কেন্দ্রীয় রিপোর্টে প্রকাশ্যে এলো ত্রিপুরার শিক্ষার বেআব্রু চেহারা!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয়
শিক্ষা মন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্ট এও ফুটে উঠলো ত্রিপুরার স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার বে-আব্রু চেহারা। দু-বছর পর এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইউনাইটেড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস শীর্ষক ভারত সরকারের সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টের মাধ্যমেও ত্রিপুরার স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতা প্রকাশ্যে এসেছে। তবে রাজ্য সরকারের কোনও হেলদোল নেই।কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে ২০১৮-১৯ সালে সরকারী স্কুল ছিলো ৪৩০৯টি। যা ২০২৩-২৪ সালে কমে হলো ৪২৩৮টি। এই ৫ বছরে রাজ্যে সরকারী স্কুল কমেছে ৭১টি। ২০১৮-১৯ সালে রাজ্যে সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত স্কুল ছিলো ৪৬টি। ২০২৩-২৪ সালে ৪টি স্কুল কমে হলো ৪২টি। রাজ্যে ২০২৩-২৪ সালে বেসরকারী স্কুল ছিলো ৩৪৩টি। যা বর্তমানে ৫২টি স্কুল বেড়ে হয়েছে। ৩৯৫টি। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য মোতাবেক রাজ্যে সরকারী স্কুল কমছে। বাড়ছে বেসরকারী স্কুল।ভারত সরকারের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে ২০১৮-১৯ সালে’ সরকারী স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন ৩৮৯৮৬ জন। অবাক করার বিষয় হলো ২০২৩-২৪ সালে তা কমে দাঁড়ালো ২৮৭১০ জন। মাত্র পাঁচ বছরে রাজ্যের সরকারী স্কুলে শিক্ষক কমেছে ৯২৪৮ জন। তবে আবার নিয়োগ বন্ধ। এমনকি সরকারী অনুদান প্রাপ্ত স্কুলেও গত পাঁচ বছরে শিক্ষক শিক্ষিকা কমেছে ১৫০ জন।
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের রিপোর্টে পাঠরত ছাত্রছাত্রী সংখ্যা নিয়েওরাজ্যের হতশ্রী চেহারা প্রকাশ্যে এসেছে।
এই রিপোর্ট মোতাবেক রাজ্যে গত পাঁচ বছরে সরকারী স্কুলে ছাত্র কমেছে প্রায় ৬৫ হাজার জন। ২০১৮-১৯ সালে রাজ্যে সরকারী স্কুলে ছাত্রছাত্রী ছিলেন ৫ লক্ষ ৭১ হাজার ৮৬৮ জন। যা ২০২৩-২৪ সালে কমে দাঁড়ালো ৫ লক্ষ ৮ হাজার ৩৬ জন। এই পাঁচ বছরে সরকারী স্কুলে ছাত্র কমেছে ৬৩,৮৩২ জন। এই পাঁচ বছরে সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলে ছাত্র কমেছে প্রায় ১ হাজার ৫৩৭ জন। অথচ এই পাঁচ বছরে রাজ্যের বেসরকারী স্কুলে ছাত্র সংখ্যা বেড়েছে ১৭০৯৬ জন। তবে সহজেই অনুমেয় রাজ্যের সরকারী স্কুলে পঠন-পাঠনের ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। ফলে সরকারী স্কুলে ছাত্র কমছে। বেসরকারী স্কুলে ছাত্র বাড়ছে।
ভারত সরকারের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে প্রত্যেক বছর তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী ১.৮ শতাংশ, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ৪.১ শতাংশ, নবম থেকে দশম শ্রেণী ৮.৯ শতাংশ এবং একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী ১২.১ শতাংশ হারে ড্রপ- আউট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। রাজ্যের ৪,২৩৮টি সরকারী স্কুলের মধ্যে প্রায় ২৪ শতাংশ স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ১৪ শতাংশ স্কুলে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। ২৭ শতাংশ সরকারী স্কুলে ছাত্রীদের এবং ৩৮ শতাংশ স্কুলে ছাত্রদের জন্যে শৌচাগার নেই। রাজ্যের ৪৮ শতাংশ সরকারী স্কুলে কম্পিউটার এবং ৬০ শতাংশ স্কুলে ইন্টারনেট নেই। আর ৪২৩৮টি সরকারী স্কুলের মধ্যে মাত্র ২৮৮টি স্কুলে সায়েন্স ল্যাব রয়েছে। রাজ্যের মাত্র ২.৬ শতাংশ স্কুলে ডিজিটাল লাইব্রেরি রয়েছে। তবে ৬৮ শতাংশ স্কুলে আবার কোনও গ্রন্থাগার নেই। এটাই হলো রাজ্যের স্কুল- শিক্ষার ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকার রিপোর্টে আরও বলেছে, রাজ্যের ৩১১টি স্কুল চলছে ১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মাধ্যমে। আবার ১০টি স্কুলে ছাত্র সংখ্যা শূন্য।
এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসএফআই-র রাজ্য সম্পাদক সন্দীপন দেব আরও বলেন, রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা খোদ প্রকাশ করে দিলো ভারত সরকার। তার অভিযোগ, রাজ্য সরকার ত্রিপুরায় সরকারী স্কুল ব্যবস্থাকে বন্ধ করার জন্যই এসব করছে। যা এখন প্রমাণিত। এর প্রতিবাদে আগামী ২০ জানুয়ারী রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে এসএফআই, টিএসইউ।