অন্ধের হস্তি দর্শনে প্রশাসন স্মার্ট শহরে বোকা বোকা দুর্ভোগ।।

 অন্ধের হস্তি দর্শনে প্রশাসন স্মার্ট শহরে বোকা বোকা দুর্ভোগ।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-মহারাজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন টাউন প্রতাপগড়ে বাড়িতে জলের সংযোগ দিতে গিয়ে প্রায় দেড় মিটার গভীর এবং আড়াই মিটার চওড়া গর্ত খোড়া হয়।অথচ যেই অংশে গর্ত খোড়া হয় তার ধারেকাছে জলের পাইপ নেই। পাইপ রয়েছে গ্যাসের।কোনও কিছু না খতিয়ে দেখে এবং না বুঝে জলের পাইপ ভেবে গ্যাসের পাইপে ফুটো করতে গিয়েই ঘটেছে বিপদ। আগরতলা শহর জতুগৃহে পরিণত হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। শনিবারের এই ঘটনার জেরে এরপর দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা, গভীর রাত পর্যন্ত গ্যাসহীন অবস্থায় কাটাতে হয় শহরবাসীকে। এই সময়ে গ্যাস কোম্পানির নীরবতা পালন করায় মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়ে। আধুনিক স্মার্ট সিটির আগরতলায় এই ধরনের বোকা বোকা কাণ্ডকারখানা চলছে প্রতিনিয়ত।কিছু জলের পাইপ বসাতে গিয়ে গ্যাসের পাইপ ফুটো করে দেওয়া,নতুন করে ড্রেন বানাতে গিয়ে ডজার দিয়ে মাটির তলার সব তার, পাইপ ছিঁড়ে ফেলার একের পর এক ঘটনায় ভোগান্তির যাবতীয় সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এই শহরে।অথচ প্রযুক্তির এই দারুণ অগ্রগতির যুগে অন্ধের হস্তি দর্শনের মতোই প্রশাসনের এই বন্ধ্যাত্ব কবে দূর হবে সেটাই এখন রাজধানী আগরতলার ভাগ্য বিড়ম্বিত জনতার প্রশ্ন। হাতের সামনে প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও তাকে কাজে না লাগিয়ে বাবরের আমলের কায়দায় কাজ করার কারণে যন্ত্রণার বোঝা চাপছে রাজধানীবাসীর ঘাড়ে। যার জেরে শনিবার রাতে গোটা আগরতলা শহরের অর্ধেক মানুষকেই চরম দুর্ভোগের মধ্যে না খেয়েই রাত কাটাতে হয়েছে।
ত্রিপুরার প্রধান শহর, একমাত্র পুর নিগম আগরতলা।দেশ ও বিদেশের
মোট অন্য বহু শহরের মতো এই শহরের গ্যাস, বিদ্যুৎ, জল পরিবহণ ও সরবরাহের কাজ চলছে মাটির নিচ দিয়ে। এ পর্যন্ত আগরতাল যথেষ্ট এগিয়ে আছে। তবে মাটির নিচের, মানে ভূতল বিভিন্ন ব্যবস্থার জাল সম্পর্কে যথাযথ তথ্যের অভাব রয়েছে। কোথায় জলের পাইপ রয়েছে তা জানা নেই রাজ্য পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি দপ্তর এবং হালের জল পরিষদের। একই অবস্থা ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের। রাজ্য নগর উন্নয়ন দপ্তর সহ পূর্ত দপ্তরের কাছেও নেই প্রয়োজনীয় তথ্য। অন্তত সাধারণ মানুষের তেমনই ধারণা। বিভিন্ন দপ্তর ও নিগমের আধিকারিকদের বড় অংশের বক্তব্য এমনই। আর মাটির নিচের জল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদির পাইপ লাইনের বিস্তার সম্পর্কে উপযুক্ত তথ্য তৈরি ও সংরক্ষণ না করার ফলে বিপদ বাড়ছে। নষ্ট হয়ে চলছে সাধারণ মানুষের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ। উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের নামে ধ্বংস হয়ে চলছে সরকারী সম্পত্তি।ভূতল ব্যবস্থার সঠিক তথ্য থাকলেও নেই তার উপযুক্ত ব্যবহার। অন্ধের হাতি দেখার মতো করে চলছে কাজ। মাটির নিচে কোথায় কী আছে তা না দেখে এবং না জেনে কাজ করার ফলে জলের পাইপ ফুটো করতে গিয়ে ফুটো করা হয় গ্যাসের পাইপ। আঁচড় পড়ছে মাঝে মধ্যে বৈদ্যুতিক তারে। ঘটছে বিপজ্জনক ঘটনা। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ছে শহর। এ যেন আগরতলার নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোট কথায় প্রযুক্তির ব্যবহার না করা অথবা যথাযথ ব্যবহার না করার কারণে গ্যাসের অভাবে অভুক্ত থাকতে হয় শহরের মানুষকে। সংকটে পড়তে হয় শবদেহ পোড়াতে গিয়ে। থাকতে হয় বিদ্যুৎহীন হয়ে। এই জাতীয় ঘটনা একদিন নয়, আগরতলা শহরে ঘটছে প্রায় নিয়ম করে। আর পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে চলার উদ্যোগ না থাকায় শহরবাসীকে মুখবুজে সইতে হয় যন্ত্রণা।
