দিল্লী ভোট!!
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরের ১০ জানুয়ারীর মধ্যে দিল্লী বিধানসভা ভোটের দিন তারিখ ঘোষণা করতোবার মেধা দিলী কমিশন।সব মহল থেকে এমনই আশা করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এই ভোটকে কেন্দ্র করে রাজধানী দিল্লীর রাজনৈতিক উত্তাপ কনকনে ঠাণ্ডাকেও হার মানিয়ে দিয়েছে।এমনিতেই দেশের জাতীয় রাজনীতির আঙুর ঘর হচ্ছে দিল্লী।ফলে দিল্লীর বিধানসভা ভোটকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে বাড়তি উত্তাপ ও উন্মাদনা থাকবে,এটাই স্বাভাবিক। বলতে গেলে গোটা দেশের নজর এখন দিল্লীর ভোটে। পাঁচ বছর আগে সত্তর আসন বিশিষ্ট দিল্লী বিধানসভার ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী। ভোট গণনা হয়েছিল ১১ ফেব্রুয়ারী।নির্বাচন কমিশন ভোটের সূচি ঘোষণা করেছিল ৬ জানুয়ারী। কারনেই ধারণা করা হচ্ছে নতুন বছরের ১০ জানুয়ারীর মধ্যে দিল্লী বিধানসভা ভোটের সূচি ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।জানা গেছে, আগামী ৬ জানুয়ারী দিল্লী ভোটের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে। এককথায় কমিশনের প্রস্তুতি একেবারে চুড়ান্ত পর্যায়ে। ২০২৫-এর ২৩ ফেব্রুয়ারী দিল্লী বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে।ফলে নতুন বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ভোট হবে-এটা এক প্রকার নিশ্চিত। সেই মতোই যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলির তৎপরতাও এখন তুঙ্গে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২৫ দিল্লী বিধানসভার ভোট নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে। প্রথমত, দিল্লীর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ‘সরাব ঘোটালায়’ জেলে যাওয়ার পর বিধানসভা ভোট হচ্ছে। বেশ কিছু শর্তে কেজরিওয়াল জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।এর মধ্যে অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না। সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সেই শর্তেই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছাড়তে হয়েছে। পরিবর্তে যদিও তিনি তাঁর একান্ত অনুগত একজনকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়েছেন। বাইরে থেকে সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছেন কেজরিওয়াল। বলা যায় দিল্লী সরকারের রিমোট কন্ট্রোল তাঁর হাতেই রয়েছে।
দ্বিতীয়ত,বিজেপিবিরোধী (ইন্ডিয়া) জোটের অন্যতম কারিগর হলেন আম আদমি পার্টি নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কিন্তু দিল্লী ভোটের নাগে ইন্ডিয়া জোট থেকে কংগ্রেসকে বহিষ্কার করার দাবি করে বিতর্ক ভিসকে দিয়েছেন। আচমকা তাঁর এই দাবিতে বিরোধী জোটে বড় ধরনের কাটল তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, দিল্লী ভোটের আগে প্ররোধী জোটে এই ফাটল বিজেপিকে মাইলেজ দেবে। গেরুয়া শিবিরও এই অনৈক্যের সুবিধা ঘরে তুলতে তৎপর।
তৃতীয়ত, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ‘ফর্জিওয়াল’ অর্থাৎ জালিয়াত বলে প্রচার চালাচ্ছে কংগ্রেস।দলের পক্ষ থেকে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে গত এক দশকে আপের শাসনে দিল্লী দুর্নীতি এবং অনুন্নয়নের শিকার হয়েছে বলে দাবি করেছে কংগ্রেস। এখানেই শেষ নয়, কেজরিওয়ালের কোনও মতাদর্শ নেই।রাজনৈতিক স্বার্থে বিজেপির ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ, সিএএ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে সমর্থন করেছেন।যে লোকপাল আন্দোলন করে কেজরির রাজনৈতিক উত্থান, সেই জন লোকপাল আপ শাসিত দিল্লীতে এবং পাঞ্জাবে গঠন করা হয়নি।এই অভিযোগ তুলে কংগ্রেস কেজরির বিরুদ্ধে রীতিমতো কামান দাগিয়েছে।ফলে দু’দলের টানাপোড়েন এখন আরও তীব্র হয়েছে।অন্যদিকে গেরুয়া শিবির একপ্রকার নীরবে নিজেদের কাজ করে চলেছে।
গত সাত মাস আগে লোকসভা নির্বাচনে দিল্লীতে জোট বেঁধে লড়েছিল কংগ্রেস এবং আপ।কিন্তু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির সাতটি আসনেই জয়ী হয়েছে বিজেপি।এর পরেই ইন্ডিয়া জোটের দুই সহযোগীর বিচ্ছেদ হয়ে যায়। দিল্লীর পড়শী রাজ্য হরিয়ানায় লোকসভা ভোটে জোট বেঁধে লড়লেও সেপ্টেম্বরে বিধানসভা ভোটে দু’দল আলাদা ভাবে লড়েছিল।অন্য সহযোগীরাও ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব বা মুখ নিয়ে সরব।সব মিলিয়ে ইন্ডিয়া মঞ্চের ভবিষ্যৎ নিয়েই রাজনৈতিক শিবিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে।স্বাভাবিক ভাবেই খুশি গেরুয়া শিবির। সব মিলিয়ে এবার দিল্লী বিধানসভা ভোট যে কেজরিওয়ালের পক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন চ্যালেঞ্জ কতটা মোকাবিলা করতে পারবে? সেটাই এখন দেখার।