কুম্ভ ইকনমি
২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা ইভেন্ট প্রয়াগরাজে।মহাকুম্ভে মেতেছে গোটা দেশ।বলা ভালো গোটা বিশ্ব।১৩ জানুয়ারী থেকে শুরু হওয়া মহা ইভেন্ট চলবে২৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।এতদিনের মহাকুম্ভে বলা হচ্ছে,অনুমান প্রায় চল্লিশ লক্ষ পুণ্যার্থী সঙ্গমে পবিত্র স্নান করেছেন। পুণ্য লাভের আশায়। এক বছরের ব্যবধানে উত্তরপ্রদেশে দুটি মেগা ইভেন্টের আয়োজন করা রাজ্য সরকারের পক্ষে চাট্টিখানি কথা নয়।
তবুও হিন্দুত্বের পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথ অযোধ্যা সামলেছেন। এবার তার মহাকুম্ভে সসম্মানে উত্তীর্ণ হওয়া বড়সড় পরীক্ষা।
মহাকুম্ভ ১৪৪ বছর পর প্রয়াগে হচ্ছে। এই প্রজন্ম শুধু নয়, এর পরের প্রজন্মও হয়তো এর সাক্ষী হতে পারবে না। তাই মহাকুম্ভের ডুবকি লাগাতে এখন দেশের একটাই গন্তব্য- প্রয়াগরাজ। ইতোমধ্যেই মকর সংক্রান্তির পুণ্যপ্রভাতে প্রায় ২.৫ কোটি শ্রদ্ধালু মানুষ পুণ্য সঙ্গমে পবিত্র স্নান করেছেন। প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় বাড়ছে। এর জন্য এলাহি ব্যবস্থা গোটা প্রয়াগরাজে। গঙ্গাজল নেবার জ্যারিকেন থেকে ই-রিকশা, অটো, বাস, নৌকা, হিটার, স্নানের পোশাক বদলের জায়গা সব জায়গাই বানানো হয়েছে গোটা প্রয়াগরাজে।
ওই ভূমি শুধু কুম্ভমেলার জন্যই গড়ে ওঠেনি। গঙ্গা, যমুনা, লুপ্তপ্রায় সরস্বতীর সঙ্গম তীরবর্তী প্রায় চার হাজার হেক্টর এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে মেগা ইভেন্টের স্থল। একদিকে সঙ্গম, অন্যদিকে সিভিল লাইনস্।
চার হাজার হেক্টর জুড়ে এলাকায় ৪৫দিন ধরে প্রায় চল্লিশ কোটি মানুষের আনাগোনা হবে। পাঁচ লক্ষ থেকে দেড় কোটি হোর্ডিং, ফ্লেক্স,এলইডি, অডিও ভিস্যুয়েল প্যাকেজের জন্য মোটা টাকা দিতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। সিআইআই বা কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি এবং কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের ইউপি শাখা একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, দেড় মাসের কুম্ভমেলায় অন্তত দুই লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য হতে চলেছে। সুতরাং এটিকে নেহাত কুম্ভমেলাই বলা হচ্ছে, এটি একটি বিজনেস সামিটও।অর্থাৎ একই সাথে ধর্মীয় উৎসব এবং বিজনেস সম্মেলনও।
এই মেলায় শুধু পর্যটকই নয়, নাস্তিক মানুষ, আস্তিক মানুষ, পুণ্যার্থী, দর্শক, ভক্ত, রাজনীতিক, অরাজনীতিক, ধার্মিক, অধার্মিক সব মানুষই মিলেমিশে একাকার হতে চলেছে। শাহি স্নানের দিনে হোটেলের দর উঠেছে দেড় লক্ষ টাকা। বিমান ভাড়ার দর উঠেছে বাইশ হাজার টাকা। গঙ্গা, যমুনার বুকে হাউস বোট তৈরি করা হয়েছে। ভাড়া পঞ্চাশ হাজার, এক লক্ষ টাকা, দেড় লক্ষ টাকা। একেবারে ভিভিআইপি ট্রিটমেন্টে সঙ্গমে স্নান করা যাবে। এবারের মহাকুম্ভে চল্লিশ কোটি মানুষ প্রয়াগরাজে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়ার জনসংখ্যা থেকে বেশি, আমেরিকার জনসংখ্যারও বেশি।
উত্তরপ্রদেশ সরকার এর জন্য বাজেট রেখেছে সাত হাজার কোটি টাকা। ২০১৯ সালে অর্ধকুম্ভ মেলায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিলো। সেবার চব্বিশ কোটি ভক্ত যোগ দিয়েছিলো। এবার ধরা হয়েছে মোটামুটি দুই লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। এর মধ্যে খাবার, জল, জুস, বিস্কুট ইত্যাদি বিক্রি করার ব্যবসা হবে কুড়ি হাজার কোটি টাকার বলে ধারণা। যাতায়াত, থাকা, খাওয়ার যারা ব্যবস্থা করছেন তাদের ধারণা এবার ব্যবসা হবে অন্তত দশ হাজার কোটি টাকার। আয়ুর্বেদ ব্যবসা করতে পারে তিন হাজার কোটি টাকার। ডিজিটাল পেমেন্ট, ওয়াইফাই, মোবাইল চার্জিং স্টেশনের লেনদেনের অঙ্কটা নেহাত কম নয়। তাও হতে পারে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মতো। ধর্ম এবং অর্থনীতির এই মহামেলবন্ধনে শুধু বিদেশ থেকেই আসছেন প্রায় পনেরো লক্ষ মানুষ। হাজার হাজার বছরের বৈদিক রীতিনীতি এবং সংস্কৃতির পীঠভূমি ভারতবর্ষেই বোধহয় তা সম্ভব। বিশ্বের অন্য কোনও প্রান্তে নয়। আপাতত গোটা বিশ্বের ঠিকানা এখন প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ। একে দৈব পিকনিকও বলছেন অনেকেই।আর একে ঘিরেই দেশে এখন ফুলেফেঁপে উঠতে চলেছে কুম্ভ ইকনমি।