৭০ লাখ টাকা গায়েবের ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা

 ৭০ লাখ টাকা গায়েবের ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

টিআরপিসির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৭০,৭৪,০৬০ টাকা গায়েব করে নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থার উত্তর জোনের কর্তৃপক্ষ তিন সপ্তাহ আগে এমডিকে জানানোর পরও এই আর্থিক কেলেঙ্কারির কোনও কিনারা এখনও হয়নি । বরং বিভাগীয় তদন্তের নামে সরকারী টাকা গায়েবের কেলেঙ্কারিকে কীভাবে ধামাচাপা দেওয়া যায় সে বিষয়ে টিআরপিসির আগরতলার প্রধান কার্যালয় জোর তৎপরতা চালিয়েছে বলে প্রধান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে । শুধু তাই নয় , অভিযুক্ত ক্যাশিয়ার বিশ্বজিৎ রিয়াংকেও পুলিশ এখনও গ্রেপ্তার করেনি । কুমারঘাট থানায় গত ২১ মে সংস্থার উত্তর জোনের ডেপুটি ম্যানেজার ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন । অভিযোগ উঠেছে , পুলিশ রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত ক্যাশিয়ারকে গ্রেপ্তার করছে না । ফলে সরকারের কোষাগার থেকে ৭০,৭৪,০৬০ টাকা গায়েব করে নেওয়া হলেও আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনার এতদিন পরও তার কোনও কিনারা না করেছে টিআরপিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ , না করেছে পুলিশ ।

তাতে টিআরপিসির কর্মচারী ও বিভিন্ন মহল তদন্ত নিয়ে নানা সংশয় প্রকাশ করছে । এ বিষয়ে বিভাগীয় মন্ত্রী রামপদ জমাতিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । গত ১৮ মে উত্তর জোনের ডেপুটি ম্যানেজার আর কে ত্রিপুরা আগরতলার গোর্খাবভিস্থিত টিআরপিসির এমডি বুধি দেববর্মার কাছে চিঠিতে এই বিস্তারিত জানান । তিনি চিঠিতে জানান , সংস্থার কুমারঘাট ও পাবিয়াছড়ার গ্রামীণ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩০-৭-২১ থেকে ১৭-৩ ২২ ইং পর্যন্ত ডেপুটি ম্যানেজার তথা ডিডিওর স্বাক্ষর নকল করে চেকে ২১ বার এই বড় অঙ্কের টাকা তুলে নিয়ে গেছেন ক্যাশিয়ার বিশ্বজিৎ রিয়াং । দীর্ঘদিন ধরে অফিসেও আসছেন না ক্যাশিয়ার । এই চিঠি পেয়ে তারপর দিন এমডি ক্যাশিয়ারকে চাকরিতে সাময়িক বরখাস্ত করেন । আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তের জন্য এমডি চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন । প্রধান কার্যালয়ের ডেপুটি ম্যানেজার অভিজিৎ দে – কে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন ।

গত ২৫ মে তদন্ত কমিটি কুমারঘাটে উত্তর জোন অফিসে যায় তদন্তের জন্য । দুদিন পর তদন্ত শেষ করে কমিটি ফিরে আসে । তারপর অনেক বিলম্ব করে গত ৮ জুন তদন্ত কমিটি তদন্তের রিপোর্ট পেশ করেন এমডি বুধি দেববর্মার কাছে । কিন্তু এমডি তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেয়ে পরে সেই রিপোর্ট আবার তদন্ত কমিটির কাছে ফেরত দেন । রহস্যজনক ব্যাপার হলো , এমডি তদন্ত রিপোর্ট পড়ে খুশি হতে পারেননি । সংস্থার সূত্রে জানা গেছে , এই তদন্ত রিপোর্ট মোতাবেক আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে অনেকেই জালে উঠবে । তদন্ত রিপোর্ট হাল্কাভাবে ও অনেকটা দায়সারা গোছের তৈরি করার জন্য বলা হয় বলে অভিযোগ । এদিকে প্রশ্ন উঠেছে , উত্তর জোন অফিস থেকে প্রতি মাসে একবার করে আগরতলা প্রধান কার্যালয়ে অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট সে সময় পাঠানো হলেও এত বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির পরও কীভাবে মাসের পর মাস প্রধান কার্যালয় থেকে হিসাবে ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয় ?

আরও অভিযোগ , এই ঘটনার সঙ্গে উত্তর জোনের সেকশন ইনচার্জ আশিস দেববর্মা , অ্যাকাউন্টেন্ট ও ডেপুটি ম্যানেজারের নামও উঠে আসছে । ক্যাশিয়ারকে এই দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সেকশন ইনচার্জ আশিস দেববর্মাই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন । শ্রীদেববর্মা আগে বামপন্থী কর্মচারী সংগঠনের বড় মাপের নেতা ছিলেন । নতুন সরকার এসে তাকে দামছড়ায় বদলি করা হয় । সেখান থেকে সংস্থার চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়াই উত্তর জোন অফিসে এনে তাকে সেকশন ইনচার্জ করে দেন ডেপুটি ম্যানেজার বলেও অভিযোগ । জানা গেছে , আর্থিক কেলেঙ্কারি চক্রের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণেই এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । তাতে সংস্থায় ক্ষোভ বাড়ছে কর্মচারী মহলে । কুমারঘাট থানাও হাত – পা গুটিয়ে বসে রয়েছে । ক্যাশিয়ার বিশ্বজিৎ রিয়াংয়ের বাড়ি শান্তিরবাজার এলাকায় । সেখানে প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও পুলিশ কেন তাকে গ্রেপ্তার করছে না তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে । তার এক নিকটাত্মীয় পুলিশ অফিসার বলে গ্রেপ্তারে উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.