মধ্যপ্রাচ্যের কাহিনী।।

 মধ্যপ্রাচ্যের কাহিনী।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে বিশ্ববাসীর কৌতুহল ছিল বিশ্বের নানা প্রান্তে সংঘাত,যুদ্ধের অবসানে মার্কিন দেশ আগামীদিনে কি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটে তা দেখার।নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হইয়া প্রত্যাশিতভাবে মধ্যপ্রাচ্যের ইজরায়েল ফিলিস্তাইনি লড়াই লইয়া ইজরায়েলের পক্ষ লইয়াছেন প্রকারান্তরে। দেখা গেল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যালেস্তাইনি এলাকা গাজাকে একটা ‘বড় আবাসন এলাকা’ ছাড়া আর কিছুই ভাবিতে চান না। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর আবার নতুন করিয়া ইজরায়েলি হামলা শুরু হইয়াছে ফিলিস্তিনি এলাকায়।পরিস্থিতি এমন যে ফিলিস্তিনি এলাকায় ইজরায়েলি হামলাগুলির বিপক্ষে কেহই কথা বলিতেছে না। রাষ্ট্রপুঞ্জ স্বর উচ্চকিত করিলেও সেই স্বর চার দেওয়ালের বাহিরে কোন দ্যোতনা তৈরি করিতে পারিতেছে না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের সকল সীমা যে অতিক্রান্ত সেই কথা বারবার বলিতেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিন্তু তাহাতে কাহারও কিছু আসে যায় না বলিয়া মনে হইতেছে। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি লইয়া কথাবার্তা শুরু হইয়াছে সৌদি মুলুকেও।কোন রকম আলাপ আলোচনা ছাড়া যে প্রকারে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য লইয়া নিদান দিতেছেন তাহাতে অখুশী সৌদি আরব।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনি হামলা লইয়া সৌদি আরবকে ইতিপূর্বে বিশেষ কিছু বলিতে শোনা যায় নাই। সম্প্রতি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজিয়াম নেতানিয়াহু বলিয়াছিলেন, সৌদি আরবে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করিতে পারে সৌদিরা।তাহাদের হাতে অনেক জমি রহিয়াছে। নেতানিয়াহুর এই মন্তব্যের পরই সৌদি আরবে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। একইভাবে নেতানিয়াহুর বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করিয়াছে কাতার,জর্ডন, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত,ইরাক সহ সকল আরব দেশ। নেতানিয়াহুর বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রিয়াদ জানাইয়াছে,গাজায় ইজরায়েল জাতিগত নির্মূলীকরণের উদ্দেশ্যে যে সকল অপরাধ চালাইতেছে তাহার দিক হইতে সকলের নজর অন্যত্র সরাইয়া দিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এই সকল নিন্দনীয় মন্তব্য করিতেছেন। সৌদি আরব এইটা নিশ্চিত করিতেছে যে নিজেদের ভূমিতে ফিলিস্তিনি মানুষের অধিকার রহিয়াছে। তাহারা কোন অনুপ্রবেশকারী বা অভিবাসী নহেন যে নিষ্ঠুর ইজরায়েলি দখলদারেরা ইচ্ছা করিলেই তাহাদের তাড়াইয়া দিতে পারিবে।

এককথায় আমেরিকার মদতে ইজরায়েল যে মতে গাজা ভূখণ্ড এবং পশ্চিম তটে হামলা চালাইয়া প্যালেস্তাইনিদের এলাকাছাড়া করিতেছে ইহার প্রতিপক্ষে দাঁড়াইয়া অনেকদিন পর কোনও উচ্চকিত কণ্ঠ শোনা যাইতেছে। প্রসঙ্গত, ক্ষমতায় আসিয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন ইস্যুতে প্রথম মন্তব্যে বলিয়াছিলেন, গাজায় সংঘাত শেষে উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রণ লইবে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের এই মন্তব্যেও একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখাইয়াছে আরব দুনিয়া। অর্থাৎ বিশ্ববাসী যে কৌতূহল পুষিয়া রাখিয়াছিলেন আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট কোন দিশায় যাইবেন মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে তাহার জবাব খুব তাড়াতাড়িই মিলিয়া গিয়াছে। রহস্যের আর কোনও লেশমাত্র নাই, সকলই প্রকাশ করিয়া দিয়াছেন ট্রাম্প-নেতানিয়াহু।
এইদিকে সৌদি আরবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে নয়া তত্ত্ব দিয়াছেন নেতানিয়াহু তাহার প্রতিবাদে সৌদি সংসদেও (শুরা কাউন্সিল) আলোচনা, নিন্দার ঝড় বহিতেছে। ট্রাম্প,নেতানিয়াহুকে এক আসনে রাখিয়া সৌদি সদস্যরা বলিলেন, ইজরায়েলের জনগণকে আমেরিকার আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে এবং পরবর্তীতে গ্রিনল্যান্ড দখল করিয়া সেই জমিতে সরাইয়া লইয়া যাওয়া উচিত। ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর প্রতি এই ধরনের শ্লেষাত্মক বক্তব্য গোটা আরব দুনিয়াতে নতুন সমীকরণ বদ্ধমূল হইতেছে যে সৌদি আরব কোনওমতেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর দলে ভিড়িতেছে না। সৌদি শুরা কাউন্সিলেও সেই বার্তা শোনা গিয়াছে। তাহারা বলিয়াছে, জায়নবাদী ও তাদের মিত্ররা তাহাদের রাজনৈতিক কৌশল এবং সংবাদ মাধ্যমের চাপে ফেলিয়া রিয়াদকে কখনই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করিতে পারিবে না।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.