নাকাল ভোক্তারা, নিরুত্তাপ নিগম চিঠি লিখে দায় সারলো কোম্পানি।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-একের পর এক অঘটন। আর তার সবটাই ঘটে চলছে অব্যবস্থা, বিধি নিষেধ ও প্রক্রিয়া না মানার কারণে।এ কথা উল্লেখ করে ত্রিপুরা প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড চিঠি লিখেছে। চিঠি লেখা হয়েছে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন দপ্তরের সচিবের কাছে। চিঠিতে সরকারের আওতাধীন গ্যাস কোম্পানির বিপুল আর্থিক ক্ষতি সহ সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই চিঠি শিল্প সচিবের কাছে পাঠানো হবে মঙ্গলবার, চার মার্চ। গ্যাস কোম্পানি সূত্রে প্রাপ্ত খবর অনুসারে সোমবার, তিন মার্চ দিনভর অনুষ্ঠিত হয়েছে বৈঠক। কোম্পানির আধিকারিক ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে বৈঠক থেকে। সেখানেই স্থির হয়েছে যাবতীয় সমস্যার কথা জানিয়ে শিল্প সচিবকে চিঠি দেওয়ার বিষয়। এদিন চিঠি লেখা হলেও তা শিল্প সচিবের কাছে পাঠানোর জন্য মেইল করা হয়নি। মঙ্গলবার চিঠির বয়ান ফের খতিয়ে দেখে তা মেইল করা হবে বলে জানা যায়।
মোট কথায় রাজ্যের রাজধানী শহর আগরতলায় বারবার গ্যাসের পাইপ লাইনের ক্ষতি করা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে গ্যাস কোম্পানি। তবে কোম্পানি তথা টিএনজিসিএলের সঙ্গে কিন্তু নড়েচড়ে বসেনি ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগম। নড়েচড়ে বসেনি ভারতীয় গ্যাস কর্তৃপক্ষ লিমিটেড তথা গেইল। অথচ রাজ্য গ্যাস কোম্পানির মালিকানা এই দুই সরকারী সংস্থার হাতে। গ্যাস কোম্পানির মোট একশ শতাংশ অংশিদারির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৯.৫ শতাংশ অংশিদারি রয়েছে গেইলের হাতে। বাকি ৫০.৫ শতাংশের মধ্যে ২৫.২৫ শতাংশ হারে অংশিদারিত্ব রয়েছে ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগম এবং আসাম সরকারের হাতে। গ্যাস কোম্পানির ক্ষতির ফলে সরকারী ক্ষতি হওয়ার কথা এই তিন সংস্থার। আর পাইপলাইন গ্যাসজনিত সংকটে বিপাকে পড়তে হয় রাজ্যের মানুষকে। মূলত এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে রাজ্যের রাজধানী শহর আগরতলার মানুষের উপর। সেই দিক থেকে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের উপর এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে। প্রভাব পড়ে গেইলের উপরও।লক্ষণীয়ভাবে এ নিয়ে যেন ভ্রুক্ষেপহীন আচরণ করে চলছে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম। দায়সারা হয়ে আছে গেইলও। প্রাপ্ত খবর অনুসারে উল্লেখিত দুই রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারী সংস্থা সাম্প্রতিক এবং পূর্বের ঘটনাবলি নিয়ে কোনও ধরনের তৎপরতা দেখায়নি। এই কারণে বারবার ঘটে চলছে অনভিপ্রেত ঘটনা। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। জানা গেছে শনিবারের বিপর্যয়ের পরও রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের তরফে কোনও ধরনের তৎপরতা দেখানো হয়নি। ভবিষ্যতে এই ধরনের বিপদ ও ক্ষতি এড়াতে নেওয়া হয়নি উদ্যোগ। একই কথা খাটে গেইলের ক্ষেত্রেও।
এ অবস্থায় কার্যত একা কুম্ভ হয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে গ্যাস কোম্পানিকে। তাতে মিলছে না কাঙিক্ষত সাফল্য। গ্যাস কোম্পানির পাশাপাশি একযোগে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম এবং গেইল তৎপর হলে আশু সুফল মিলতে পারতো। এমনটাই মনে করেন ওয়াকিবহাল মহলের বড় অংশ। কেননা মহলটির বক্তব্য যখন তখন এবং একপ্রকার মর্জি মতো রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর সহ নানা ধরনের নিগমের তরফে মাটি খোঁড়াখুড়ির কাজ করতে গিয়ে গ্যাস কোম্পানির ক্ষতি এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা প্রতিকার গ্রহণ করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের সঙ্গে দ্রুত কথা বলা দরকার। আর সেই উদ্যোগ নিতে হবে সামগ্রিকভাবে গ্যাস কোম্পানির পাশাপাশি গেইল ও রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের তরফে। তবেই কাঙিক্ষত সুফল মিলতে পারে বলে মহলটির অভিমত।
গেইল এবং রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম সূত্রেও এই বক্তব্যের সমর্থন মিলেছে। বাস্তবে সর্বস্তরে চলছে, চলুক গোছের দায়সারা মনোভাব পোষণ করা হয়ে আসছে। তাতে দিনে দিনে বাড়ছে ভোগান্তি ও ক্ষতির বহর। অনেকে মনে করেন ঠাণ্ডা ঘরে বসে সর্বসুবিধা পেয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত গেইল ও রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম কর্তৃপক্ষের পক্ষে মানুষের দুর্ভোগ অনুমান করা সম্ভব নয়। পাইপলাইন গ্যাসের সংকটে কত মানুষকে যে কার্যত অভুক্ত থাকতে হয় তা তারা কল্পনাও করতে পারেন না। আর গ্যাস কোম্পানির আর্থিক ক্ষতি মানে আখেরে সাধারণ মানুষের ক্ষতি। ফলে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের তাতেও কিছু আসে যায় না। তাছাড়া রাজনৈতিক প্রশাসকদের ব্যস্ত থাকতে হয় এই জাতীয় কর্মসূচি নিয়ে। দলীয় সংগঠন সামলানোর মতো বহুবিধ কাজ করতে হয় তাদের। তাদের পক্ষে নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়, সমস্যা ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্ভব হলেও এর নিরসন করা বাস্তবে সম্ভব হয় না। এর জন্য সাধারণ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের তৎপরতা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়ায়। রাজ্যে এই তৎপরতার বড় অভাব পরিলক্ষিত হয়ে চলছে ওয়াকিবহাল মহলের কাছে। সেই কারণে প্রায় একই ঘটনা ঘটে চলছে বারবার। কেউ শিক্ষা নিতে রাজি হয় না। রাজ্য রাজধানী শহরবাসী নির্মম নিয়তির অমোঘ বিধানের মতো যন্ত্রণা বয়ে চলছেন। নিয়তির এই অমোঘ বিধানের বদল হতে পারে একমাত্র প্রশাসনের হাতুড়ির কড়া ঘা খেলে। এটা আদৌ পড়বে কি না,পড়লেও কবে পড়বে সেটাই আপাতত বড় আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আগরতলা শহর সহ রাজ্যবাসীর কাছে।