বর্ষপূর্তির সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় কংগ্রেস-সিপিএম!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জগৎ প্রকাশ নাড্ডা রবিবার রাজ্যে এসে মূলত কন্যা সন্তানদের জন্য রাজ্য সরকারের দুটি নয়া যোজনার ঘোষণা করে গেলেন।এর একটি ‘মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা’ এবং অন্যটি ‘মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনা’। বর্তমান রাজ্য সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই দুই যোজনার কথা জানিয়ে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনায় রাজ্যের অন্ত্যোদয়ভুক্ত পরিবারের কন্যা সন্তানদের জন্মের পরই রাজ্য সরকার এককালীন ৫০ হাজার টাকার একটি বন্ড জারি করবে।যা ১৮ বছর পূর্ণ হলে ১০ লক্ষ টাকার অর্থরাশিতে পরিবর্তিত হয়ে ভবিষ্যৎ নির্মাণে ভূমিকা গ্রহণ করবে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনায় ১৪০ মেধাবী উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ (সকল বোর্ড মিলিয়ে) ছাত্রীরা স্কুটি প্রাপ্তির সুযোগ পাবে।
রাজধানী আগরতলার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে এ দিন ছিলো ভারতীয় জনতা পার্টি ত্রিপুরা প্রদেশ আয়োজিত বর্তমান রাজ্য সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক জনসমাবেশ। এই জনসমাবেশ থেকেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেন, আজ আমি ত্রিপুরা সরকারের দুটি বড় স্কিম ঘোষণা করছি। দুটি প্রকল্পেরই পরিকল্পনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা।জানান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী।এ দিন জনগণের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে আপ্লুত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার জনগণের এই ব্যাপক উৎসাহ মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার নেতৃত্বে সরকারের প্রতি ক্রমবর্ধমান আস্থারই প্রতিফলনকে প্রমাণিত করে। তিনি বলেন, জনগণের সেবক হিসাবে আমরা ত্রিপুরার আশীর্বাদ অর্জন করছি। আমরা তৃণমূল স্তরের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত কল্যাণ নিশ্চিত করছি।
জনসভা থেকে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে সম্বোধন করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নাড্ডা বলেন, আমাদের গৃহীত নীতিগুলি শুধু কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ত্রিপুরার মানুষের সামগ্রিক উপকার সাধনে আমরা কাজ করছি। একই সাথে বলেন, কেন্দ্রীয় বিভিন্ন প্রকল্পগুলি সচিবালয়ের ফাইলে বন্দি থাকাও আমাদের লক্ষ্য নয়।এগুলিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই মূল লক্ষ্য এই সরকারের। লোকসভা নির্বাচনের পর এটি তার প্রথম সফর হওয়ায় এ দিন বলেন, আমি ত্রিপুরা জনগণকে ২০১৯ সালে এবং ২০২৪ সালে বিজেপি প্রার্থীদের বিপুল ভোটে নির্বাচিত করার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। তার কথায়, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিজেপি নয়। মানুষের সেবা করাই এই ডবল ইঞ্জিন সরকারের মূল্য লক্ষ্য। আরও বললেন, আমাদের নীতি ত্রিপুরার ভূমিতে জনসাধারণকে লাভ পৌঁছানোর জন্য হয়ে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে বলেন, এই সরকার এখন একজনের আওয়াজ হয়ে উঠেছে।
রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের ভোটের হার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,২০১৪ সালে দেশে যখন প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তখন ভারতীয় জনতা পার্টির শতকরা ভোটের হার ছিল ৩১.৩ শতাংশ। মানুষের আস্থা কুড়িয়ে ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬.৭ শতাংশে। ২০২৪ সালে এই হার আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাস আছে বলেই তা সম্ভব হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আরও বললেন, মধ্যপ্রদেশে টানা ৪ বার ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে বিজেপি শাসিত সরকার। এছাড়াও এই সরকার হ্যাটট্রিক করেছে হরিয়ানায়। গোয়াতেও তিন তিনবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার। মণিপুর, উত্তরাখণ্ড, আসামেও টানা দুবার চলছে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার। এদিক থেকে এর রাজ্যের প্রসঙ্গ টেনে গোটা রাজ্যবাসীর উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি