ত্রিপুরার সাহিত্য চর্চায় নয়া ইতিহাস রচনা করেছে উড়ান: জয় গোস্বামী।।
শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে স্কুল,তলানিতে ছাত্র সংখ্যা।।

অনলাইন প্রতিনিধি:-রাজ্যের স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার অস্তিত্ব সংকটে। সরকারী স্কুলগুলিতে নিয়মিত পড়াশোনা হচ্ছে না। গত ১০ বছরে স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে। রাজ্যের একটি বড় অংশের অভিভাবক এখন আর সরকারী স্কুলে তাদের সন্তানদের ভর্তি করছেন না। রাজধানী শহর আগরতলারই এই হাল। এতে সহজেই অনুমেয় রাজ্যের বিভিন্ন জেলা, মহকুমা এবং গ্রাম, পাহাড়ের স্কুলগুলির কি বেহাল দশা। বর্তমান পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে আর কয়েক বছরের মধ্যেই ছাত্র সংকটের অজুহাতে রাজধানী আগরতলার অধিকাংশ স্কুল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে রাজ্য সরকার।
যদিও এক অদৃশ্য কারণে পূর্বতন সরকার ছিলো নীরব দর্শক।আর বর্তমান সরকার রাজ্যের সরকারী স্কুলের পঠন পাঠনের পরিকাঠামো উন্নয়ন না করে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প এবং সিবিএসই পাঠ্যক্রম চালু করে দিলো। অভিযোগ, একতরফাভাবে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প এবং সিবিএসই পাঠ্যক্রম চালুর দৌলতে রাজ্যে স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেলো ত্রিপুরাতে। যা ২০২৪ সালের সিবিএসসি প্রকাশিত বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের ফলাফলে প্রমাণিত হলো রাজ্যে। এমনকী এর খেসারত দিচ্ছে রাজ্যের লক্ষাধিক সরকারী স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা।অভিযোগ, বর্তমানে ১২৫টি বিদ্যাজ্যোতি স্কুল নিয়ে ব্যস্ত সরকার।তাই পরিস্থিতি আরও তলানিতে এসে ঠেকেছে।স্কুল শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, রাজ্যের সরকারী স্কুলগুলি শিক্ষক শিক্ষিকার সংকটে ধুঁকছে। শিক্ষক শিক্ষিকার সংকটের দৌলতে বিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনা হচ্ছে না। রাজধানীর স্কুলগুলির সাথে জেলা, মহকুমা এবং গ্রাম, পাহাড়ের স্কুলগুলির বেহাল অবস্থা। রাজ্যের হাজারো স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য একজন শিক্ষক শিক্ষিকা নিযুক্ত করে রেখেছে রাজ্য সরকার।এই হাজারো স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের একসাথে স্কুলের মাঠে কিংবা সভাগৃহে বসিয়ে ক্লাস করাতে বাধ্য হচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গ্রাম পাহাড়ের স্কুলগুলিতে তো শিক্ষক সংকটের জন্য ছাত্রছাত্রীরা স্কুলেই যাচ্ছে না। এমনকি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে গিয়েও তাদের স্কুলে আনতে পারছেন না। কারণ একটাই- সরকারী স্কুলে পড়াশোনার কোনও পরিকাঠামো নেই। তাই প্রত্যেক বছর রাজ্যে বাড়ছে বিদ্যালয়ছুট্ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। এরপরও সরকারী স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করছে না রাজ্য সরকার। অভিযোগ, ছাত্রসংখ্যা হ্রাসের অজুহাতে ২০২০ সালে অস্নাতক (টেট ১) শিক্ষক শিক্ষিকা পদে ৩১০৩টি পদ অবলুপ্ত করে দিয়েছে শিক্ষা দপ্তর। এমনকী ২০২২ সালেও ছাত্র সংখ্যা হ্রাসের অজুহাতে স্নাতক (টেট২) শিক্ষক শিক্ষিকা পদে আরও ২০৮৯টি পদ ও অবলুপ্ত করে দিয়েছে বেকারদরদী সরকার। এভাবেই দু’দফায় প্রায় ৫১৯২টি শিক্ষক শিক্ষিকার পদ অবলুপ্ত করা হলো রাজ্যে। তাই যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, বর্তমানে রাজ্যে অস্নাতক (টেট১) শিক্ষক শিক্ষিকা পদে ২২৮৭টি পদ শূন্য রয়েছে। স্নাতক (টেট২) শিক্ষক শিক্ষিকার পদে প্রায় ১৭৯৯টি এবং স্নাতক (এসটিজিটি) শিক্ষক শিক্ষিকার পদে ১৮৮৭টি ও স্নাতকোত্তর (এসটিপিজিটি) শিক্ষক শিক্ষিকার পদে ১৭৭৭টি শূন্যপদ রয়েছে। এমনকী মাদ্রাসা ও ককবরক মিলিয়ে শিক্ষক শিক্ষিকার শূন্যপদ রয়েছে প্রায় ৭৭৭টি পদ।
অবাক করার বিষয় হলো, রাজ্যে প্রায় তিন বছর ধরে শিক্ষক শিক্ষিকার পদে নিয়োগ বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি বেকার বিক্ষোভের চাপে পড়ে টেট-১ এবং টেট-২ শিক্ষক পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে ২০২২ সালে রাজ্যের প্রায় ৩৬৬ জন বেকার যুবক যুবতীরা টেট ১ এবং টেট ২ পরীক্ষায় পাস করেছিলেন। তাদের পর্যন্ত নিয়োগ করা হয়নি। রাজ্যের হাজারো বেকার ডিএলএড, বিএড, এমএড ডিগ্রি নিয়ে বসে থাকলেও তাদের নিয়োগ নেই। তবে এখন চাপে পড়ে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলেও প্রত্যেক দিন বহু বেকার যুবক যুবতীরা বয়সউত্তীর্ণ বেকারে পরিণত হচ্ছে রাজ্যে। রাজ্যে শিক্ষা দপ্তরে শিক্ষক শিক্ষিকার পদে শূন্যপদ প্রায় ৮৫২৭টি রয়েছে। রাজ্যের সরকারী স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকার নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে আদালত এবং এনসিটিই-র কোন বাধা নেই। তবে নিয়োগ বন্ধ এসটিজিটি এবং এসটিপিজিটি শিক্ষক পদে। তাই বেকার বিক্ষোভ চরমে উঠেছে।
রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের ব্যর্থতার দৌলতে, স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ মুখ থুবড়ে পড়েছে। অথচ স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন বন্ধ। ছাত্র অনুপাতে শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ নেই। স্কুলের গ্রন্থাগার এবং পাঠ্যপুস্তক পর্যন্ত পর্যাপ্ত নেই। পানীয় জল নেই অধিকাংশ স্কুলে। প্রায় ৬৫ শতাংশ স্কুলে শৌচাগার পর্যন্ত নেই। রাজ্যে ১২ বছর ধরে সরকারী স্কুলে প্রধান শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষিকা নিয়োগ পর্যন্ত বন্ধ। অথচ শিক্ষা দপ্তর নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য শিক্ষক শিক্ষিকা এবং প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যস্ত। এমনকী শিক্ষকদেরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।