কৃত্রিম ধাতব হৃদপিণ্ড নিয়ে একশো দিন বেঁচে রেকর্ড সৃষ্টি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিশ্বের প্রথম মানুষ হিসেবে টাইটানিয়াম ধাতুর তৈরি কৃত্রিম হৃদ্যন্ত্র নিয়ে ১০৫ দিন বেঁচে থাকলেন চল্লিশোর্ধ্ব এক অস্ট্রেলিয়ান ব্যক্তি।তার হৃদপিণ্ড সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছিল। হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপন করাই ছিল একমাত্র বিকল্প।কিন্তু সেই মুহূর্তে মানব হৃদ্যন্ত্রের কোনও দাতা পাওয়া যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সেন্ট ভিনসেন্ট’স হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা পরীক্ষামূলক ভাবে ধাতব কৃত্রিম হৃদ্যন্ত্রটি ওই ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন – করেন। টাইটানিয়ামের তৈরি হৃদপিণ্ড নিয়ে কোনও মানুষের তিন মাসের বেশি বেঁচে থাকার ঘটনাকে ‘যুগান্তকারী ক্লিনিক্যাল সাফল্য’ হিসাবে উল্লেখ করেছে প্রখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল ‘নেচার’। না, কৃত্রিম ধাতব হৃদপিণ্ড নিয়ে ১০৫ দিন বেঁচে থাকার পর ওই অস্ট্রেলীয় ব্যক্তি মারা যাননি।ততদিনে মানব হৃদপিণ্ড পাওয়া যায়। টাইটানিয়ামের হৃদপিণ্ড সরিয়ে তার জায়গায় মানব হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য ফের জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়। সিডনির সেন্ট ভিনসেন্টস হাসপাতালের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অস্ত্রোপচারের পর ওই ব্যক্তি (নাম প্রকাশ করা হয়নি) একেবারে সুস্থ হয়ে উঠছেন।নেচার পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশ, ‘বাইভাকর’ নামে পরিচিত টাইটানিয়ামের তৈরি হৃদপিণ্ডের মতো যন্ত্রটি বিশ্বব্যাপী ছয়জনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তবে এক মাসের বেশি সময় এটি নিয়ে বেঁচে থাকা ব্যক্তি ইনিই প্রথম। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিক্টোরিয়ান হার্ট ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন জুলিয়ান স্মিথ বলেন, ‘এটি নিঃসন্দেহে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।’সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসকুলার সার্জন সারাহ আইটকেন বলেন,’এটি একটি অবিশ্বাস্য উদ্ভাবন।’তবে এই যন্ত্র ব্যবহারকারীদের কর্মক্ষমতার মাত্রা এবং এর চূড়ান্ত ব্যয়ের বিষয়ে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি বলে জানান তিনি। ডা. আইটকেন বলেন, ‘এই ধরনের গবেষণা করা সত্যিই কঠিন, কারণ এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এতে জড়িত অস্ত্রোপচারও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।’ এই সাম্প্রতিক সাফল্য গবেষকদের বাস্তব পরিবেশে এই যন্ত্রের সঙ্গে মানুষের খাপ খাওয়ানোর প্রক্রিয়া বোঝার সুযোগ করে দেবে বলে মনে করেন আমেরিকার হিউস্টনের টেক্সাস হার্ট ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এবং হার্ট ফেইলিওর বিশেষজ্ঞ কার্ডিওলজিস্ট জোসেফ রজার্স। তবে কিছু কার্ডিওলজিস্ট মন্তব্য করেছেন, বাইভাকর ডিভাইসটি ভবিষ্যতে এমন ব্যক্তিদের জন্য স্থায়ী বিকল্প হয়ে উঠতে পারে, যারা বয়স বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত কারণে হার্ট প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত নন। যদিও এই ধারণাটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। আমেরিকায় প্রায় ৭০ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হার্ট ফেইলিওরের মতো সমস্যায় ভুগছেন।কিন্তু ২০২৩ সালে মাত্র ৪,৫০০টি হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল,যার অন্যতম কারণ দাতার স্বল্পতা। বাইভাকর যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছেন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়র ড্যানিয়েল টিমস। তিনি এই ডিভাইসের নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই সংস্থার মূল অফিস ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন বিচে এবং অস্ট্রেলিয়ার সাউথপোর্টে। এই ডিভাইসটি একটি সম্পূর্ণ হৃদ্যন্ত্রের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়। এটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে পাম্প করে রক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করে। এতে ম্যাগনেটিকালি সাসপেন্ডেড রোটর ব্যবহার করা হয়। এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে নিয়মিত পালসে রক্ত সরবরাহ করে।এ ডিভাইসে
বাইরে থেকে একটি কর্ডের (তার) মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এটি একটি পোর্টেবল কন্ট্রোলারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এ কন্ট্রোলারটি দিনের বেলায় ব্যাটারিতে চলে এবং রাতে বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে চলে। বাইভাকর প্রতিস্থাপন করা অস্ট্রেলিয়ান ব্যক্তির দেহে গত নভেম্বরে ছয় ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে টাইটানিয়ামের তৈরি কৃত্রিম হৃদ্যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারীতে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং তিনি হাসপাতালের কাছেই একটি একটি বাড়িতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন। মার্চে ওই ব্যক্তি হৃদপিণ্ডদাতার খোঁজ পান।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ামক প্রশাসন (এফডিএ) আরও ১৫ জন রোগীর উপর বাইভাকর পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে।তবে সারাহ আইটকেন বলেন, ‘এটি সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য চিকিৎসা পদ্ধতি হয়ে উঠতে এখনও বহু পথ বাকি।’