সংবাদপত্রে টেণ্ডারের বিজ্ঞাপন, সংক্রান্ত অর্থ দপ্তরের বিতর্কিত সার্কুলার ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া!!
স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কাজে ফের বিপর্যয়, দুর্ভোগে মানুষ!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আবারও ক্ষতি হলো পাইপলাইন গ্যাসের পরিবহণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার।আবারও বিপর্যয় ঘটলো আগরতলায়।বিপাকে পড়লো সাধারণ মানুষ। আসলে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কাজ নিয়ে মাথাব্যথা যেন কিছুতেই কমতে চাইছে না। কেননা এই প্রকল্প রূপায়ণের সুবাদে প্রায় প্রতিদিন নিত্যনতুন দুর্ভোগ সইতে হয় সাধারণ মানুষকে। যন্ত্রণাক্লিষ্ট পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় রাজ্যের রাজধানী শহর আগরতলাবাসীকে।একের পর এক অঘটন ঘটে চলছে।ভুতলে থাকা পানীয় জলের পাইপে মিশছে নোংরা আবর্জনা। মিশছে পোকামাকড়।বন্ধ হয়ে পড়ছে পাইপ লাইনের গ্যাস পরিবহণ ও সরবরাহ।দুদিন আগে শহরের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ কৃষ্ণনগরের বিজয় কুমার চৌমুহনী সংলগ্ন এলাকায় নলবাহিত জলে মিশে গেছে নোংরা আবর্জনা, পোকা, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি।এ নিয়ে
এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।দৈনিক সংবাদে এ নিয়ে তথ্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের পর শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। এই দৌড়ঝাঁপ অবশ্য শেষ হয়ে যায় সহসা। আর দৌড়ঝাঁপ শেষ হতে না হতেই ফের কৃষ্ণনগর এলাকাতেই দেখা দিয়েছে জনদুর্ভোগ।আর সেটা হয়েছে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কাজের সূত্রে। আগরতলা শহরের কৃষ্ণনগর-রামনগরের সংযোগস্থল কের চৌমুহনী এলাকায় মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে ভূতল গ্যাস পরিবাহী ও সরবরাহকারী ব্যবস্থার। ত্রিপুরা প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড তথা টিএনজিসিএলের তিন ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের সংযোগস্থল সুইচ ভাল্ব চেম্বারের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কাজের ফলে।একই কারণে টানা প্রায় এক ঘন্টা ধরে উল্লেখিত অংশ দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়েছে। তাতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বিপুল অঙ্কের। পাশাপাশি কের চৌমুহনী সংলগ্ন কৃষ্ণনগর ও রামনগর এলাকার পাঁচশোর বেশি বাড়ি সহ বেশ কিছু খাবারের দোকানে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় অলিখিত অরন্ধন।
যন্ত্রদানব ডজার ব্যবহার করে মাটি খোঁড়ার কারণেই এই অঘটন ঘটেছে বলে খবর।দৈনিক সংবাদে লাগাতর সংবাদ পরিবেশন সহ বিভিন্ন মহল থেকে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কাজ রূপায়ণে কোনও কিছু না ভেবে ডজার ব্যবহার নিয়ে আপত্তি উঠলেও তাকে গ্রাহ্য করার নামগন্ধ পর্যন্ত নেই।তার কুফল হিসাবে নিয়মিত এবং নিত্য নতুন বিপদের সৃষ্টি হয়ে চলছে।বাড়ছে জনদুর্ভোগ।অথচ এ নিয়ে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ সহ এর ঠিকাদার সংস্থার মোটেও ভ্রূক্ষেপ নেই বলে খবর।
