বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দুর্নীতি নড়েচড়ে বসলো কেন্দ্রীয় মন্ত্রক!!

 বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দুর্নীতি নড়েচড়ে বসলো কেন্দ্রীয় মন্ত্রক!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা কেন্দ্রীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য সরকার শীতঘুমে থাকলেও নড়েচড়ে বসলো খোদ কেন্দ্রীয় সরকার।শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে নয়াদিল্লীতে শিক্ষামন্ত্রকের কার্যালয়ে টানা দুদিন হাজিরা দিতে বাধ্য হলেন উপাচার্য। যদিও উপাচার্য বর্তমানে দিল্লীতে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বৈঠকে রয়েছেন।তবে এই বৈঠকে গিয়েও উপাচার্য সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য আধিকারিকদের নিস্তার নেই বলে খবর। এমনকী আগামী দু’একদিনের মধ্যেই ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য আধিকারিকরাও নয়াদিল্লীতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বলে খবর।এর মূল কারণ একটাই, চাকরি ও শিক্ষা দুর্নীতি।এই দুর্নীতির কারণে সারা দেশের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এমনকী রাজ্যের হাজারো ছাত্রছাত্রী এবং রাজ্যের মেধাবান যুবক যুবতীরা এর খেসারত দিচ্ছেন। জানা গেছে, এখন শিক্ষা ও নিয়োগ দুর্নীতি রোধে রাজ্যেও আসছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ টিম। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, এর আগেই প্রমাণ লোপাট হয়ে যাবে।
অভিযোগ, রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার জন্য অধিকাংশ চাকরি গিয়েছে বহি:রাজ্যে। অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে বহি:রাজ্যের বেকারদের চাকরি প্রদানের পর এখন গ্রুপ বি, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদের চাকরিও বহি:রাজ্যে যাচ্ছে। এ বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে।যদিও বেকারদের চাপে গত সোমবার গ্রুপ বি, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদের জন্য আরও একবার ‘স্কিল টেস্ট’ নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাতেও কিছু লাভ হয়নি।
উল্টো বহি:রাজ্য এবং রাজ্যের
একাংশ নেতা, মন্ত্রী, আমলা তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির সুযোগ নিচ্ছেন। এই নেতা, মন্ত্রীদের চাপে চাকরি যাচ্ছে বহি:রাজ্যে এবং রাজ্যের প্রভাবশালী পরিবারে, আর এই সুযোগে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাদের পরিবারে চাকরি বাগিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে মেধা উপেক্ষিত হচ্ছে। প্রভাবশালীদের একটাই লক্ষ্য, মোটা কেন্দ্রীয় বেতনের চাকরি তাদের ঘরে যেতে হবে।এভাবেই অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর,অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ইঞ্জিনীয়ার,সেকশন অফিসার, সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট, সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাসিস্টেন্ট, ম্যানেজার, অতিথি শিক্ষক সহ অন্য পদে চাকরি হয়েছে বলে গুঞ্জন। অ্যাসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার চাকরিও প্রভাবশালীদের পরিবারেই যাচ্ছে।
ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, এখন এই মন্ত্রী, আমলা, বিধায়করাই তাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরি রক্ষায় উপাচার্য সহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বলে খবর। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আশা ক্ষীণ। এর আগেও ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দশ কোটি টাকার ই-বুক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। বিধানসভায় পর্যন্ত ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাহ দুর্নীতির বিষয় উঠেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টো যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা আরও সুনামের সাথে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং দেশে ও বিদেশে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত। সর্বক্ষেত্রেই বঞ্চিত হলেন বেকার ও রাজ্যের ছাত্রছাত্রী এবং গবেষক সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা।
অভিযোগ, এখন আবার একই কায়দায় অ্যাসিস্টেন্ট এলডিসি, হিন্দি টাইপিস্ট, ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট, ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্টেন্ট পদেও চাকরি প্রদানের রূপরেখা তৈরি হয়ে গিয়েছে। যার উজ্জ্বল নিদর্শন হলো ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট পদের নিয়োগ পরীক্ষা। গত পনেরো ফেব্রুয়ারী এই পদের জন্য লিখিত পরীক্ষা হয়। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। তবে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল দুবার প্রকাশের পরই এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে, যা ভূ-ভারতে ব্যতিক্রম।
ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটি বিজ্ঞপ্তি ঘিরেও চাকরি দুর্নীতি বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।যেসব চাকরিপ্রার্থী বাইশ এবং তেইশ ফেব্রুয়ারী স্কিল টেস্টে উপস্থিত থাকতে পারেনি তাদের সাতাশ ফেব্রুয়ারী সকালে পুনরায় স্কিল টেস্ট নিয়েছে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, বাইশ ও তেইশ ফেব্রুয়ারী
যাদের অন্যায়ভাবে বাঁকাপথে চাকরি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাদের অনেকেই অনুপস্থিত ছিলো। শুধুমাত্র তাদের জন্য সাতাশ ফেব্রুয়ারী আবার স্কিল টেস্টের নাটক হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, মাল্টি টাস্কিং স্টাফ গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকরি দুর্নীতি চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে বহি:রাজ্যের বেকারের ভাগ্য খুলছে বলে খবর। অথচ ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় কুড়ি বছর ধরে চাকরিরত অনিয়মিত ও চুক্তিবদ্ধ কর্মীদের নিয়মিত করা হচ্ছে না। এমনকী তাদের বেতনভাতা পর্যন্ত বৃদ্ধি বন্ধ। অন্যদিকে, বহি:রাজ্যের বেকার ও নেতা, মন্ত্রী, আধিকারিকদের পরিবারের প্রার্থীদের চাকরি প্রদানের মেলা চলছে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে।এভাবেই রাজ্যের মেধাবান যুবক যুবতীদের ঠকানো হচ্ছে।’

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.