বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
দুই কাস্টম অফিসারের বিরুদ্ধে উঠলো দুর্নীতির বড় অভিযোগ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-দুর্নীতি, অবৈধ সীমান্ত পাচার সহ অন্যান্য অবৈধ বাণিজ্য প্রতিরোধ করার দায়িত্ব যাদের কাঁধে ন্যাস্ত, তাদেরই একটা অংশ যদি দুর্নীতি এবং অবৈধ কাজকর্মের সাথে যুক্ত হয়ে যায়, তখন এইসব দুর্নীতি ও অপরাধ প্রতিরোধ করা মুশকিল হয়ে যায়। রাজ্যে এমনই সব ঘটনা ঘটে চলেছে। রাজ্যে কর্মরত একাংশ কাস্টম অফিসারের বিরুদ্ধে বারবারই এই ধরনের অভিযোগ উঠছে। সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনার তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। সাব্রুম মহকুমার অন্তর্গত পোয়াংবাড়ি বাজারের সুমিতা ত্রিপুরা নামে একজন জনজাতি মহিলা ব্যবসায়ী সরাসরি কাস্টমের দুই অফিসারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন কাস্টম কমিশনারের কাছে। শুধু তাই নয়,সুমিতা দেবী তার লিখিত অভিযোগের কপি পাঠিয়েছেন, কাস্টমের চিফ কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার, কাস্টম ডিভিশন আগরতলা,সুপারিনটেনডেন্ট অফ কাস্টম, সাব্রুম, কমান্ডেন্ট ১০৯ নং ব্যাটেলিয়ন বিএসএফ, দক্ষিণ জেলার পুলিশ সুপার, জেলাশাসক সকলকে। সুমিতা দেবী যে দুইজন কাস্টম অফিসারের বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন, তাদের একজন হলেন কাস্টম সুপারিনটেনডেন্ট প্রাণেশ ধর, অন্যজন কাস্টম ইনস্পেক্টর আশীষ ভোভাসারা সুমিতা ত্রিপুরার অভিযোগ, গত ২৪ মে, ২০২৪ ইং রাতে সাব্রুম কাস্টমে কর্মরত ওই দুই অফিসার বিএসএফ এবং পুলিশ নিয়ে পোয়াংবাড়ি বাজারে অভিযান চালায়। অভিযান কালে ৭১৫ বস্তা চিনি উদ্ধার করে। বিএসএফের রিপোর্ট অনুযায়ী পাঁচজন স্থানীয় ব্যবসায়ীর দোকান ও গোডাউনে এইচিনির বস্তাগুলি অবৈধভাবে মজুত করা হয়েছিল বাংলাদেশে পাচারের জন্য।প্রথম অভিযোগ, রাতে কোনও রকম সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া এই অভিযান চালানো হয়েছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দোকান ও গোডাউন থেকে চিনির বস্তা উদ্ধার (বাজেয়াপ্ত) করা হলেও, তাদের সিজার লিস্ট দেওয়া হয়নি। সুমিতা দেবী তার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেছেন যে, তার গোডাউন থেকে ৩৩০ বস্তা চিনি নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে বিএসএফের সিজার লিস্টে ২১০ বস্তা চিনি দেখানো হয়েছে। বাকি ১২০ বস্তা চিনি উধাও!অবাক করার বিষয় হলো, বিএসএফের সিজার লিস্ট অনুযায়ী পাঁচজন ব্যবসায়ীর গোডাউন থেকে অবৈধ মজুত চিনি উদ্ধার করা হলেও, কাউকে আটক করা হয়নি। শুধু তাই নয়, উদ্ধার করা চিনিগুলোকে মালিকানাবিহীন সিজার দেখানো হয়েছে।যা সম্পূর্ণ বেআইনি। বিএসএফের সিজার রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ মে, ২০২৪ ইং চিনি উদ্ধার করা হলেও, অভিযুক্ত কাস্টম অফিসারগণ পাঁচদিন পর কেইস নথিভুক্ত করে। কেইস নম্বর 43/UCL/EXP/Sab-Prev/ 2024/25 dated 29.05.2024। মামলাতেও মালিকানাবিহীন উল্লেখ করা হয় রহস্যজনক কারণে। কাস্টমস আইন মোতাবেক কোনও যৌথ অভিযানে কাস্টমস ও বিএসএফ অফিসাররা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলে কাস্টমস অফিসারদের নেতৃত্ব দিতে হয়। শুধু তাই নয়, সিজার লিস্ট থেকে শুরু করে মামলা নথিভুক্তকরণ সবই কাস্টমস অফিসারদের করতে হয়। এটাই কাস্টমস আইন। কেননা, বিএসএফ অফিসারদের তদন্ত করার ক্ষমতা নেই। কাস্টমস আইনে ১১০(এ) ধরায় আটককৃত মালামাল বন্ড, ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি বা সিকিউরিটি জমা দিয়ে প্রোভিশনাল রিলিজ দেওয়ার নিয়ম আছে। তবে এর জন্য আটককৃত মালের মালিককে আবেদন করতে হয় কেইস নিষ্পত্তির আগে। অভিযোগ, অভিযুক্ত কাস্টম অফিসাররা ব্যবসায়ীদের প্রোভিশনাল রিলিজ-এর আবেদনপত্র গ্রহণ করেননি কোনও এক অজ্ঞাত কারণে। পরে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে তাদের আবেদনপত্র আগরতলা নেতাজী চৌমুহনীস্থিত কাস্টমস হেড অফিসে জমা দেয় ২৯ মে, ২০২৪ ইং। এরপরের ঘটনা আরও মারাত্মক। পরদিন ৩০ মে, ২০২৪ ইং তড়িঘড়ি কোনও রকম নিলামের নোটিশ প্রদান ছাড়াই সমস্ত চিনি নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। অভিযোগ, নিলামে ওই চিনি প্রতি কেজি ৪৫ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। অথচ ভুয়ো নিলাম দেখিয়ে প্রতি কেজি ত্রিশ টাকা করে কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। কাস্টমের দুই অফিসার ঘটনাস্থলে থাকা সত্ত্বেও কাগজপত্রে বিএসএফের কেইস বলে দেখানো হয়েছে। যাতে সমস্ত বদনাম বিএসএফের উপর পড়ে। পুরো ঘটনাটি গত বছরের মে মাসে হলেও, প্রতিকার চেয়ে সুমিতা দেবী বিভিন্ন জায়গায় মাথা ঠুকেছেন। কিন্তু কোনও সুবিচার পাননি। শেষে বাধ্য হয়ে গত বাইশ জানুয়ারী ২০২৫ ইং বিস্তারিত উল্লেখ করে মেলাঘরস্থিত কাস্টমসের উত্তর-পূর্বাঞ্চল রিজনের কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরপরই বিষয়টি প্রকাশে আসে। প্রশ্ন উঠেছে, সর্ষেতেই যদি ভূত ঢুকে থাকে, তাহলে সেই ভূত তাড়াবে কে? অভিযোগ, একাংশ কাস্টমস অফিসার পুরো ডিপার্টমেন্টের সুনাম মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে। এদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে বিভিন্ন মহলের অভিমত।