ফ্রি-ফ্রি-ফ্রি!
দিল্লী বিধানসভা ভোটকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে যেন প্রতিশ্রুতির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ভোটারদের মন টানতে কোন দল কত বেশি লোভনীয় ‘প্রতিশ্রুতি’ দিয়ে গণদেবতাদের আকৃষ্ট করতে পারে,যেন তারই প্রতিযোগিতা চলছে।কাকে পিছনে ফেলে, কে সামনে এগিয়ে যাবে। রীতিমতো নজিরবিহীন ঘটনা। আর যাদের জন্য এই প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে চলেছে, তারা কিন্তু বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করছেন। এটা যেমন একটা দিক, আবার উল্টো দিকও আছে। এত প্রতিশ্রুতির ঠেলায় সাধারণ ভোটাররা রীতিমতো বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, ভোটাররা কাকে ছেড়ে, কাকে ধরবেন? এই নিয়ে মনস্থির করতে পারছেন না বলে খবরে প্রকাশ। কেন না, সব রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতিই লোভনীয়। শুধু ফ্রি-ফ্রি-ফ্রি আর ফ্রি। বিদ্যুৎ ফ্রি, বাসে যাতায়াত ফ্রি, জল ফ্রি, গ্যাসের সিলিন্ডার ফ্রি, বিভিন্ন পরিষেবায় ভর্তুকি, মহিলাদের মাসিক ভাতা প্রদান সহ আরও একাধিক লোভনীয় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ফলে ভোটারদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে, কোনটা ছাড়বেন আর কোনটা ধরবেন। ভূ-ভারতে এযাবৎকালে ভোটের বাজারে এমন ‘ফ্রি’ এর প্রতিশ্রুতি আর দেখা গেছে কিনা সন্দেহ। তবে এই প্রতিশ্রুতির বন্যার মধ্যে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, দিল্লী ভোটে সব রাজনৈতিক দলেরই লক্ষ্য এক। সেটা হলো মহিলা ভোটব্যাঙ্ক। এই ক্ষেত্রে শুধু দিল্লী ভোট বললে হয়তো ভুল হবে। সাম্প্রতিককালে লোকসভা ভোটই হোক কিংবা বিধানসভা, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সবথেকে বড় টার্গেট হলো মহিলা ভোটব্যাঙ্ক। মহিলাদের মন জয়ে সকলে একেবারে উঠেপড়ে লেগেছে।
দিল্লী ভোটে এবার লড়াই মূলত ত্রিমুখী। বিজেপি-কংগ্রেস এবং আম আদমি, এই তিনটি দলের মধ্যে সরাসরি লড়াই হবে। ফলে ভোট দাতারাও তিনভাগে বিভক্ত। এদের মধ্যে যাদের দল নেই, অর্থাৎ কোনও দলকেই যারা সরাসরি সমর্থন করেন না, তাদের ভোট যে দলের পক্ষে যাবে, তারাই দিল্লীর মসনদ দখল করবে। এই নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। দিল্লী দেশের রাজধানী, স্বাভাবিকভাবেই দিল্লী বিধানসভার ভোটকে কেন্দ্র করে গোটা দেশবাসীর আগ্রহ একটু বেশি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দিল্লী ভোটে প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘ফ্রি’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের বাজারকে যেভাবে চৈত্র মাসের রিডাকশন সেলের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে গোটা দেশব্যাপী জল্পনা শুরু হয়েছে। কেন না, আগামীদিনে অন্য রাজ্যের ভোটেও এর প্রভাব পড়বে। সবকিছু ফ্রি-তে পাওয়া মানুষের অভ্যাসে পরিণত হবে। সবচেয়ে বড় বিপদ নেমে আসবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। ভোটে জয়ী হতে জনগণকে সবকিছু ফ্রি-তে দিতে গিয়ে খালি হবে সরকারের কোষাগার। ভোটে জয়ী হতে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করতে গিয়ে সরকারকে বিরাট অংশের অর্থ ব্যয় করতে হবে ভর্তুকি প্রদানে। কমবে সরকারের আয়, বাড়বে খরচ। সরকারের এই অস্বাস্থ্যকর আর্থিক অবস্থার প্রভাব পড়বে রাজ্যের উন্নয়নে। সরকারের আয়হীন অতিরিক্ত খরচের ভার বহন করতে উন্নয়নের অর্থ কাটছাঁট করতে হবে। এতে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা আরও দুর্বল হবে। এমনটাই অভিমত রাজনৈতিক মহলের।
দিল্লী ভোটে প্রথমে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি, পরে কংগ্রেস এরপর বিজেপি। তিন দলই ইস্তাহার প্রকাশ করে একেবারে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শুক্রবার নির্বাচনি ইস্তাহারের প্রথম ছত্র পেশ করেছে বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা শুক্রবার প্রকাশ করেছেন ‘সংকল্প পত্র’। তাতে দেখা যাচ্ছে, মহিলা ভোট নিজেদের অনুকূলে টানতে আম আদমি পার্টির পর একই পথে হাঁটতে চলেছে পদ্ম শিবিরও। দিল্লীতে বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে চালু করবে ‘মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা।’ মহিলাদের প্রতিমাসে আড়াই হাজার টাকা সাম্মানিক দেওয়া হবে। রয়েছে আরও একাধিক লোভনীয় আর্থিক প্রতিশ্রুতি। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারী এক দফায় দিল্লী বিধানসভার ৭০টি আসনের জন্য ভোট গ্রহণ করা হবে। গণনা হবে ৮ ফেব্রুয়ারী। আর এই ভোটকে কেন্দ্র করে চারদিকে শুধু ফ্রি-ফ্রি আর ফ্রি। এত এত ফ্রি- এর মধ্যে দিল্লীর দেড় কোটি ভোটার শেষ পর্যন্ত কাকে বেছে নেয়? সেটাই এখন দেখার।