গত কয়েকদিনের মতো বুধবার,বারো মার্চ সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন অংশে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় নালা নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু হয়। একই কাজ চলে কের চৌমুহনী এলাকাতেও।যথারীতি কোনও ধরনের সমন্বয় রক্ষা না করেই কাজ করা হয়। তখন বিকাল পৌনে পাঁচটার কাটা অতিক্রম করেছে ঘড়িতে।সারাদিনের মতো যন্ত্রদানব ডজারের দাঁত দিয়ে চলছে মাটি খোঁড়ার কাজ।কের চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা প্রবীণ আইনজীবী কল্যাণ নারায়ণ ভট্টাচার্যের বাড়ির কাছে আচমকা ডজারের দাঁতের সঙ্গে মাটির তলা থেকে উঠে আসে গ্যাস পরিবাহী ও সরবরাহকারী পাইপ সহ সুইচ ভাল্ব।সোঁ সোঁ শব্দে তীব্র গতিতে শুরু হয় ব্যাস নির্গমন।যথারীতি জনমনে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।দেখা দেয় চাঞ্চল্য এবং উত্তেজনা।
স্থানীয় সূত্রে পাওয়া খবর অনুসারে এরপর নালা নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য মাটি খোঁড়ার কাজ হঠাৎ করে বন্ধ রাখা হয়। এই কাজের সঙ্গে যুক্তরা যেন কিছুই হয়নি ভাব করে বসে থাকে। উদ্ভূত সমস্যা নিরসনের জন্য স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আধিকারিক, ঠিকাদার সহ৬ কারোর তরফে গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে অভিযোগ। বেশ কিছু সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর স্থানীয়দের উদ্যোগে উল্লেখিত সমস্যার কথা জানিয়ে খবর দেওয়া হয় গ্যাস কোম্পানিতে। অবশেষে ঘটনার প্রায় এক ঘন্টা পর কোম্পানির লোকজন এসে গ্যাসের উৎস বন্ধ করে। এই ফাঁকে বিপুল পরিমাণে গ্যাস ফাউ নষ্ট হয়।৬ বাড়তি আর্থিক ক্ষতি হয় ততক্ষণে।
গ্যাসের উৎস বন্ধ করার পরই শুরু হয় জনদুর্ভোগ। মানুষের বাড়িঘরে ধীরে জীরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ বিপর্যস্ত এলাকায় সমস্যা নিরসনে হাত লাগানো হয়। জনদুর্ভোগ যেন মাত্রা না ছাড়ায় সে দিকে লক্ষ্য রেখে এর সংস্কার কাজ চলছে বলে গ্যাস কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে। মানুষের যন্ত্রণা অতটা সম্ভব এড়াতে আপাতত ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি কেটে পাইপ লাগানো হবে। তারপর বেশি রাতে ক্ষতিগ্রস্ত সুইচ ভাল্বটি বদলানো হবে। সেই ক্ষেত্রে মানুষের তেমন কোনও অসুবিধা হবে না। তবে তাড়াতাড়ি কাজ করলেও এর জন্য প্রায় তিন ঘন্টার মতো সময় লাগবে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে রাত নয়টা গাদ ফের৫ গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে উল্লেখিত এলাকায়।
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের শেষ মাস মার্চ চলছে এখন। ফলে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে ধুম লেগেছে রাজ্যে।চলছে বাড়তি তোড়জোড়। বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে অর্থবর্ষের শেষ মাসে বরাবরের মতো তৎপরতা চলছে। একইভাবে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কাজ রূপায়ণেও বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আর সেটা করতে গিয়েই প্রায় প্রতিদিন অঘটন ঘটছে আগরতলায়। এর শুরু হয়েছে পয়লা মার্চের আগে থেকেই। পয়লা মার্চ জল পরিষদের তরফে নলবাহিত জল সরবরাহের কাজের সুবাদে শহরের টাউন প্রতাপগড়ে মহারাজগঞ্জ বাজার এলাকায় ঘটেছে বড়সড় বিপদ। কোনও কিছু না ভেবে ভুল জায়গায় কাজ করার সময় ছিঁড়ে যায় আট ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস পরিবাহী পাইপ। ধরে যায় আগুন। শহর জুড়ে দেখা দেয় আতঙ্ক। ছড়িয়ে পড়ে৭ চাঞ্চল্য এবং উত্তেজনা। তার আগে শহরের আরএমএস চৌমুহনী সংলগ্ন এলাকায় স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কাজের দৌলতে গ্যাস ও পানীয় জলের পাইপ ফেটে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এছাড়া প্রায় প্রতিদিন এই জাতীয় অঘটন ঘটছে। অথচ এর একটা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ নেই। ফলে বিপদ বাড়ছে অনবরত।