গত সাতবছরে উল্লেখযোগ্য সাফল্য, রাজ্যে উদ্যানজাত চাষে সবথেকে উজ্জ্বল সম্ভাবনা, দাবি রতনের!!
গত সাতবছরে উল্লেখযোগ্য সাফল্য, রাজ্যে উদ্যানজাত চাষে সবথেকে উজ্জ্বল সম্ভাবনা, দাবি রতনের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে কৃষিক্ষেত্রে সবথেকে উজ্জ্বল সম্ভাবনা হচ্ছে উদ্যানজাত (হর্টি) ফসল চাষে।শুধু তাই নয়,এতে কৃষকদের আর্থিক লাভের সম্ভাবনাও সবথেকে বেশি।কিন্তু আমাদের রাজ্যে উদ্যানজাত ফসল চাষে সবথেকে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে জমির স্বল্পতা। তারপরেও যতটুকু সম্ভব আমরা উদ্যানজাত ফসল চাষে অধিক গুরুত্ব দিয়েছি। একই সাথে পতিত জমিকে চাষযোগ্য করে সেখানে উদ্যানজাত ফসল উৎপাদনে জোর দিয়েছি। এতে সাফল্য আসছে। মঙ্গলবার মহাকরণে এই কথাগুলি বলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরা দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের একটি প্রান্তিক এবং অত্যন্ত ছোট একটি রাজ্য। আয়তন মাত্র ১০,৪৯১ বর্গ কিলোমিটার। এরমধ্যে অর্ধেকের উপর হচ্ছে পাহাড়। লোকসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এবং নানা কারণে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ক্রমশ কমছে। এই বাস্তব পরিস্থিতিকে মাথায় রেখেই যাবতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হচ্ছে। তারপরও যতটুকু সম্ভাবনা আছে, তার পুরোটাই আমরা কাজে লাগাতে চাইছি। সেইভাবেই পরিকল্পনা গ্রহণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। জমির স্বল্পতা থাকা সত্বেও উদ্যানজাত ফসল উৎপাদনে ত্রিপুরা গত সাত বছরে বহু ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছে।
মন্ত্রী বলেন, পূর্বতন সরকারের শেষ সাত বছরের সাথে বর্তমান বিজেপি জোট সরকারের সাত বছরের উদ্যানজাত ফসলের উৎপাদনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে, এই সময়ে কতটা অগ্রগতি হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, পূর্বতন সরকারের শেষ সাত বছরে নানা ধরনের ফল, যেমন আনারস, কাঁঠাল, লেবু, কলা, আম, মুসাম্বি, কমলা, ড্রাগন ফল, কুল, পেয়ারা, লিচুএভোকাডো ইত্যাদি ফল চাষের জমি ছিলো ৫২৫৩ হেক্টর। বর্তমান বিজেপি জোট সরকারের সাত বছরে ফল চাষের জমি সম্প্রসারণ করা হয়েছে ১৫,১৯৭.২ হেক্টর।এরমধ্যে পূর্বতন সরকারের আমলে কাঁঠাল, ড্রাগন ফল এবং এভোকাডো ফলের কোনও চাষই করা হয়নি। বর্তমান সরকার এই তিনটি ফলের চাষ শুরু করেছে। বাগিচা ফসল চাষ যেমন সুপারি, নারকেল, কাজুবাদাম পূর্বতন সরকারের সাত বছরে চাষের জমি ছিলো মাত্র ১০৭হেক্টর। বর্তমান সরকার সেটাকে বাড়িয়ে ৬০৩৩.৫ হেক্টর করেছে। এরমধ্যে বাম আমলে সুপারি চাষের জমি ছিলো মাত্র ৯০ হেক্টর, আমরা এখন ৪৮৪৮.৫ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ করছি। নারকেল চাষের জমি ছিলো মাত্র ১৭ হেক্টর,আমরা সেটা বাড়িয়ে এখন ১১১৯ হেক্টরে নিয়ে গেছি। কাজুবাদাম চাষ ছিলোই না। আমরা ৬৬ হেক্টর জমিতে কাজুবাদামের চাষ করছি।
