ঊর্ধ্বমুখী সামগ্রীর দাম, দিশাহীন মানুষ

 ঊর্ধ্বমুখী সামগ্রীর দাম, দিশাহীন মানুষ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সারা রাজ্যের সাথে সাধারণ জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যে দিশাহীন কল্যাণপুরের মানুষ । বাঙালির অভ্যাসই হলো সকালে উঠে চা খাওয়া । কিন্তু তাও সম্ভব হচ্ছে না । চা পাতা কিলো প্রতি এসে দাঁড়িয়েছে ৪০০ টাকায় । চিনি চল্লিশ টাকা প্রতি কিলো ৷ অন্যদিকে গুঁড়ো দুধ চারশ গ্রাম দুশো টাকা । প্যাকেটজাত চা পাতা কোম্পানি টাকাতেও বিকোচ্ছে । বাঙালি সকালে সাধের চা খাবে কী করে । কল্যাণপুর কৃষি প্রধান এলাকা হওয়ার কারণে সবজির দাম সামান্য নাগালের মধ্যে কল্যাণপুরে পাইকারি সবজির হাট বসে বৃহস্পতিবার ও রবিবার । বিএমএস অফিস লাগোয়া নতুন মোটরস্ট্যান্ড এবং ডি ডব্লিউ অফিসের সামনে এই হাট বসে । এখান থেকেই সবজি যায় মোহরছড়া , তেলিয়ামুড়া সহ রাজ্যের নানা জায়গায় । কিন্তু জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি মানুষকে নাজেহাল করে তুলছে ।আগে অনুষ্ঠান বাড়িতে পাঁঠা ছাড়া অন্য কিছু রান্না হতো না । কিন্তু এখন বিয়ের বাড়িই হোক কিংবা অন্য কোনও অনুষ্ঠান বাড়িই হোক পাঁঠার মাংস দেখা নেই । কারণ পাঁঠার দাম কিলো প্রতি ১২০০ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে । মধ্যবিত্তের পক্ষে তা কিনে লোকদের খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে না ।

বনেদি পাঁঠা তাই অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে উধাও বললেই চলে । ভরসা এখন পোল্ট্রির মাংস । তাও ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কিলোর মধ্যে ঘোরাফেরা করে । অনেকেই পোলট্রি পছন্দ করেন না । কিন্তু অনুষ্ঠান বাড়িতে গিয়ে তাদের দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয় । দেশি মুরগিও কম যায় না । দেশি মুরগি তো কিলো প্রতি ৪০০-৪৫০ টাকার নীচে পাওয়া যায় না । পোল্ট্রির চেয়ে খাদ্যরসিকরা দেশি মুরগির প্রতি একটু দুর্বল । কিন্তু ওই যে আগুন দাম ।কল্যাণপুর এখন মিনি শহর হলেও মধ্যবিত্তের সংখ্যা বেশি । উচ্চবিত্ত তেমন নেই । যারা শাসক দলের বিশেষ সুবিধাভোগী তাদের কথা অবশ্য আলাদা । কিন্তু এদের সংখ্যা তো সীমিত । এরা তো কল্যাণপুরের মূল স্রোতের বাসিন্দা নন । কল্যাণপুরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে খোয়াই নদী । বয়স্করা বলেন আগে এই নদীতে বিভিন্ন প্রকার মাছ ছিল । কিন্তু পরিবেশ পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই সুস্বাদু মাছও উধাও । কিছু কুচো মাছ এখন এই নদীতে পাওয়া যায় । আর কালেভদ্রে ওঠে রুই , মৃগেল এসব । খোয়াই নদী থেকে উধাও হয়ে গেছে বোয়াল , চিতল এই সব মাছ । রান্নার গ্যাস , কেরোসিনের দামও দিন দিন বাড়ছে । এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে মধ্যবিত্তের হেঁসেলে ।

একদিকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে । বেরোজগারী বেড়েছে অসম্ভব ভাবে । অন্যদিকে হেঁসেলে টান ।শুকরের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩০০ ৩৫০ টাকা কিলো দরে । পোনা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা দরে । আর ছোট মাছের দাম তো আরও বেশি । কারণ ছোট মাছ খেতে সুস্বাদু । ছোট মাছের দাম ৪০০-৪৫০ টাকা অব্দি ঘোরাফেরা করে । মানুষকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বহিঃরাজ্যের চালানি মাছের উপর নির্ভর করতে হয় । কারণ স্থানীয় মাছ খুব কম ওঠে বাজারে । বহিঃরাজ্যের চালানি মাছের দামও তেমন কম না । ৪০০-৪৫০ টাকা কিলো প্রতি । দুই মাস আগেও ইঞ্জিন তেলের মূল্য ছিল লিটার প্রতি ১৮০ টাকা । এখন সেটা ২০০ টাকার উপরে ।মানুষ এই মূল্যবৃদ্ধিতে বাঁচবে কীভাবে সে প্রশ্ন উঠেছে । গোটা রাজ্যেরই তো একই অবস্থা । সরকার কি এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেন না । আগামী চারটি উপ নির্বাচনে যে এই মূল্যবৃদ্ধির কথা উঠবে তা বলাই বাহুল্য । কল্যাণপুরে ফলের দামও আকাশছোঁয়া । দুটো আনারস বিক্রি হচ্ছে পঞ্চাশ টাকায় । তরমুজ তো নাগালের বাইরে । আমেরও একই অবস্থা । মানুষ যে ডিম ভাত খাবে সেই উপায়ও নেই । দেশি ডিম পঞ্চাশ টাকা হালি । পোল্ট্রির ডিম ত্রিশ টাকা হালি ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.