গাবার্ডের পর্যবেক্ষণ!!

 গাবার্ডের পর্যবেক্ষণ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

গত রবিবার মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স ইনটেলিজেন্স চিফ তথা আমেরিকার গোয়েন্দা প্রধান ভারত সফরে এসেছেন।মাত্র দুই মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে প্রবেশের অল্পদিনের মধ্যেই দেশটির গোয়েন্দা প্রধানের ভারত সফর আর পাঁচটা সাধারণ ঘটনার মতোই মান্যতা পেত।কিন্তু ঘটনার গতিধারা যে সেই পথে এগোচ্ছে না, সাম্প্রতিক কিছু রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের যোগসূত্র খুঁজে দেখলেই বিষয়টি ইঙ্গিতপূর্ণ মনে হচ্ছে।
গত বছর আগষ্ট মাসে রাজনৈতিক পালাবদলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর,সেই দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও প্রাণহানির ঘটনা বাড়তেই থাকে।এই নিয়ে প্রথম দিন থেকে উদ্বেগ জানিয়ে চলেছে নয়াদিল্লী।ডিসেম্বর মাসে নয়াদিল্লী সুনির্দিষ্টভাবে জানায় যে, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর সেখানে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ২২০০ টির বেশি ঘটনা ঘটেছে।যদিও নয়াদিল্লীর এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা।এরপর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বাংলাদেশের তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে কথা বলেন।কিন্তু তাতে করেও পরিস্থিতির বিশেষ একটা হেরফের হয়নি।গত ফেব্রুয়ারী মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদি আমেরিকা সফরকালে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং সেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পকে ভারতের উদ্বেগের কথা জানান।সেই সাক্ষা পর্বে ট্রাম্প স্পষ্টই বলেছিলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আমেরিকার কোন হাত নেই এবং বাংলাদেশের ভেতরকার রাজনীতিতে আমেরিকা গোপনে কোন কলকাঠিও নাড়ছে না। মোদির মার্কিন সফরের পর এবার আমেরিকার গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গাবার্ড ভারত সফরে এসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন সরাসরি।মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান বললেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ক্যাথলিক এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।মার্কিন সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।ট্রাম্পের নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে বলে জানান গাবার্ড।সেই সঙ্গে বাংলাদেশে ইসলামিক মৌলবাদের উত্থান প্রসঙ্গে কড়া মন্তব্যও করেছেন তুলসী।বললেন,ইসলামি সন্ত্রাসবাদীরা নানা দেশে ইসলামি খিলাফতের আদর্শে
শাসনক্ষমতা হাতে নিতে চায় এবং ইসলামি সন্ত্রাসবাদের এই বিপদ
এখন বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করেছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসন এই আদর্শকে পরাস্ত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
যদিও মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের ভারত সফরের মূল উদ্দেশ্যই ছিল জি-৭ জোটভুক্ত দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের উপস্থিতিতে একটি আন্তর্জাতিক সিকিউরিটি কনফারেন্স বক্তব্য রাখা।কিন্তু মাত্র ২ মাস আগে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার প্রশাসনের এক শীর্ষকর্মকর্তাকে ভারতে পাঠিয়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে এত কঠোর মন্তব্য করা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ও ইঙ্গিতবাহী পদক্ষেপ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গাবার্ড নিজেও একজন হিন্দু। তবে ভারতের সঙ্গে তার সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভুত নন। তাঁর মা হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন এবং নিজের সন্তানদেরও হিন্দু নাম রেখেছিলেন।যদিও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তুলসী গাবার্ডের মন্তব্যকে ইউনুস প্রশাসন বলেছেন বিভ্রান্তিকর।কিন্তু মার্কিন |গোয়েন্দা কর্তার বক্তব্যে ইউনুস সরকারের ঘুম উবে গেছে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।কারণ তুলসী গাবার্ড ইতিপূর্বে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সর্বত্রই সংখ্যালঘু নির্যাতন বিশেষতঃ হিন্দুদের উপর অত্যাচারের বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসে সরব থেকেছেন। তুলসী গাবার্ড নিজে মার্কিন কংগ্রেসের প্রথম হিন্দু নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। খোদ মার্কিন দেশেও গাবার্ডের ভূমিকা ও এই সংশ্লিষ্ট কাজকর্ম বিভিন্ন সময়ে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে।মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে গাবার্ড ডেমোক্রেটদের সংশ্রব ত্যাগ করে ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারে নামেন।প্রেসিডেন্ট পদে বসেই ট্রাম্প তুলসীকে দেশের ইনটেলিজেন্সের মুখ্য দায়িত্বে নিয়ে আসেন।এই আবহে তুলসী গাবার্ডের এই বক্তব্যের পেছনে গোটা ট্রাম্প প্রশাসনের সবুজ সংকেত কাজ করেছে তা বলাই বাহুল্য।সেই দিক থেকে বাংলাদেশ ইস্যুতে গাবার্ডের এই পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য ভারতের জন্য বড় বার্তা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.