রুখিয়ায় গ্যাস টারবাইন রূপান্তরের কাজ,শুরু হচ্ছে ১-২ মাসের মধ্যে, বিদ্যুতে আগামী পরিকল্পনা জানালেন মন্ত্রী!

অনলাইন প্রতিনিধি :-যাবতীয় প্রস্তুতি
চূড়ান্ত।চলতি বছরের আগামী এপ্রিল মাসের শেষ দিকে অথবা মে মাসের প্রথম দিকে শুরু হবে রুখিয়ার ৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ওপেন সাইকেল গ্যাস টারবাইনকে ১২০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইনে রূপান্তরিত করার কাজ। এই রূপান্তরের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার না করেই ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এই বিশাল উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য আর্থিকভাবে সহায়তা করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৯৩৫ কোটি টাকা। এই প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কথা জানান, রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ।তিনি জানান, এটি একটি ইউনিক প্রজেক্ট।মাটির নিচে গ্যাসের মজুত ভান্ডার ক্রমশ শেষ হয়ে আসছে।তাই ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ-এর জোগান অক্ষুণ্ণ রাখতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।এই প্রযুক্তিতে কম গ্যাস ব্যবহার করে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। বর্তমানে রুখিয়া থেকে ১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।এই রূপান্তরের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে রাজ্যের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আরও বাড়বে।
রাজ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয়ে বিদ্যুৎ দপ্তরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্ত্রী আরও জানান, গোমতী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটিকে মেরামত এবং আধুনিকীকরণ করে সেখান থেকে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সব থেকে কম খরচ হচ্ছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এর জন্য ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার কর্পোরেশন (এনএইচপিসি) এর সাথে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। তারা এর জন্য প্রয়োজনীয় ডিপিআর তৈরি করছে। মহারাণী মাইক্রো হাইড্রো প্রকল্পটি গত ৩৫ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এই প্রকল্পটিকে পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষম করার জন্য প্রয়োজনীয় ডিপিআর তৈরি করা হচ্ছে।প্রকল্পটি চালু হলে এখান থেকে ১.০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।
মন্ত্রী জানান, এছাড়াও ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার কর্পোরেশনের সঙ্গে রাজ্যে পাম্প স্টোরেজ নির্মাণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে কাজ অনেকটাই এগিয়েছে।এই প্রকল্পের আমুমানিক ব্যয় ৪,৮০০ কোটি টাকা। পাম্প স্টোরেজ প্রকল্পটি হলো, দিনের বেলায় সৌর শক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বড় পাম্পের মাধ্যমে উপরে নির্মিত বিশাল জলাধারে জল তোলা হবে। রাতে সেই জল ছেড়ে টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এই প্রকল্পের জন্য ধলাই জেলার ছামনুতে বিশাল এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এই একটি মেঘা প্রজেক্ট। এই প্রকল্পে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই পাম্প স্টোরেজ প্রকল্পটি রাজ্যে নির্মিত হলে এটাই হবে উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে এ জাতীয় প্রথম প্রকল্প। এর ফলে রাজের আর্থিক প্রগতির ক্ষেত্রেও প্রভূত উন্নতি সাধিত হবে।
মন্ত্রী জানান, ওটিপিসি’র সঙ্গে ব্যটাারি স্টোরেজ নির্মাণের সম্ভাবনার ক্ষেত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই প্রকল্পে আনুমানিক ব্যয় প্রতি মেগাওয়াটে ৫.০ কোটি টাকা। এছাড়াও রাজ্যের ১০টিস্থানে ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রী আরও জানান, শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেই নয়, ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশনের উন্নয়নেও বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেগুলি হলো, সাটডাউন না নিয়ে পরিবাহী লাইনের মেরামতি করা, যাতে করে ঝড় বৃষ্টির সময়ে বজ্রপাতের কারণে পরিবাহী লাইনের কোনও ক্ষতি না হয় এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। ড্রোন দ্বারা উচ্চ ক্ষমতায়যুক্ত পরিবাহী লাইনে পর্যবেক্ষণ। এই কাজ চলতি বছরের জুন জুলাই মাসে শুরু হয়ে যাবে। রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিবাহী ব্যবস্থাপনায় উচ্চ ক্ষমতাযুক্ত মোবাইল সাব-স্টেশনের অন্তর্ভুক্তিকরণ। যা বর্তমান কোনও সাব-স্টেশনে সমস্যা দেখা দিলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে জরুরিভিত্তিক পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে। বিদ্যুৎ পরিবাহী ব্যবস্থাপনায় মোবাইল টাওয়ারের (Emergency Restoration system) সংযুক্তিকরণ। যাহা কোনও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাহী টাওয়ারের জরুরিভিত্তিক প্রতিস্থাপন সাহায্য করবে। কুমারঘাটস্থিত পূর্ব কাঞ্চনবাড়িতে আরও স্টেট লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার (এসএলডিসি) স্থাপন করা হবে। যা আগরতলাস্থিত এসএলডিসির ব্যাক আপ হিসাবে কাজ করবে। এছাড়াও ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রে তিনটি ৩৩ কোভি গ্যাস ইনসুলেটেড সাব স্টেশন স্থাপনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। ৪৫টি ইলেকট্রিক ভেহিকেল চার্জিং স্টেশন বসানোরও পরিকল্পনা রয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক-এর আর্থিক সহায়তায় আন্ডার গ্রাউন্ড কেবল লাইন-১৪ কিলোমিটার,কভার্ড কন্ডাক্টর- ১,৪৪০ কিলোমিটার, এলটি এবি ক্যাবল ১,৫০০ কিলোমিটার এবং ৪.০ লক্ষ স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়াও আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবার যাদের মাসিক বিদ্যুৎ ব্যবহার ১০০ ইউনিট-এর কম, এরকম ৮০,০০০ গ্রাহকদের ঘরে মোট ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।