জিবিতে হচ্ছে না স্থান সংকুলান দফারফা রোগীর, ব্যাহত চিকিৎসা!!

 জিবিতে হচ্ছে না স্থান সংকুলান দফারফা রোগীর, ব্যাহত চিকিৎসা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-জেলা,মহকুমা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির দৈন্যদশায় রাজ্যের প্রধান সরকারী হাসপাতাল জিবিতে রোগীর অস্বাভাবিক চাপ কেবল বাড়ছেই।প্রতিদিন এতো বিশাল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরাও হিমশিম খাচ্ছেন। চিকিৎসা পরিষেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। আর সেই কারণে হাসপাতালের চরম অব্যবস্থায় বেড তথা শয্যার অভাবে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে ফ্লোরে।শুধু ফ্লোরে রোগীর ঠাঁই বললেই হয় না,অসংখ্য রোগীরা শয্যার সংকটে ফ্লোরে কম্বল পেতে ওয়ার্ডের ভেতর’ ফ্লোরে,বারান্দার ফ্লোরে, সিঁড়িতে রাখা হচ্ছে, আর ফ্লোরে ঠাঁই দেওয়া রোগীর পাশ ঘেঁষে অন্যান্য রোগীর আত্মীয়স্বজন, হাসপাতাল কর্মী সকলেই জুতোর নোংরা ধুলাবালি উড়িয়ে যাতায়াত করছেন। যা আরও ভীষণ অমানবিকতা হয়ে ঠেকেছে। তাতে রোগীর অস্বস্তি যেমন বাড়ছে তেমনি নানা সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকছে। খুব গুরুতর অসুস্থ রোগীই হোক বা জটিল রোগ নিয়ে ভর্তি রোগীই হোক, সব ধরনের রোগীকে ফ্লোরে রাখা হচ্ছে। হাসপাতালের চরম অব্যবস্থায় রোগীরা হাসপাতালে এসে তাতে আরও প্রতিদিন মারাত্মক যন্ত্রণা ও বিপাকে পড়ছেন। জিবির মেডিসিন বিভাগ, সার্জিক্যাল বিভাগ, অর্থোপেডিক্স বিভাগ, স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগ- এই সব ওয়ার্ডে রোগীর চাপ দিনের পর দিন অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময়েও হাসপাতালে রোগীর চাপে শয্যার অভাবে প্রতিদিন অসংখ্য রোগীর ঠাঁই মিলত হাসপাতাল ফ্লোরেই। সেই সময় বিজেপি সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি হাসপাতালের অব্যবস্থা ও পরিকাঠামো সঙ্কটে রোগীর ঠাঁই ফ্লোরে হওয়ার প্রতিবাদে সোচ্চার হতো। তৎকালীন সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যর্থ বলে অভিযোগ তুলে বিরোধীর রাজনৈতিক দলগুলির নেতারা গলাফাটাতেন।বিস্ময়কর ব্যাপার হলো রাজ্য বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পর বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে সাত বছর অতিক্রান্ত হলেও হাসপাতালের চিত্র এখনো একই রয়ে গেছে বলে প্রতিদিন রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজন সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই অভিযোগ করছেন। হাসপাতালের অব্যবস্থার চিত্র বদলায়নি। বরং হাসপাতালের ফ্লোরে এখন আরও বেশি করে রোগীর ঠাঁই মিলছে। বারান্দায়, বারান্দার ফ্লোরে, এমনকী হাসপাতালের সিঁড়িতেও রোগী রাখা হচ্ছে। হাসপাতালে প্রতিদিন ষোলশোর উপর রোগী বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসার জন্য ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসেন।
জিবি হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোগীর সংখ্যা যেভাবে দিন দিন অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে তাতে হাসপাতাল ম্যানেজমেন্টও চিন্তিত যে, কীভাবে এতো ব্যাপক সংখ্যক রোগীর শয্যার ব্যবস্থা করবেন। প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত প্রায় এক বছর আগে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আগের তুলনায় অনেক বেড তথা শয্যা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু তাতেও শয্যার চরম সংঙ্কটজনিত সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। এই ক্ষেত্রে হাসপাতালের চিকিৎসকদের বড় অংশ স্পষ্টভাবেই দাবি করছেন শুধু হাসপাতালের শয্যা বা বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করে কোন লাভ হবে না। বাস্তবে জিবি হাসপাতালে রোগীর অস্বাভাবিক চাপ কমাতে হলে রাজ্যের প্রতিটি জেলা হাসপাতাল ও মহকুমা হাসপাতালগুলির চিকিৎসা পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি করতে হবে। জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলির বর্তমান চিকিৎসা পরিকাঠামোর ও চিকিৎসা পরিষেবার বেহাল ও দৈন্যদশায় সেই সব হাসপাতাল থেকে বাধ্য হয়ে রোগীকে বাঁচাতে ও সুস্থ করতে রেফার করা হচ্ছে জিবিতে। রোগীকে নিয়ে রোগীর আত্মীয় জিবি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য ছুটে আসছেন। জেলা হাসপাতাল ও মহকুমা হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবার উন্নত ব্যবস্থার থাকলে জিবি হাসপাতালে ভাবে ব্যাপক হারে রোগী চিকিৎসার জন্য আসত না বা পাঠানো হতো না বলে এই দাবি করছেন খোদ চিকিৎসকরাই। ফলে দাবি উঠেছে রাজ্য সরকার ও তার স্বাস্থ্য দপ্তরকে আর বিলম্ব না করে দ্রুত রাজ্যের জেলা হাসপাতাল ও মহকুমা হাসপাতালগুলিতে বাস্তবে সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিকাঠামোও উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা চালু করে জিবির রোগীর চাপ কমানো হোক। এদিকে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তর সরকারী হাসপাতাল আইজিএমের চিকিৎসা পরিকাঠামোও সব বিভাগে নেই। জিবিতে আইজিএম থেকেও রোগী যাচ্ছে। শুধু আইজিএম, জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলির বেহাল চিকিৎসা পরিকাঠামোর জন্যই রোগীর চাপ জিবিতে বাড়ছে তাই নয়, রাজ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্য তথা চিকিৎসা কেন্দ্র গুলিতেও (পিএইচসি) পর্যাপ্ত চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করারও দাবি উঠেছে। পিএইচসিগুলির কী করুণ দশা তার অনুসন্ধানে শীঘ্রই স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের সরেজমিনে গিয়ে হালহকিক দেখে আসারও দাবি উঠেছে ক্ষুব্ধ রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজনের তরফে। তাতে স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের চোখ কপালে উঠবে বলেই মনে করছেন এলাকাবাসী ও রোগীরা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.