বিভৎস ট্রেন দুর্ঘটনা, ছিটকে গেল চলন্ত তিনটি মালগাড়ির কামরা!!
বিড়ালের পাখা

এ দেশে রাজনীতি অনেক আগেই দিগভ্রান্ত ও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গেছে। রাজনীতিতে আদর্শ ও নৈতিকতা আর তেমন বিশেষ অবশিষ্ট নেই। পচে যাওয়া রাজনীতি আমাদের সমাজের ভিতটাকে অনেকটাই নড়বড়ে করে দিয়েছে। তাই রাজনীতি এখন অনেক অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা আর অনিষ্টের আঁতুঘর। রাজনীতিকে সুষ্ঠু করার জন্য বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা যে হয়নি তেমন নয়। বিশেষ করে বিচার বিভাগকে প্রায়শই দেখা যায়, রাজনীতির এই স্খলন ও অবক্ষয় নিয়ে সরব হতে। কিন্তু তাতে খুব একটা যে সুফল মেলে, তেমন বাস্তব অভিজ্ঞতা মানুষের নেহাৎই কম। কথায় বলে, একবার মানুষের স্বভাব ও চরিত্র নষ্ট হয়ে গেলে তাকে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন ব্যাপার। আমাদের দেশের রাজনীতিরও হয়েছে এই দশা। বারবার তার পদস্খলন নিয়ে বিচারবিভাগকে সরব হতে কিংবা তাকে সতর্ক করতে দেখা গেলেও কদাচিৎই রাজনীতিকে তার নৈতিকতা ও আদর্শের পথে ফিরে আসতে দেখা গেছে। যে কারণে রাজনীতির এই বিষবাষ্প আমাদের শিক্ষা, সামাজিক নীতি, মূল্যবোধ, আর্থিক কাঠামো সব কিছুকেই ধ্বংস করে চলেছে। তাই দেশ তথা রাষ্ট্র গড়ার আগে রাজনীতিকে আগে মেরামত করতে হবে। সুনাগরিক তৈরি করার আগে রাজনীতিকে ধুয়ে মুছে সাফ করতে হবে। তা না হলে রাজনীতি শুধুই কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি, অনৈতিকতা, বাঁকাপথে কামানো এবং ভোট জিততে জনগণকে ঘুষ দিয়ে তাদের নৈতিক বিচ্যুতিকে আরও গভীর খাদে নিয়ে ঠেলে দেবে।
যে কোন রাজনৈতিক দল কিংবা কোন দলীয় জোট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে দেশের উন্নতি এবং জনগণের জন্য তারা কী কী কাজ করবে সেটা আগে থেকেই ভোটারদের জানিয়ে দেয়। ভোটাররা সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে তবেই ভোট দেন। এটাও ঘটনা যে, মানুষ এখন রাজনৈতিক আদর্শ দেখে ভোট দেন না। তারা দলের কর্মসূচি-কর্মপদ্ধতি দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেন, কাকে ভোট দেবেন। কিন্তু এ দেশের রাজনীতির সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো, রাজনৈতিক দলগুলো এখন জনকল্যাণ আর ভোটের খয়রাতি দুটোকে গুলিয়ে ফেলেছে। সমাজের গরিব ও দুর্বল অংশের মানুষকে কিংবা নিম্ন আয়ী জনগণকে দারিদ্রমুক্ত করতে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে। এতে দোষের কিছু নেই। সমাজের মূল স্রোতে গরিব অসহায় মানুষকে শামিল করতে এই ধরনের কর্মসূচি নিঃসন্দেহে একটা দিক। কিন্তু ইদানীং বেশ কিছু বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ভোটার টানতে যেভাবে ভোটের নামে খয়রাতির সুবিধা বিলিয়ে চলেছে- এর ফলে মানুষের মধ্যে ক্রমশ কাজ না করার স্পৃহা বা কর্মবিমুখতা, আলস্য বেড়ে যাবে তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবারও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। খয়রাতি এবং জনকল্যাণের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। কিন্তু ভোেট জিততে পশ্চিমবঙ্গে মমতা চালু করেছেন মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। আর মহারাষ্ট্রে, দিল্লীতে গেরুয়া বাহিনী ‘লড়কী বহিন’ প্রকল্প দিয়ে আসর মাত করেছে। এইভাবে দেখা যাচ্ছে, কাজ না করলেও বছরভর এখন রেশনে বিনামূল্যে চাল মিলছে মাসে মাসে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে, বিনা ভাড়ায় মানুষ বাসে চড়ছেন। এই চিত্র বাংলা কিংবা মারাঠা রাজ্যেই নয়, হিমাচল, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, দিল্লী, হরিয়ানা সর্বত্রই একই কৌশলে ভোেট জেতা শুরু হয়েছে। এতে অর্থনীতির শুধু সংকট গভীরতর হচ্ছে না, মানুষকে কর্মবিমুখ করা হচ্ছে। যার ফলে আমাদের সমাজে নতুন একটি শ্রেণী জন্ম নিচ্ছে যার নাম পরজীবী শ্রেণী। শহরাঞ্চলে গৃহহীন মানুষের মাথার উপর আশ্রয়ের অধিকার সংক্রান্ত মামলায় বুধবার সুপ্রিম কোর্ট এই উদ্বেগের কথাই ব্যক্ত করেছেন। ফরাসী এক কবির একটি কবিতা এই প্রসঙ্গে খুব মনে পড়ছে। কবিতার মূল কথাটি হলো, বিড়ালের যদি পাখা গজাতে দেওয়া হয়, তাহলে তারা প্রথমে ঘরের চালে শান্তিপূর্ণভাবে যে চড়ুইপাখিগুলো থাকে তাদের আগে সাবাড় করে ফেলবে। তাই রাজনৈতিক দলগুলো আজ যা খয়রাতি বিলোচ্ছে তা মানুষকে ধ্বংস করার কূটকৌশল। তাই
ভোটারের উচিত নিজের ভবিষ্যতের স্বার্থেই রাজনীতির এই বিড়ালদের পাখাগুলো কেটে ফেলা। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর বিচ্যুতি কিছুটা অন্তত প্রশমিত করা যাবে।