প্রতিবেশীর সম্পর্ক।।

 প্রতিবেশীর সম্পর্ক।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক বদলায়নি। তবে। দুই দেশের মধ্যেকার কূটনৈতিক আদানপ্রদান কমিয়াছে। ফলে দুই দেশের মধ্যেকার প্রস্তাবিত সামরিক যৌথ মহড়া বন্ধ আছে। ইহা কবে হইবে তা এখন অনিশ্চিত। সম্প্রতি ভারতের সেনা প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক লইয়া যাহা বলিলেন তাহাতে এই কথাই প্রতিপন্ন হয়। তবে তিনি আরও বলিয়াছেন, বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার আসিলে দুই দেশের সম্পর্ক আগের অবস্থায় চলিয়া আসিবে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের পর গত আগষ্ট হইতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসন চালাইতেছে।এই সরকার দেশে নির্বাচনি আইন সহ নানান প্রথার সংস্কার করিয়া দিয়া নির্বাচন ঘোষণা করিবে এবং দেশে কোনও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন হইবে। আগষ্ট হইতে পাঁচ মাস অতিক্রান্ত। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন সংস্কারে একাধিক কমিটি, কমিশন গঠন করিয়াছে। তাহারা কাজ করিতেছেন। কিন্তু কবে নাগাদ এই সকল কাজকর্ম শেষ হইবে ইহা অনিশ্চিত।
ফলে রাজনৈতিক দলে অস্বস্তি দেখা দিয়াছে। প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর তাহার আওয়ামী লীগের নেতা নেতৃত্ব হয় গা ঢাকা দিয়া রহিয়াছেন, নয় কারান্তরালে রহিয়াছেন। এই দলের সকল নেতানেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করিয়াছে অন্তর্বর্তী সরকার, যুব লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হইয়াছে। আওয়ামী নেতাদের খুঁজিয়া খুঁজিয়া জেলে পোরা হইতেছে গণহত্যা বা ষড়যন্ত্র মামলায়। ফলে রাজনীতির ময়দানে সেই দেশের বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগ আজ অনুপস্থিত। কর্মীরা পথে মহল্লায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হইতেছে। তাহারা কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করিতে পারিতেছে না। এক কথায় রাজনীতির অঙ্গনে একা হইয়া গিয়াছে বিএনপি। রাজনীতির দল বলিতে আর যাহারা অবশিষ্ট রহিয়াছে তাহাদের শক্তি সামর্থ্য, সংগঠন একেবারেই ছোট।
অতীতে বিএনপির সঙ্গে গাটছড়া করিয়া বিএনপির আড়ালে থাকিয়া ভোটে লড়িত জামাত দল। তাহারা এখন সংবিধান বহির্ভূত ক্ষমতায় কদাকার বিশালত্ব লাভ করিয়াছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ড. ইউনুসের আগে পিছে তাহারাই ঘিরিয়া থাকে। এই দলের সঙ্গে কথা বলিয়াই সরকারী সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়া থাকে। বলাই বাহুল্য বিএনপির সহিত একদার এই শরিকের এখন স্বার্থের সংঘাত চলিতেছে। ফলে বাংলাদেশে এই সময়ে একমাত্র বিএনপি দলই শীঘ্র নির্বাচনের কথা বলিতেছে। তাহাদের সঙ্গে কোনও দোহারি নাই। এক সময়ের শরিক জামাত সুর মিলাইতেছে না।বরং জামাত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে ইউনুস প্রশাসনের কাজকর্মের প্রতি তাহাদের সমর্থন জানাইয়া যাইতেছে।
আবার এই কথা ঠিক যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যতদিন যাইতেছে প্রশাসনিক অব্যবস্থা বাড়িতেছে। বাড়িতেছে মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য ইত্যাদি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রম অবনতির পাশাপাশি কমিতেছে না সংখ্যালঘু মানুষের উপর নির্যাতনের ঘটনা। শেখ হাসিনার আমলে প্রশাসনের বিভিন্ন শীর্ষপদে বাছিয়া বাছিয়া সংখ্যালঘু অংশের মানুষজনকে বসাইয়া দেওয়া হইয়াছিল, আর এখন বাছিয়া বাছিয়া সংখ্যালঘুদের বাদ দেওয়া হইতেছে, এমন অভিযোগ শোনা যাইতেছে।
ভারতের সহিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হইয়াছে তাহার মূল কারণ শেখ হাসিনা।শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দান ঢাকার বর্তমান শাসকেরা ভালোভাবে নিতে পারিতেছে না। তাহারা চায়
নয়াদিল্লী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করিয়া দেয়। কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীকে ভারত কতদিন রাখিবে বা রাখিবে না এই সংক্রান্ত নির্দিষ্ট আইন ভারতে নাই। যদিও বন্দি প্রত্যর্পণ আইন চালু রহিয়াছে বিশ্বের নানান
দেশের সহিত।এই বিন্দুতে আসিয়াই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক মোচড়
খাইয়াছে। ভারতের পেঁয়াজের পাশাপাশি পাকিস্তানি পেঁয়াজও কিনিতেছে ঢাকা।ঘনঘন ঢাকার পণ্যবাহী জাহাজ সামুদ্রিক বন্দরে নোঙর ফেলিতেছে।
ঢাকার সাংস্কৃতিক দল আসিতেছে, সঙ্গে আসিতেছেন সেই দেশের মন্ত্রীমাল্লা।
এই সকলই নয়াদিল্লীর সহিত সম্পর্কের পিচ্ছিলতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যদিও দিনান্তে ভারতই বাংলাদেশের শেষ পথ। এই কথা ঢাকা সম্যক জানে। আবার ঢাকা যে ভারতের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ইহাও ভুলে নাই নয়াদিল্লী। প্রতিবেশী এই দেশের ভবিষ্যৎ কী হইবে তাহা এই সময়ে অনুমান করা কষ্টকর। তবে সেই দেশের ভবিতব্য সেই দেশের জনগণের হাতে। তাহারাই স্থির করিবেন সেই দেশটির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অস্থিরতার অবসান কত দিনে, কোন্ পথে শেষ হইবে। ভারত এক সুপ্রতিবেশী হিসাবে সেই দিনের অপেক্ষায় থাকিবে।এই সময়ে তাহাদের কাছে একটাই প্রত্যাশা,দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন যেন অচিরেই বন্ধ হয়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.