মহাশিবরাত্রিতে আমিষ খাবার কে কেন্দ্র করে দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষ!!
গণঅবস্থায় বাংলাদেশে গণপিটুনিতে হত্যা বাড়ছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ছয় মাসে দেশে গণপিটুনিতে ১২১ জন নিহত হয়েছে।এভাবে হত্যার কারণে বাংলাদেশের মানুষ এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন। এই তথ্য মিলেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউণ্ডেশনের জরিপ থেকে।সংগঠনের জরিপে বলা হয়েছে আগষ্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারী পর্যন্ত ১২১ জন উন্মুক্ত মানুষের গণপিটুনিতে নিহত হয়। আরেক মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত পাঁচ বছরে দেশে গণপিটুনিতে সর্বোচ্চ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে গত বছর।২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত হন ১৪৬ জন,যা আগের বছরের প্রায় তিন গুণ।২০২৩ সালে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন।এদিকে মঙ্গলবার রাতেই ঢাকায় গণপিটুনির দুটি ঘটনা। একটি উত্তরায়,অন্যটি গাজীপুরের টঙ্গীতে।দুটি ঘটনাতেই ‘ছিনতাইকারী’ সন্দেহে তিন ব্যক্তিকে স্থানীয় লোকজন দলবদ্ধ হয়ে পেটানো শুরু করেন। উত্তরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে আহত করার পর পায়ে দড়ি বেঁধে পদচারী-সেতুর সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।এরা হলেন মো. নাজিম (৪০) ও মো. বকুল (৩০)।টঙ্গীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটুনিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার দিকে স্টেশন রোড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ঘটনা। নিহত যুবকের নাম-ঠিকানা জানাতে পারেনি পুলিশ। দুটি ঘটনাই বীভৎস। পিটুনির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েও দেওয়া হয়। উত্তরার ভিডিওতে দেখা যায়, পায়ে দড়ি বাঁধা লোকটিকে পদচারীসেতুর খুঁটির সঙ্গে উল্টো করে বাঁধছিলো হলুদ রঙের টি-শার্ট পরা এক যুবক। আরও কয়েকজন ওই ব্যক্তিকে ওপরে তুলছিলেন।
বাংলাদেশে নির্বিচার গণপিটুনি এবং হত্যা বাড়ছেই। একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের হিসাবে দেখা গেছে, আগষ্ট থেকে ছয় মাসে গণপিটুনির ঘটনা ও নিহত মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, গণপিটুনি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা আইনশৃঙ্খলার অবনতির চিত্রকেই তুলে ধরে। দিনের পর দিন এসব ঘটনা বাড়লেও কার্যকর কোনও ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করছেন এসব ব্যক্তি। গণপিটুনি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা আইন প্রয়োগ ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার চিত্র তুলে ধরে। কয়েক বছর ধরেই এ আস্থাহীনতা বেড়েছে। তবে আস্থাহীনতার কথা বলে কোনও গণপিটুনিকেই সমর্থন করা যায় না। আস্থাহীনতা থাকলেও তা যথাযথ আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে ঠিক করা যায়, কিন্তু তা করা হয়নি। এর দায় সরকারের। পাঁচ আগষ্টের পর ‘মব ভায়োলেন্স’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতার পরিমাণ বেড়ে গেছে। সরকার তা বন্ধ করতে তেমন পদক্ষেপ নেয়নি। কখনও কখনও কাউকে জোর করে কোনও পদ থেকে নামিয়ে দেওয়া সহ নানাভাবে ‘মবের’ সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এ কারণেই বেড়েছে মবকেন্দ্রিক সহিংসতা বা গণপিটুনি।
পুলিশের তথ্য বলছে, ছয় মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৪৫টি, যা আগের বছরে একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। ডাকাতি ও দস্যুতা সাম্প্রতিক মাসগুলোয় আরও বেড়েছে। গত জানুয়ারীতে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৪২টি, তুলনায় এ বছর ৯৯টি বেশি (৬৯ শতাংশ)। ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় গত ডিসেম্বরে মামলা ২৩০টি, এ বছর তুলনায় ৯৫টি (৭০ শতাংশ) বেশি। অপরাধের শিকার হওয়ার আতঙ্ক থেকে মানুষ আইন হাতে তুলে নিতে পারে। গণপিটুনি আইনের দৃষ্টিতে ‘হত্যা’ এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা হত্যাকারী হিসেবেই চিহ্নিত হন, এমনটাই মত দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক।তার মতে,দীর্ঘদিনের অগণতান্ত্রিক পরিবেশ,গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, প্রশাসনে অস্থিতিশীলতা ও ভীতি এবং আমলাতন্ত্রকে পরিচালনায় অদক্ষতাই গণপিটুনি বেড়ে যাওয়ার কারণ।