আগামীর আভাস

 আগামীর আভাস
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ত্রিপুরায় চার আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল লইয়া উভয় পক্ষই সমান আশাবাদী । তবে বিভ্রান্ত রহিয়াছেন সাধারণ ভোটার । ভোটার জানেন না তারা সত্যই ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাভাবিক পরিবেশ পাইবেন কিনা ! কারণ সদ্যসমাপ্ত পুর , নগর এবং নিগম ভোটের অভিজ্ঞতা ভালো নহে।আবার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে যিনি নবনিযুক্ত হইয়াছেন , তিনি আশ্বাস দিতেছেন ভোট হইবে ভোটের মতনই । তাই ভোট বা ফলাফল যাহাই হউক , এই উপনির্বাচন আগামী ২০২৩ – এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে একটি সেমিফাইনাল কিংবা বলা যায় ছয় মাস পরের সাধারণ ভোটের আগের রাজনৈতিক মেরুকরণ । এই উপনির্বাচনের পর তেইশের বিধানসভা নির্বাচন অবধি আমরা আর কোনও ভোট দেখিতে পাইব না , এমন আশা করাই যায় । আবার একইভাবে দেশে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হইয়াছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সামনে রাখিয়া ।

যদিও ২০২৪ -এর নির্বাচনের আগে দেশে দুই দফায়- ডিসেম্বরে এবং আগামী ফেব্রুয়ারীতে বিভিন্ন রাজ্যে ভোট রহিয়াছে , তথাপি কেন্দ্রীয়ভাবে মেরুকরণ হইবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেই । তৎপরতা দেখা দিয়াছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে । অর্থাৎ আমাদের রাজ্য এবং দেশ দুই জায়গাতেই তৎপরতা শুরু হইয়াছে । আগামী ছয় সাত মাস ত্রিপুরা রাজ্যে এই তৎপরতা আরও বাড়িতে বাড়িতে ভোট বিস্ফোরণে গিয়া শেষ হইবে । বিরোধী দলগুলি এখন হইতেই বিনা যুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনী না ছাড়িবার মতন মেজাজ দেখাইতেছে । আবার শাসক বিজেপিও নিজ শক্তি সংহত করিতে সকল কৌশল অবলম্বন করিতেছে । বিশেষত পাহাড়ে বিজেপি শরিক দলের দুর্বলতাজনিত রাজনৈতিক প্রতিকূলতায় মাটি ধরিয়া রাখিতে মরিয়া প্রচেষ্টা লইতেছে বলিয়া আমরা দেখিতেছি । পাহাড়ে তিপ্রা মথা শাসক বিজেপির জন্য লড়াই কঠিন করিয়া দিয়াছে । উপনির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণার আগে পর্যন্ত তিপ্ৰা মথা কোন্ দিকে যাইবে এই লইয়া বিভ্রান্তি ছিল । ধরিয়া লওয়া হইতেছিল পরাক্রমী আঞ্চলিক দলগুলি যেমনে দিল্লীর গদিতে আসীন শাসক দলের সহিত হাত মিলাইয়া নিজেদের ফিনিক্স পাখির পরিণতি দিয়া থাকে সেই মতে মথাও বিজেপির সহিত থাকিবে । কিন্তু উপনির্বাচন আমাদের দেখাইল ভিন্ন বিষয় । দিল্লীর এবং রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গেই গেলো মথা ।

সুরমা কেন্দ্রে মথার প্রার্থীর সমর্থনে কংগ্রেস প্রার্থী রাখে নাই । আবার ঘোষণা মতন আগরতলা কেন্দ্রে প্রার্থী দেয় নাই মথা । যদিও সুরমা আর আগরতলা উভয় কেন্দ্রেই উপজাতি ভোটার তেইশ শতাংশের উপর ।এই গোপান বোঝাপড়ায় আগরতলায় কংগ্রেস প্রার্থী সুদীপ রায় বর্মণের লড়াই যেমন সহজ হইলো তেমনই সুরমা কেন্দ্রে এই অবধি যে চিত্র তাহাতে শাসক দল তৃতীয় স্থানে চলিয়া যাইতেছে । মূল লড়াই দেখা যাইতেছে সিপিএম এবং মথার মধ্যে । আবার আগরতলার দুইটি আসন টাউন বড়দোয়ালী এবং আগরতলা চিরাচরিতভাবেই কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে পরিচিত । দুইটি কেন্দ্রে যাহারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতেছেন তাহারা এই সময়ে বিজেপির প্রধান শত্রু হিসাবে কংগ্রেসের মুখ । বলা যায় এই আমলে কখনও কখনও একমাত্র বিরোধী বা প্রতিবাদী মুখ হইয়া মানুষের সামনে আসিয়াছিলেন । প্রধান বিরোধী সিপিএম বড়দোয়ালী কেন্দ্রে নিজেদের প্রার্থী না রাখিয়া শরিক ফরোয়ার্ড ব্লককে ছাড়িয়া দিয়াছে । সাংগঠনিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল এই কেন্দ্রে বামেরা আর লড়াইয়ে নাই । আবার আগরতলা কেন্দ্রে নিজেদের প্রার্থী রাখিলেও এই কেন্দ্রে সিপিএমকে অনেক কৌশলী ভূমিকায় দেখা যাইতেছে । যাইতেছে । তুলনায় সিপিএমের সর্বশক্তি দিয়া লড়াই দেখা যাইতেছে যুবরাজনগর এবং সুরমায় ।

যুবরাজনগর ১৯৯৮ বিধানসভা নির্বাচন বাদ দিলে বরাবরই সিপিএমের দখলে থাকা বামেদের একটি নিরাপদ আসন । এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী রহিয়াছে নামকাওয়াস্তে । প্রার্থী নির্বাচনে বিরোধী দলগুলির এই রকম নয়া সমীকরণে আমরা ২০২৩ বিধানসভার একটি রাজনৈতিক আভাস পাই । তাহা হইল কংগ্রেস এবং মথার নৈকট্য । রাজনৈতিক অবস্থানগত কারণে যাহা সিপিএমের সঙ্গে সম্ভব নহে তাহা কংগ্রেসের সঙ্গে সহজেই করিয়া দেখাইতে পারে মথা । সিপিএম আজ ২০২৩ – র ভোটে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের স্বপ্নের চাইতেও অধিক স্বপ্ন দেখে পাহাড়ের হৃতজমি পুনরুদ্ধার । ফলে মথাকে সহ্য করা তাহাদের পক্ষে সম্ভব নহে । অপরদিকে মথা জানে কংগ্রেস হইল ত্রিপুরার আঞ্চলিক দলগুলির স্বাভাবিক বন্ধু । পাহাড়ে দুই চারটি নির্দিষ্ট আসনের বাহিরে তাহাদের দাবি নাই , সংগঠন শক্ত করিবার বাসনাও তাহাদের নাই । অর্থাৎ কংগ্রেস কখনওই মথার জমি লইয়া টানাটানি করিবে না । এই পর্যন্ত আমরা দেখিতেছি , আগামী বিধানসভা নির্বাচনে একটি বিরোধী জোটের রূপকল্প আবছা আকার লইতেছে । এই আবছা চিত্র যদি স্পষ্ট হয় ছয় মাস পর তাহা হইলে সিপিএম এবং বিজেপি সম্পূণত নিভর থাকিবে সমতলের বাঙ্গালি ভোটারের চল্লিশ আসনের উপর । যাহা বিজেপির জন্য মোটেও সুখের হইবে না।আর সিপিএম কে কেবল বিজেপির রক্তশুন্যতা দেখিয়াই সন্তুষ্ট থাকিতে হইবে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.