প্রতিবেশী সম্পর্ক!!

‘প্রতিবেশী’ এই শব্দটির মানে অর্থ কি? খুব সহজ করে বললে,এর উত্তর হচ্ছে ‘নিজের কাছাকাছি বা আশেপাশে বসবাসকারী ব্যক্তি’।কিন্তু ‘প্রতিবেশী’ কি শুধু আপনার, আমার কাছাকাছি বা আশপাশে বসবাসকারী কাউকে বোঝায়?এই ক্ষেত্রে উত্তরটা হবে অবশ্যই না। কেননা, প্রতিবেশী বলতে আমরা শুধু নিজের কাছাকাছি বা আশপাশে বসবসাকারী কাউকে বুঝি না। প্রতিবেশী বলতে আমরা যেমন বাড়ির পাশে প্রতিবেশী, পাড়া বা গ্রামের প্রতিবেশী, তেমনি প্রতিবেশী রাজ্য এবং আরও বৃহৎ পরিসরে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচনা করি।
বর্তমান সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিবেশী স্বাভাবিক ভাবে দু’রকমের হয়। এক ভালো প্রতিবেশী, দুই খারাপ প্রতিবেশী। প্রতিবেশী ভালো হলে আমি, আপনি, পাড়া, রাজ্য দেশ সকলেই ভালো থাকবো, ভালো থাকবে। এটা বাস্তব সত্য। আর প্রতিবেশী খারাপ হলে, তার প্রভাব সকলকে ভোগ করতে হয়। এই নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই সকলেই মনপ্রান দিয়ে নিজের ভালো’র সাথে সাথে প্রতিবেশীর ভালো হোক, ভালো থাকুক, এটাও চায়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, চাইলেই যে সবকিছু পাওয়া যায় বা সব ঠিকঠাক চলে, তা তো নয়। নানা কারণে প্রতিবেশী সম্পর্কের মধ্যে নানা তিক্ততা তৈরি হয়। প্রতিবেশী সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্ন এসে বড় হয়ে দাঁড়ায়। সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরে। এই সময়ে এর সব থেকে বড় উদাহরণ হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক। এই সম্পর্ক এখন বড় প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। কেন এই পরিস্থিতি? তার অনেক কারণ রয়েছে। সেই কারণগুলি কি? তা দুই দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ, শান্তি-সম্প্রীতি এবং উন্নয়নপ্রেমী মানুষ, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, পরম্পরা এবং ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষ, প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ, সকলেই এই কারণগুলি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত আছেন। ফলে নতুন করে বলার কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
তবে এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলতেই হবে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি অনন্য সম্পর্ক রয়েছে। যা সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং ঐতিহাসিক বন্ধনের দ্বারা চিহ্নিত। এই সম্পর্ককে কেউ নষ্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা করলেই যে সফল হবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। হয়তো সাময়িক কিছু সমস্যা হবে। সাময়িক কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। ভুল বুঝতে পারলে নিজেরাই আবার সংশোধন চা হয়ে যাবে। না হলে, প্রতিবেশীকে সংশোধন করে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসাটাও আরেক প্রতিবেশীর দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। ফলে একদম সঠিক কথাই বলেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, ভারতের সঙ্গে সু-সম্পর্ক চায় কিনা? সেটা বাংলাদেশ সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তার বক্তব্য, বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের লাগাতর ভারত বিরোধী মন্তব্য, অন্যদিকে সরকারের আরেক অংশ ভালো সম্পর্কের কথা বলবেন, এটা চলতে পারে না। ফলে বাংলাদেশকেই মনস্থির করতে হবে, তারা আসলে কি চায়?
দিন সাতেক আগে মাস্কাটে ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলির সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মধ্যে বৈঠক হয়। খবরে প্রকাশ, বৈঠকে হোসেন জানান, ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ। দেশে ফিরে গিয়েও একই কথা বলেন তিনি। বৈঠকে নাম না করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ থেকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন জয়শঙ্কর। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, ইউনিস সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা একরকম বলছেন। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামদের গলায় অন্য সুর।
তারা ভারতের বিরুদ্ধে লাগাতর সরব। তারা ভারত বিরোধী নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য এখনও অব্যাহত রেখেছে। শুধু তাই নয়, কট্টর মৌলবাদী সংগঠনগুলিকে আরও বেশি করে উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছে। সেই অর্থে, ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এখন বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে কোন্ পথে হাঁটে।
পাকিস্তানের দাসত্ব করবে?নাকি ভারতের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় প্রাখার পথে হাঁটবে? সেটাই এখন দেখার।