ঘটনা হলো প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে কিন্তু এমন পরিস্থিতি হওয়ার কথা নয়। এমনই মনে করেন ওয়াকিবহাল মহলের বড় অংশ। তাদের বক্তব্য, প্রযুক্তি এখন এমন জায়গায় চলে গেছে যে এর উপযুক্ত ব্যবহারে বহু কাজ করা যায় সহজে। করা যায় নির্বিঘ্নে এবং ঝুঁকিহীনভাবে। বিশেষত মাটির নিচের কোথায় জলের, না গ্যাস অথবা বিদ্যুতের লাইন রয়েছে তার হদিশ করা সম্ভব সহসা এবং সঠিকভাবে। এর ভিত্তিতে কাজ করলে বারবার ঝামেলা হওয়ার কথা নয়।মুশকিল হলো আগরতলা সহ রাজ্যে প্রযুক্তির যথাযথ এবং উপযুক্ত ব্যবহার নেই বলে খবর। তাতেই ঘটে চলছে অঘটন।
ওয়াকিবহালদের বক্তব্য অনুসারে কাগজেপত্রে অগ্রগতি ঘটেছে ত্রিপুরার। আগরতলা হয়েছে কেতাদুরন্ত শহর, মানে স্মার্ট সিটি। বাস্তবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রান্তিক এই রাজ্যটি আছে অনগ্রসর অবস্থায়। আগরতলা রয়ে গেছে হাল আমলের ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কহীন বোকা তথা আন স্মার্ট অবস্থায়। ফলে প্রায় নিত্যনতুন সংকট সৃষ্টি হয়ে চলছে। তা সামাল দিতে গিয়ে ছুটছে কালঘাম। এমন ঘটনা ঘটেছে শনিবারও। প্রায় দিনভর মানুষকে থাকতে হয়েছে অভুক্ত আগরতলা শহরে সবদেহ পোড়াতে গিয়ে সংকটে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। শনিবারের মতো পূর্বের সব এই জাতীয় ঘটনায় হেলদোলহীন অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে রাজ্য প্রশাসনকে। যেন কিছুই হয়নি। প্রশাসনের কোনও ভ্রূক্ষেপ না থাকায় দিনে দিনে বাড়ছে বিপদ। এর পাশাপাশি প্রশাসনিকস্তরে রয়েছে সমন্বয়ের অভাব। এর অভাব রয়েছে তৃণমূল ভূতল ব্যবস্থা এবং রাজ্যের উন্নয়ন কাজের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন দপ্তর, নিগমের মধ্যে। কোনও তরফেই বিধিনিষেধ এবং নিয়ম, প্রক্রিয়া মানার আগ্রহ নেই। তাতে একের কাজ ক্ষতি করছে অন্যের যন্ত্রণাক্লিষ্ট হতে হয় সাধারণ মানুষকে। অপচয় হয়ে চলছে অর্থের। নগর উন্নয়ন দপ্তরের উন্নয়ন কাজ উন্নয়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। একই সমস্যা সৃষ্টি করে চলছে আগরতলা পুর নিগম ও জল পরিষদ। আর প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে পাইপ লাইন গ্যাসের উপর প্রভাব পড়ছে। ত্রিপুরা প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড তথা টিএনজিসিএল সহ সরকার অধিগৃহীত বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। শনিবারের ঘটনায় অকারণে গ্যাস পোড়ায় বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে গ্যাস কোম্পানির। দায়সারাভাবে কোনও ধরনের নজরদারি ছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহার না করে কাজ করার খেসারত দিতে হয় আখেরে সাধারণ মানুষকে।
গ্যাস কোম্পানির তরফে সমস্যার কথা উল্লেখ করে বিষয়টি তৎক্ষণাৎ শহরবাসীর সামনে প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হলে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হতে পারতো বলে অনেকের বক্তব্য। এ নিয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হয় গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপক অধিকর্তা তথা এমডি প্রলয় পাত্রের সঙ্গে। তিনি সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।আলোচনা করা হবে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে।শ্রীপাত্র বলেন, সব মহল থেকে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে কাজ করলে এমন সমস্যা হওয়ার কোনও কারণ নেই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.