মন্ত্রী জানান, হাইব্রিড সবজি চাষের জমি বাম আমলের শেষ সাত বছরে ছিলো ৮৯৯৪ হেক্টর। আমরা সাত বছরে করেছি ২২,৪০৪ হেক্টর। ফুল চাষ বামেদের সাত বছরে ছিলো ৪৩৮ হেক্টর। আমরা সেটা বাড়িয়ে করেছি ১৮৯১ হেক্টর। মশলা চাষ বামেদের সাত বছরে ছিলো ১১৩ হেক্টর, আমরা সাত বছরে করেছি ১৬৫৮ হেক্টর জমিতে। অয়েল পাম চাষের এলাকা বাম আমলে ছিলো শূন্য, আমরা সাত বছরে করেছি ২০০৮ হেক্টর। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ১০,০০০ হেক্টর। সুরক্ষিত পরিকাঠামোর মাধ্যমে মনোরম ফুলের চাষ, যেমন জারবেরা, এম্বুরিয়াস, অর্কিড ইত্যাদি বামেদের সাত বছরে একটিও ছিলো না। আমরা সাত বছরে করেছি ৪৯৯টি। আরও ৮৭টি তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বামেদের সাত বছরে পুরোনো ফলের বাগান সংস্কার করা হয়েছে ১০৭০ হেক্টর। আমরা সাত বছরে করেছি ৩৫২৯ হেক্টর। মাশরুম স্পন (বীজ) উৎপাদন বামেদের সাত বছরে করা হয়েছিল ১,১৫,১৩০টি। আমরা সাত বছরে করেছি ৩,২৩,৮২৮টি। গত সাত বছরে আমরা ৪ লক্ষ ৯১ হাজার কৃষক পরিবারকে ফল গাছের চারা এবং সবজি বীজ বিতরণ করেছি। স্টেগারিং পদ্ধতিতে আনারস উৎপাদন, বামেদের সাত বছরে ছিলো ১১৪০ হেক্টর, আমরা করেছি ৬০২৪ হেক্টর। জলাধার নির্মাণ বামেদের সাত বছরে করা হয়েছিল ৬৯২টি। আমরা সাত বছরে করেছি ৩০৫২টি।কেঁচো সার উৎপাদন ইউনিট বামেদের সাত বছরে ১৮১৪ জন কৃষককে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। আমরা সাত বছরে ২৫,৪৪৩ জন কৃষককে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিয়েছি। হর্টিকালচার রিসার্চ কমপ্লেক্স নাগিছড়াতে একটি ১০ মেঃ টন ক্ষমতাসম্পন্ন প্যাকহাউস স্থাপন করা হয়েছে। বামেদের সাত বছরে সবজির উৎকর্ষ কেন্দ্র ছিলো মাত্র ১টি জুমের ডেফাতে। আমরা গত সাত বছরে বীরচন্দ্র মনুতে ১টি সবজির উৎকর্ষ কেন্দ্র করেছি। সবজি সংরক্ষণের জন্য সারা রাজ্যে ১০টি সৌরশক্তি চালিত হিমকক্ষ স্থাপন করেছি। বামেদের আমলে একটিও ছিলো না। গোমতী জেলার তৈদুতে লেবু গোত্রীয় ফলের উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। পশ্চিম জেলার লেম্বুছড়াতে ফুলের উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ধলাই জেলার নালকাটায় | সমন্বিত প্যাকহাউস স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। দুটি পুষ্প প্রদর্শনী ইউনিট ১টি বাধারঘাটে, অন্যটি মোহনপুরে স্থাপনের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। সরকারী ফলের বাগানে সৌরশক্তি চালিত অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে ৪২টি। গোডরেজ এগ্রোভেট কর্তৃক ভোজ্য পামঅয়েল প্রক্রিয়াকরণ কারখানার শিলান্যাস করা হয়েছে। এখন কাজ চলছে। উন্নত প্রজাতির এআরসি আলু বীজ বিতরণ করা হয়েছে ৪০.৭৫ মেট্রিকটন।
শুধু তাই নয়, কৃষিমন্ত্রী জানান, গত সাত বছরে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রেও আমাদের রাজ্য সারাদেশে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে। যেমন সিম উৎপাদনে ত্রিপুরা সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ফুলকপি উৎপাদনে সারা দেশে ত্রিপুরা চতুর্থ স্থানে। মটরশুটি উৎপাদনে সারা দেশে ত্রিপুরা চতুর্থ স্থানে। টমেটো উৎপাদনে সারাদেশে ত্রিপুরা চতুর্থ স্থানে। কাঁঠাল উৎপাদনে সারা দেশে ত্রিপুরা চতুর্থ স্থানে। সুপারি উৎপাদনে সারা দেশে ত্রিপুরা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।এইভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে ত্রিপুরা, দাবি কৃষিমন্ত্রীর।