সর্ষের মধ্যে ভূত!!
‘সর্ষের মধ্যে ভূত,’এটি একটি প্রচলিত প্রবাদ।এই প্রবাদটির সৃষ্টির ইতিহাস অবশ্য জানা নেই।তবে এটুকু বলা যায়,আদিকাল থেকে এর প্রচলন হয়ে আসছে।এটি প্রবাদ হিসাবে ব্যবহার হলেও,এই বাক্যটির গভীর তাৎপর্যপূর্ণ অর্থ রয়েছে। অনেকে মনে করেন,আদিকালে ভূতে ধরা বা ভূতের প্রভাব থেকে মানুষকে চিকিৎসার জন্য কবিরাজ, কিংবা ও ঝাঁগন সরিষা ব্যবহার করতেন। যদিও ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে বহু বিতর্ক আছে।আপাতত সেই বিতর্ক দূরে সরিয়ে রেখে মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে,যে সরিষা দিয়ে ভূত তাড়ানো হতো,সেই সরিষার মধ্যে যদি কোনও ত্রুটি থাকে,তাহলে ভূত তাড়ানো যেত না।সম্ভবত এইভাবে কথাটির উৎপত্তি হয়েছে।
কথাটি প্রবাদ হিসাবে ব্যবহার হলেও, বর্তমান সমাজ জীবনে কথাটির গুরুত্ব এবং গভীরতা অপরিসীম। যেমন,মানুষ ওষুধ ব্যবহার করে রোগ সারাতে বা রোগ প্রতিরোধ করতে।কিন্তু ওই ওষুধে যদি ভেজাল থাকে তাহলে রোগ সরবে কি করে? বরং ওই ভেজাল ওষুধ রোগ না সরিয়ে উল্টো মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ ওই সরিষার মতো ওষুধের মধ্যেই যদি রোগ ঢুকে যায়, তাহলে রোগ সারাবে কে? এটি একটি উদাহরণ মাত্র। এমন হাজার হাজার উদাহরণ তুলে ধরা যায়।
এই সমাজে আইনের রক্ষক হচ্ছে পুলিশ।কিন্তু সেই পুলিশই যদি আইন ভঙ্গ করে অপরাধ ও অপরাধীদের সাথে যুক্ত হয়ে যায়?তাহলে সমাজে অপরাধ কমবে কীভাবে? আইন শৃঙ্খলা রক্ষা হবে কীভাবে?বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে,আইনের রক্ষকরাই নানা অপকর্মে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে।বেআইনি কাজকর্ম থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। বেআইনি রোজগার ও অর্থের সামনে আইনের রক্ষকরা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আদালতের কাজকর্ম নিয়েও জনমনে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে আইনজীবীদের ভূমিকা। দুই পক্ষের আইনজীবীদের তলে তলে একজোট হয়ে যাওয়ার খবরও আকছাড় শোনা যাচ্ছে। অর্থের বিনিময়ে মামলা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা এখন জলভাত।
‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ এখন সর্বত্র। সরকারের একেবারে উপর মহল থেকে শুরু করে নিচে পর্যন্ত। প্রশাসনের শীর্ষ মহল থেকে শুরু করে পঞ্চায়েতস্তর পর্যন্ত। রাজনৈতিক দল, নেতা, মন্ত্রী জনপ্রতিনিধি, সিকি-আধুলি নেতা নেত্রী থেকে শুরু করে বড় মাথা। অফিসের বড়বাবু, মেজবাবু, ছোটবাবু থেকে শুরু চাপরাশি পর্যন্ত। ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ এখন সর্বজনীন। সময়ের নিরিখে এবং বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় প্রবাদটি বাস্তব সত্যে পরিণত হয়েছে। ফলে ভূত তাড়ানো এখন এক প্রকার অসম্ভব বলেই মনে হয়। সর্বত্রই ভেজাল সর্ষ। তাছাড়া এখন ভূত তাড়ানোর মতো এমন ওঝাঁ বা কবিরাজ খুঁজে পাওয়াও মুশকিল। যিনি বা যাঁরা অন্তত আন্তরিকভাবে, ভালো মানের সর্ষে দিয়ে এই মহান কাজটি করার উদ্যোগ নেবেন। উদ্যোগ নিলেও, শেষ পর্যন্ত কতটা করতে পারবেন? আদৌ নেবেন কিনা? তা নিয়েও হাজারটা প্রশ্ন রয়েছে।
সোমবার দৈনিক সংবাদের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘সুশাসনে একই ব্যক্তি দুই দেশের ভোটার, সর্ষেতে ভুত’ শীর্ষক সংবাদটি এবং প্রতিবেদনে উল্লেখিত যাবতীয় তথ্য- সরকার, প্রশাসনের দুর্বলতাকেই প্রকট করে। শুধু তাই নয়,ভেজাল সর্ষের মতো প্রশাসনের অন্দরে বসে থাকা লোকেরাই যে এসব মারাত্মক অন্যায়ও অপরাধের প্রধান কুশীলব, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর সাথে জড়িত রাজনীতির দাদা, দিদিরা।এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও। এরা শুধু এই সমাজের জন্য নয়, রাজ্য এবং দেশের জন্য মারাত্মক। এরা অর্থের বিনিময়ে নিজের পরিবার, সমাজ, দেশ সব কিছুকে বিক্রি করে দিতে পারে।সবথেকে বিস্ময়ের ঘটনা হলো,এসবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেই।ফলে ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ প্রবাদই আমার, আপনার এবং আগামী প্রজন্মের ভবিতব্য।