সহাস্যে বাজার!!

 সহাস্যে বাজার!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

কবির গানের ভাষা ধার করে বলা যায় ‘বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ় এল…!’ দীর্ঘ দগ্ধ দিনের শেষে সন্ধ্যায় ঈষৎ ঝড়জল যেমন মানুষকে পরম স্বস্তি দেয়, ভারতীয় শেয়ারে বাজারে এই মুহূর্তে ঠিক সেই ধরনের স্বস্তি-পর্ব এসেছে।গত বছরের অন্তিম লগ্ন থেকে বাজারে যে লাগাতার অস্থিরতা এবং সেই সূত্রে পতন শুরু হয়েছিল এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় রাজ্যাভিষেকের পর সেই পতনের পালে যে হারে জোরালো বাতাস লেগেছিল, তাতে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েছিল কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ব্র্যান্ড অথবা বিশ্বাসের সঙ্গে ইফতার, রমজান মাসের মতো শব্দবন্ধ বেমানান হতে পারে, তবে ঘটনাচক্রে বাজারের গুমোট কাটলো পবিত্র রমজানের মধ্যেই।ঈদের আবহে বাজারে হাসি ফুটল কেন, তার নেপথ্যে কোনও আধিদৈবিক শক্তি কাজ করেছে কি না, সে বিতর্ক থাক।কিন্তু বাজার হেসে উঠেছেস, ষাঁড়ের গুঁতো ফের তেজি হয়েছে এটাই বিরাট স্বস্তির।গত ছয় মাস ধরে ১২,০০০ পয়েন্টেরও বেশি হারিয়েছিল সেনসেক্স। তার এক-তৃতীয়াংশ (৪২০০) ফেরত এল মাত্র ছয়দিনে! বিনিয়োগকারীদের ঘরে ফিরল ২৭.১০ লক্ষ কোটি টাকা। প্রায় ১১০০ পয়েন্ট উঠে সেনসেক্স এখন ৭৮,০০০ ছুঁই ছুঁই। পাশাপাশি নিফটি ৩০৭.৯৫ এগিয়ে ২৩,৬৫৮.৩৫-এ।
এই ইঙ্গিতে স্পষ্ট যে, ফের ভারতে শেয়ার কিনছে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি। মূলত তাতেই বাজারে হাসি ফিরেছে। মাথা তুলেছে ছোট (১.১৭ শতাংশ) এবং মাঝারি (১.৩২ শতাংশ) মাপের শেয়ারের সূচকও।প্রশ্ন হল,এই ঘুরে দাঁড়ানো দীর্ঘমেয়াদি কি না। এর উত্তর নির্ভর করছে দেশে শিল্পের উন্নতি, চলতি অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিক জানুয়ারী-মার্চে সংস্থাগুলির আর্থিক ফল এবং আমেরিকার শুল্কের উপরে। বাজার একাই হাসেনি, টাকাও হেসেছে। ডলারের নিরিখে টাকার দর বেড়েছে। সার্বিকভাবে ২০২৫-এ ভারতীয় মুদ্রার যেটুকু ক্ষয় হয়েছিল, তা পুরোটাই গত সাতদিনে উসুল হয়েছে। আরও আশার কথা, বিদেশি সংস্থার শেয়ার বিক্রির চাপ কমেছে।ফলে উন্নতি পরিলক্ষিত বিদেশি মুদ্রা ভান্ডারেও।সামনে অনিশ্চয়তা বলতে আমেরিকার শুল্কনীতি, যা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে লাগু হওয়ার কথা।
গত ছয় মাস নিরবচ্ছিন্ন পতনের পরে গত সপ্তাহেই (১৭-২১ মার্চ) টানা উত্থানের সাক্ষী থেকেছে বাজার। সেনসেক্স লাফিয়েছে ৩১২২ পয়েন্ট, নিফটি ৮৮০।আরও প্রাঞ্জল করে বললে, চার বছরের মধ্যে এক সপ্তাহে এটাই সেরা উত্থান।ফলে লগ্নিকারীদের খাতায় লোকসানের যে বিরাট পাহাড় গড়ে উঠেছিল, তা কিছুটা হলেও মাথা নামিয়েছে।আবার গত কয়েক মাসের পতনে যারা ভালো শেয়ার কিনেছেন বা ফান্ডে এসআইপি জারি রেখেছেন, তারাও সুফল পেতে শুরু করেছেন। শেয়ারে লোকসানের প্রায় ২৫ শতাংশ উদ্ধার হয়েছে পাঁচদিনে। পুরোটা ফিরতে কত সময় লাগবে এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়, কারণ তার জন্য দেশে বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ হতে হবে। অনুকূলে থাকতে হবে বিশ্ব বাজার।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সেনসেক্স উঠেছিল ৮৫,৮৩৬ পয়েন্টে, যা এ যাবৎকালীন তার সর্বোচ্চ বিন্দু। সেই জায়গা থেকে সেনসেক্স নেমেছিল ৭৩,৮২৯-এ। অর্থাৎ হারিয়েছিল ১২,০০৭ পয়েন্ট, করোনার ওই দুঃসহ কালখন্ড বাদ দিলে এমন বেনজির পতন গত উনত্রিশ বছরে প্রথম। শুল্ক যুদ্ধ কবে শেষ হবে তা স্পষ্ট নয়। ডলারের নিরিখে টাকা ধারাবাহিকভাবে শক্তিক্ষয়ে ভারতীয় শেয়ার বাজারের প্রতি বিদেশি লগ্নিকারীদের উৎসাহে ভাটা পড়ছিল। এই সমস্ত কিছুর মিলিত প্রভাবে এ মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে (১৩ মার্চ পর্যন্ত) নিট হিসাবে বিদেশি লগ্নিকারীরা ৩০,০১৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে। এর আগে জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারীতে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতের বাজার থেকে যথাক্রমে ৭৮,০২৭ কোটি এবং ৩৪,৫৭৪ কোটি টাকার পুঁজি সরিয়ে নিয়েছিল। নিট হিসাবে টানা ১৪ সপ্তাহ ধরে জারি ছিল বিদেশিদের মূলত চিনমুখী পুঁজি প্রত্যাহার।
বাজার ফের সহাস্য হওয়ার অন্যতম কারণ ফেব্রুয়ারীতে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যের (৪ শতাংশ) নিচে নামা। আমেরিকায় এই দফায় সুদ না কমলেও চলতি বছরে দুইবার কমানোর বার্তা সত্ত্বেও গত সপ্তাহের শেষ দুইদিনে শেয়ার কিনতে নেমে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি ভারতে ১০,৭০৯ কোটি টাকা। তবে উৎকণ্ঠাপূর্ণ অবসিত হয়েছে, তা নয়। নজরে এখন ২ এপ্রিল। ভারতীয় পণ্যে আমেরিকা কী হারে শুল্ক চাপায় তা জানতে উদ্‌গ্রীব বাজার।শুল্ক আশঙ্কার থেকে কম হলে সূচক ফের লাফাবে।বেশি হলে ফের পতনের আশঙ্কা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.