে তাও যে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকেই খরচ করা হয়েছে, তাও এ দিন জানিয়ে দেন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে মন্ত্রী জানান মানুষকে বন্ধা বানিয়ে রাখতে এবং গোয়েবলসের কায়দায় রাজনীতি করতে গিয়েই দীর্ঘ পঁচিশ বছরেও কার্যক্ষেত্রে উন্নয়ন করা হয়নি রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রকে। এদিক থেকে কমবয়সি সরকারের উন্নয়ন দেখে একপ্রকার হিংসা থেকেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এই সমালোচনা বলে মনে করেন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। তার কথায়, রাজ্যবাসী বরিষ্ঠ এই নেতার কাছ থেকে অন্তত এমনটা আশা করেন না। আমরাও তার এমন মন্তব্যে তীব্র নিন্দা এবং আপত্তি জানাই।
মন্ত্রী বলেন,প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রোমো ফেস্টের নামে চৌদ্দ ডিসেম্বর কী হয়েছে না হয়েছে তার বিস্তারিত কিছুই জানেন না, অথচ সাত কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে এটা আবার স্পষ্ট করেই বলে দিলেন তিনি। বিষয়টিকে প্রকৃত অর্থে মানুষকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছুই মনে করলেন না পর্যটনমন্ত্রী। একটি তথ্য তুলে ধরে তিনি বললেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সালে নয়া সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এ রাজ্যে দেশীয় পর্যটকের সংখ্যা ছিলো ১৮,৬৯৩৭৬ জন। বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১,৭৯,৪০৪ জন এবং সবমিলিয়ে পর্যটকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিলো ২০,৪৮,৭৮০ জন। এদিক থেকে রাজস্ব আদায় হয় সর্বমোট ১৫, ৫২, ৩১,০০০ টাকা। বর্তমান সরকারের সাথে তুলনা টেনে তিনি বললেন, মাঝখানে দু’বছরের কোভিড চলাকালীন সময়কালকে বাদ দিলেও এ পর্যন্ত দেশীয় পর্যটকের সংখ্যা দাঁড়ায় ২১,৯০, ৩৬২ জন।তাছাড়াও বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ৪,২৯, ৮২৮ জন। সব মিলিয়ে রাজ্যে পর্যটক আসে ২৬, ২০,১৯০ জন। রাজস্ব আদায় হয় ৩১, ২৫,২৩,০০০ টাকা। মন্ত্রী বলেন, আগে দীর্ঘ বাম আমলে পর্যটনের উন্নয়নে সর্বসাকুল্যে খরচ করা হয়েছে ৮২ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা। আর এখন ডবল ইঞ্জিনের সরকার রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে নানা প্রকল্প মোতায়েন করেছে। এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে পর্যটনের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পে মোট ৫২৯ কোটি টাকার কাজ চলছে। তিনি বলেন, আগে উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, আখাউড়া চেকপোস্ট, সিপাহিজলা, নীরমহল, তীর্থমুখ, আমবাসা, বড়মুড়ায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে সামান্য খরচ করা হয়। এর এখন উনকোটিতে স্বদেশ দর্শনে খরচ করা হয়েছে প্রায় ৪৪ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। প্রাসাদ প্রকল্পে মাতাবাড়িতে খরচ করা হচ্ছে ৩৭ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও এডিবি প্রকল্পে ১৮০ কোটি টাকা, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে আরও প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। তার কথায়, স্বদেশ দর্শন টু প্রকল্পে আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে আরও প্রায় ১৪০ কোটি টাকা পেতে চলেছে রাজ্য। তিনি বলেন, আইকনিক প্রজেক্টে মাতাবাড়ির বিনদোয়ারে মায়ের ৫১ পীঠ তৈরির কাজে আরও প্রায় ৯৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা ইতিমধ্যেই প্রদান করেছে কেন্দ্র। পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এ দিন বলেন, পর্যটন মানেই একটি উন্নয়ন ক্ষেত্র। একে শক্তিশালী করা গেলে স্থানীয়রা যেমন উপকৃত হবে, তেমনি উপকৃত হবে রাজ্য তথা দেশও। প্রোমো ফেস্ট করতে গিয়ে গত তেসরা ডিসেম্বর ডম্বুরে এই অনুষ্ঠানের সূচনালগ্ন থেকে পরবর্তী সময়ে নীরমহল এবং এগারো ডিসেম্বর জম্পুইয়ে স্থানীয়রা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন তাতে আগামীদিনে রাজ্যের পর্যটন দপ্তর এই প্রোমো ফেস্টকে আরও বৃহৎ আকারে করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোবে বলেও এদিন জানিয়ে দেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও যখন রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রকে দেশ তথা বহির্বিশ্বে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি তখন সমালোচনা ছাড়া তাদের কাছ থেকে আর কিছুই আশা করা যেতে পারে না। মন্ত্রী বললেন, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিতেই এ ধরনের অপপ্রয়াস।আর তাদের দলেরই বিধায়করা আমাকে ফোন করে আত্মীয়পরিজনদের জন্য পাস চাইছিলেন চৌদ্দ ডিসেম্বরের সমাপ্তি সূচক রাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.