কর্নাটক ক্রাইসিস!!

 কর্নাটক ক্রাইসিস!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কর্নাটকে ক্রাইসিসে কংগ্রেস সরকার। মূলত উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারকে নিয়েই কর্নাটকে কংগ্রেসের মধ্যে প্রবল চাপানউতোর চলছে।এমনও খবর বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে যে ডিকে শিবকুমার বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন।এই অবস্থায় কংগ্রেস হাইকমান্ড কর্নাটক পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে নির্দেশ দিয়েছেন,কর্নাটক পরিস্থিতি নিয়ে কেউ যেন আলটপকা মন্তব্য না করেন।এই অবস্থায় কর্নাটকে কংগ্রেসের ক্রাইসিস চলছে তা বলাই যায়। একদিকে রয়েছে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ার অনুগামীরা,অন্যদিকে ডি কে শিবকুমারের অনুগামীরা। কংগ্রেস হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য করেই দুই শিবিরের তরফেই মন্তব্য নিক্ষেপ চলছে।কংগ্রেস হাইকমান্ড অবশ্য পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে চলেছে, বিশেষ করে কর্নাটকের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে।
প্রায় ২ বছর হল কর্নাটকে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় এসেছে।কর্নাটকে প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে জটিলতা চলছিল।সিদ্ধারামাইয়া গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ নেতা হিসাবে পরিচিত। এর আগে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সিদ্ধারামাইয়া।অন্যদিকে ডি কে শিবকুমারও কংগ্রেস রাজনীতিতে এক বর্ণময় প্রভাবশালী চরিত্র। ধনবান এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে গত বছর তেলেঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছিলো কংগ্রেস হাইকমান্ড। তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস ক্ষমতায় ফেরে। স্বভাবতই ডিকে শিবকুমার এক সফল
রাজনৈতিক নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
২ বছর আগে কর্নাটকে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী বাছাই নিয়ে রাজ্যে বেশ জটিলতা দেখা দিয়েছিলো।সেসময় সিদ্ধারামাইয়া এবং ডি কে শিবকুমারের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছিলো। শেষপর্যন্ত সিদ্ধারামাইয়াকে মুখ্যমন্ত্রী পদেই বসায় কংগ্রেস হাইকমান্ড।ডি কে শিবকুমারকে ডেপুটি করা হয়।শোনা যায়, সেসময় অলিখিত চুক্তি হয়েছিল যে,আড়াই বছর ফর্মুলায় ডি কে শিবকুমারকে পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে।কর্নাটকে বর্তমান ক্রাইসিসের মূলে কি সেই ফর্মুলা?সম্প্রতি এই ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে ডি কে শিবকুমারের শিবচতুর্দশীতে সদগুরুর এক অনুষ্ঠান কর্মসূচিতে যোগদান করা নিয়ে। কোয়েম্বাটোরে এই কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে ডিকে শিবকুমার যোগ দেন সম্প্রতি। এরপরই এ নিয়ে বিতর্ক দানা বাধে কেন শিবকুমার এই কর্মসূচিতে গেলেন?তিনি কি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একই অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য কংগ্রেস হাইকমান্ড থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন? যদিও শিবকুমার বলেছেন, তিনি লুকোচুরি করে সেই অনুষ্ঠানে যাননি। প্রকাশ্যে গেছেন, সবাই দেখেছেন এবং তিনি একজন হিন্দু।আমৃত্যু হিন্দুই থাকবেন।এ নিয়েই জল্পনার মধ্যে ডি কে শিবকুমার দিল্লীতে গিয়ে কংগ্রেস হাইকমান্ডের সাথে বৈঠক করেন। জল্পনা কিন্তু চলতেই থাকে।দুই শিবির থেকেই মন্তব্য ভেসে আসছে।এরই মধ্যে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা বীরাপ্পা মৈলি মন্তব্য করেন যে,আগামীদিনে শিবকুমারই কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ার অনুগামীরা অবশ্য বলছেন, হাইকমান্ড যা বলবে তাই মানা হবে।কে কী বলল তা দিয়ে কিছু হবে না।এক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, কংগ্রেস হাইকমান্ড রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দল মেটাতে দিনের পর দিন ব্যর্থ হচ্ছে। পাঞ্জাব দিয়ে শুরু হয়েছিলো। সিধু এবং অমরিন্দার সিং’র মধ্যে বিরোধের জেরে শেষপর্যন্ত অমরিন্দার সিংকে দল পর্যন্ত ছাড়তে হয়েছিলো।বিনিময়ে কংগ্রেসকে পাঞ্জাব থেকে ক্ষমতায় সরাতে হয়। একই অবস্থা রাজস্থানে চলে পাঁচ বছর ধরে। অশোক গেহলট এবং শচীন পাইলটের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে এবং এর ফলস্বরূপ রাজস্থান থেকেও কংগ্রেসকে সরতে হয়।প্রতিটি ক্ষেত্রেই কংগ্রেস হাইকমান্ড রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসের মধ্যে এই বিরোধ মেটাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়।বর্তমানে দেশের ৩ রাজ্যে মাত্র ক্ষমতাসীন কংগ্রেস। কর্নাটক, হিমাচল প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানায়।এর মধ্যে কর্নাটকে যদি এভাবে কংগ্রেসের অন্তর্বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে,তাহলে তা কংগ্রেসের জন্য বিরাট ক্ষতি।এর পুরো ফায়দা তুলবে বিজেপি।এমনও হতে পারে ডি কে শিবকুমারকে তুলে নেবে বিজেপি। কেননা ইয়েদুরাপ্পার পর কর্নাটকে বিজেপির সেই মাপের কোনও নেতা নেই বিজেপিতে। সেক্ষেত্রে ডি কে শিবকুমারকে তুলে নিতে পারলে বিজেপির বেজায় ফায়দা হবে। বিজেপি সুযোগ পেলে ঝোপ বুঝে কোপ মারবেই। অন্যদিকে কেরলেও শশী থারুরকে নিয়েও কংগ্রেস একটু বেকায়দায় রয়েছে। তাই কংগ্রেস হাইকমান্ডকে সর্বাগ্রে বলিষ্ঠ এবং প্রত্যয়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভবিষ্যতের স্বার্থে। একান্ত অনুগত, ব্যক্তির প্রতি আনুগত্য এই ভাবধারা কংগ্রেসকে ত্যাগ করতে হবে। মধ্যপ্রদেশেও কমলনাথকে নিয়ে কংগ্রেসের চরম বাড়াবাড়ির জন্য মধ্যপ্রদেশে আজ কংগ্রেসের পায়ের তলার মাটি পুরো আলগা হয়ে গেছে। রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে দলের যদি এই হাল হয় তাহলে বিজেপি আমলে আখেরে কংগ্রেসমুক্ত ভারতের যে স্বপ্ন বিজেপির এর হয়তো বাস্তবায়ন দেখা যাবে। সুতরাং কংগ্রেসকেই ঠিক করতে হবে তারা কী চায়। রাজ্যে রাজ্যে গোষ্ঠীকোন্দলকে তারা কি জিইয়ে রাখতে চায় নাকি কড়া পদক্ষেপ নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য বার্তা দিতে চায় তারা। কর্নাটক নিয়ে কংগ্রেসকে অচিরেই বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.