ইন্টারনেট, রেলওয়ে, এযাারওয়ের প্রসঙ্গও টানলেন তার বক্তব্যে। বললেন, পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক নজির সৃষ্টি করেছে এ রাজ্য। যা তিনি এর আগে লক্ষ্য করতে পারেননি। ১০ বছর আগে তিনি রাজ্যে এসে বিমানবন্দর থেকে শহর আগরতলার অভিমুখে প্রবেশ করতে যেভাবে খানাখন্দে পরিণত রাজপথ দেখতে পেতেন তা এখন আর নেই। ধীরে ধীরে ফোর লেন, ব্যাপক উন্নয়ন বললেন মন্ত্রী। বক্তব্য রাখার আগে এদিন মঞ্চ থেকে দ্বিতীয় বিজেপি সরকারের ২ বছরের জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন কাজের খতিয়ান সম্বলিত একটি পুস্তিকারও আবরণ উন্মোচন করেন তিনি। তার সাথে মঞ্চে সে সময় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা থেকে শুরু করে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সংযোজক তথা সাংসদ ডা. সম্বিত পাত্রা, ডা. রাজদীপ রায়, সংগঠনমন্ত্রী রবীন্দ্র রাজু, প্রদেশ বিজেপি সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, সাংসদ কৃতি সিং দেববর্মা, মন্ত্রী রতন লাল নাথ থেকে শুরু করে প্রণজিৎ সিংহ রায়, সুশান্ত চৌধুরী, টিংকু রায় এবং মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য সদস্যা, প্রদেশের অন্যান্য নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আগে এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বিগত দিনে রাজ্যের বাম শাসনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। বলেন, মানুষ কংগ্রেস সিপিএমকে আর কোনও অবস্থায় গ্রহণ করবে না। আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন বলে ২০১৮ সালের পর ত্রিপুরায় আবারও বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি রাজ্যে খুন, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক হিংসা, উগ্রপন্থীদের সৃষ্টি করার কারিগর হিসাবে সিপিএমকেই দোষারোপ করেন।
তুলোধুনো করেন কংগ্রেসকেও। কংগ্রেসও তাদের থেকে ধার নিয়ে একই ধাঁচে শাসন ব্যবস্থা চালিয়েছে বলে তিনি জানান। চাকরি কেলেঙ্কারি, স্বজনপোষণ, দুর্নীতি, স্কুল কলেজে গুন্ডাগিরি, অফিস কাছারিতে একসময় আন্দোলনের নামে গুন্ডাগিরি চালিয়েছে তারা। তিনি বলেন, যারা গণতন্ত্রের কথা বলে তাদের সময়েই রাজ্যে দুই সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল। কোথায় ছিল গণতন্ত্র? যার বিচার এখন চলছে। আমি নিশ্চিত আগামীদিনে যারা এই খুন সংঘটিত করেছে সেই বিচার অবশ্যই হবে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও এখন শান্তি ফিরে এসেছে রাজ্যে। কিছুদিন আগেও এনএলএফটি এবং এটিটিএফ বৈরীরা চুক্তি মোতাবেক অস্ত্র সমর্পণ করেছে। সন্ত্রাসবাদ মুক্ত হয়েছে ত্রিপুরা রাজ্য। প্রধানমন্ত্রীর হিরা মডেলের কারণে জাতীয় সড়ক, ইন্টারনেট, রেলওয়ে, এয়ারওয়ের প্রভূত উন্নতি হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ত্রিপুরায় ২০১৮ থেকে এখনও পর্যন্ত ১৬,৪৫১ জনকে সরকারী চাকরি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ৫,৭৭১ জনকে আউটসোর্সিংয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। সরকারী ও বেসরকারী ক্ষেত্রে সিকিউরিটি গার্ড হিসাবে ২,৯৩৬ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। স্বচ্ছ নিয়োগ নীতি জারি রেখেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দিনগুলিতে রাজ্যে আরও ৮.০০০ চাকরি প্রদানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে জনসভাশেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের উদ্দেশে রওনা দিয়ে সেখানে গিয়ে রাজ্যবাসীর মঙ্গল কামনায় পুজো দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এরপরই সেখান থেকে রাজধানী আগরতলায় ফিরে রাজ্য অতিথিশালায় প্রদেশের বিভিন্ন নেতৃত্বের সাথে এক সাংগঠনিক বৈঠকে মিলিত হন তিনি। দলীয় সূত্রে এই বৈঠকে রাজ্য কমিটির সাংগঠনিক নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। এছাড়াও রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এই বৈঠক থেকে বিশদ জানতে চান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা সহ সংগঠন মহামন্ত্রী রবীন্দ্র রাজু, প্রভারী ডা. রাজদীপ রায়, উত্তর পূর্বাঞ্চলের সংযোজক তথা সাংসদ ডা. সম্বিত পাত্রা, মন্ত্রিসভার বিভিন্ন সদস্য সদস্যা, প্রদেশের বিভিন্ন পদাধিকারীরাও উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকশেষে রাতেই দিল্লীর উদ্দেশে রাজ্যত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।