জিবি, আইজিএমে ওষুধ সঙ্কটে রোগীরা চরম বিপাকে!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য
সরকার হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় রোগীর দুর্ভোগ কমাতে সচেষ্ট হয়েছে বলে সবসময়ই মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ ও স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা বক্তব্যে তুলে ধরছেন।কিন্তু তাদের বক্তব্যের সঙ্গে রাজ্যের হাসপাতালগুলির বাস্তব চিত্র ভিন্ন।সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেও রোগীরা হাসপাতাল থেকে প্রেসক্রিপশনের আশি-পঁচাশি ভাগই ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সামগ্রী বিনামূল্যে পাচ্ছেন না।ওষুধের দোকান থেকে রোগীর জন্য ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সামগ্রী কিনে আনতে হচ্ছে।এমনটাই প্রতিদিন সরকারী হাসপাতালে গিয়ে রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের অভিজ্ঞতা হচ্ছে বলে রোগীর ও রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ।ফলে সরকারী হাসপাতালে অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়ে প্রেসক্রিপশনের আশি-পঁচাশি ভাগ, কোন প্রেসক্রিপশনে নব্বই-পঁচানব্বই ভাগ ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সামগ্রী দোকান থেকে কিনে আনতে গিয়ে রোগী ও রোগীর আত্মীয়রা প্রচণ্ড বিপাকে পড়ছেন। রাজ্যের অন্যান্য সরকারী হাসপাতালের কথা এখানে না উল্লেখ করলেও রাজ্যের প্রধান দুই সরকারী হাসপাতাল জিবি এবং আইজিএমে তাতে চরম দশা কায়েম হয়েছে। রাজ্যের প্রধান দুটি হাসপাতালেও যখন চিসিৎসকের লেখা প্রেসক্রিপশনের ৮০-৮৫ ভাগ, কোনও প্রেসক্রিপশনের ৯০-৯৫ ভাগ ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সামগ্রী হাসপাতাল থেকে রোগীকে দেওয়া হচ্ছে না সেক্ষেত্রে রাজ্যের অন্যান্য হাসপাতালগুলিরও কী দশা চলছে তা সহজেই অনুমেয়। তারপরও সরকারী হাসপাতালে এনে রোগীকে সুস্থ করে তুলতে রোগীর আত্মীয়রা বহু কষ্টে টাকা পয়সা জোগাড় করে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সামগ্রী দোকান থেকে কিনে আনছেন। রাজ্যের প্রধান হাসপাতাল জিবি এবং আইজিএমের চিকিৎসা ব্যবস্থার এই হাল কেন পরিবর্তন করা হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জিবি হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীন দুটি ওষুধের ফার্মেসির দোকান রয়েছে।হাসপাতালে ফার্মেসি চালুর সময় দরপত্রের শর্তে উল্লেখ রয়েছে সব ধরনের ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সামগ্রী রাখতে হবে, সব আইটেমের মূল্যের উপর তেত্রিশ শতাংশ টাকা ছাড় দিতে হবে ইত্যাদি। জিবির রোগী কল্যাণ সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীন বহি:রাজ্যের একটি সংস্থাকে দিয়ে হাসপাতালে দুটি ফার্মেসি চালু রাখা হলেও ফার্মেসি দুটিতে কেন রোগীরা প্রতিদিন তেত্রিশ শতাংশ টাকা ছাড়যুক্ত সব ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী পাচ্ছেন না তা নিয়ে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি রহস্যজনকভাবেই নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ।হাসপাতালের দুই ফার্মেসিতে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের ৭০-৭৫ ভাগ, কোনও কোনও প্রেসক্রিপশনের কোনও ওষুধই মিলছে না বলে নিত্যদিন রোগীর এই অভিযোগ। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নিয়ে রোগীর আত্মীয়কে দিনরাত সব সময় জিবি বাজারে গিয়ে ওষুধের দোকান থেকে চড়া মূল্যে ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে। আরও বিস্ময় ও পরিতাপের ব্যাপার হলো, আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা ও মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার (আয়ুষ্মান কার্ড) কার্ড নিয়ে গিয়েও রোগী ও আত্মীয়রা হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির দুটি ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশনের ৭০-৭৫ ভাগ আবার কোনও কোনও প্রেসক্রিপশনের কোনও ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সামগ্রীই পাচ্ছেন না।এই অভিযোগ সবসময়ই ক্ষুব্ধ রোগীরা সংবাদ মাধ্যমের কাছে করছেন।বিপিএল, প্রায়োরিটি গ্রুপ অংশের রোগীরাও নিত্যদিন একই অভিযোগ করছেন।ফলে ভারত সরকার ও রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিমার আয়ুষ্মান কার্ড এবং বিপিএল কার্ড থাকা সত্ত্বেও রোগীর জন্য প্রেসক্রিপশনের সত্তর-পঁচাত্তর ভাগ কোনও ক্ষেত্রে পুরো ওষুধপত্র,চিকিৎসা সামগ্রী হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির ফার্মেসি থেকে না পেয়ে পকেটের বিপুল টাকা খরচ করে কিনে আনতে হচ্ছে। বিশেষ করে গরিব অংশের রোগীরা তাতে পড়েছেন মহাসঙ্কটে ও অবর্ণনীয় দুর্ভোগে। রোগী কল্যাণ সমিতি দূরের কথা, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য দপ্তরের এই বিষয়টি দেখার ব্যর্থতার কারণে রোগীরা নিত্যদিন এই বিপাকে পড়ছেন। জিবি হাসপাতালের মেডিকেল সুপার ডা. শংকর চক্রবর্তীকে শনিবার রাতে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সরকারী কাজে এখন বহি:রাজ্যে আছেন। তারপর তিনি জানান, রোগী কল্যাণ সমিতির হাসপাতালের দুটি ফার্মেসি থেকে কোনও রোগী যদি ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সামগ্রীর আইটেমের মূল্যের উপর তেত্রিশ শতাংশ ছাড় না পান ও ফার্মেসিতে গিয়ে প্রেসক্রিপশনের ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সামগ্রী না পান তাহলে হাসপাতাল সুপারের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারেন। তাহলে ফার্মেসির বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হাসপাতাল সুপার ডা. চক্রবর্তী জানান।
এদিকে, আইজিএম হাসপাতালেও রোগীরা হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সামগ্রী পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ। সেখানে রোগী কল্যাণ সমিতির তরফে কম মূল্যে ওষুধপত্র নেওয়ার কোনও ফার্মেসিও নেই।জিবির মতোই সস্তা ওষুধের জন্য জেনেরিক মেডিসিন কাউন্টারেও সিংহভাগ ওষুধ মিলছে না।