‘জাত’ ইস্যুতে ফের ওয়াকআউট, ব্যাকফুটে সিপিএম,বিরোধী নেতার প্রিভিলেজ বাতিল পাল্টা গৃহীত রতনের অভিযোগ!!

 ‘জাত’ ইস্যুতে ফের ওয়াকআউট, ব্যাকফুটে সিপিএম,বিরোধী নেতার প্রিভিলেজ বাতিল পাল্টা গৃহীত রতনের অভিযোগ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-‘জাত’ ইস্যুতে বুধবারও উত্তাল হলো রাজ্য বিধানসভা। শুধু তাই নয়, এই ইস্যুতে বুধবার বিধানসভায় অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথের অভিযোগের ভিত্তিতে সিপিএম দলের মুখপত্র এবং ওই পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ (প্রিভিলেজ মোশন) গ্রহণ করেছেন। অধ্যক্ষ ওই পত্রিকা এবং পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে নোটিশ ইস্যু করার রুলিং দিয়েছেন।
একই সঙ্গে পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথের বিরুদ্ধে আনীত বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ গ্রহণের আবেদন বাতিল করে দিযেেেছন অধ্যক্ষ। এই ঘটনায় সিপিএম বিধায়করা তীব্র প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদে সরব হয়ে সিপিএম বিধায়করা ওয়েলে নেমে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে প্রায় মিনিট দশেক স্লোগান দিতে থাকেন। ওই সময় ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরাও পাল্টা সরব হন।উভয়পক্ষের তীব্র বাদানুবাদের মধ্যে অধ্যক্ষ সভা চালিয়ে যেতে থাকেন। শেষে রণে ভঙ্গ দিয়ে বেলা ১২টা ১০ মিনিটে সিপিএম বিধায়করা অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেন।
ওয়াকআউট চলাকালীন সময়ে সিপিএম বিধায়ক দীপঙ্কর সেন আবার হাউসে প্রবেশ করেন। তিনি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির রিপোর্ট পেশ করে আবার অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যান। পরে বিধানসভায় অধিবেশন কক্ষের বাইরে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী সহ অন্য বিধায়করা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সংবিধান অবমাননার অভিযোগ তুলে বাজেট অধিবেশনের বাকি দিনগুলি বয়কট করার ঘোষণা দেন।সিপিএম দলের ওই সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালীন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণও সেখানে হাজির হন।
‘বুধবার বিধানসভার শূন্যকালে অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন জানান, আজ আমি দুটি স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ পেয়েছি। একটি এনেছেন পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ এবং দ্বিতীয়টি এনেছেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। আমি দুটি নোটিশ বিস্তারিতভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা করে পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথের অভিযোগটি উত্থাপনের সম্মতি দিয়েছি। অধ্যক্ষের এই বক্তব্য শুনে বিরোধী দলনেতা তার অভিযোগটি কী হলো? জানতে চান। অধ্যক্ষ তাকে অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর অধ্যক্ষ রতনলাল নাথকে তার অভিযোগটি উত্থাপন করার জন্য বলেন।রতনবাবু গত ২৪ মার্চ বিধানসভার নথিভুক্ত রেকর্ড এবং ২৫ মার্চ সিপিএম দলের মুখপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলেন, আমি ২৪ মার্চ জিতেন্দ্রবাবুকে কী বলেছিলাম এবং অন্য সদস্য-সদস্যরা কে কী বলেছেন, বিধানসভার এই রেকর্ডেই সব নথিভুক্ত আছে। রতনবাবু বলেন, আমি বলেছি ‘উনার ভাষণে উনি জাত চিনিয়ে দিয়েছেন।’ ওই দিনই সিপিএম বিধায়ক অশোক মিত্র যখন বক্তব্য রাখছিলেন, তখন আমি আবার অশোকবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেছি ‘মাস্টারবাবু, একটু আগে আমি জিতেন্দ্রবাবুকে বলেছিলাম উনার ভাষণে কমিউনিস্টের জাত চিনিয়েছেন। আপনাকে এই জায়গায় আর নেব না, কারণ আপনি এই জায়গায় নেই।’ সবই রেকর্ডে উল্লেখ আছে। রতনবাবু বলেন, ‘জাত’ কথাটি কোনও অসাংবিধানিক শব্দ নয়। ‘জাত’ আর ‘জাতি’ এক কথা নয়। আমি যদি বলি মেসি ফুটবলে তার জাত চিনিয়েছেন। এটা কি কোনও অসাংবিধানিক বা মেসির জাতি নিয়ে কটূক্তি করা হবে? আমি তো জিতেন্দ্রবাবুকে ভালো কথা বলেছি। উনার তো খুশি হওয়ার কথা।
কিন্তু আমার ‘জাত’ কথাটির ভুল ব্যাখ্যা করে সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে ২৫ মার্চ ডেইলি দেশের কথায় উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই উদ্দেশ্যমূলক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা । হয়েছে। এতে আমার স্বাধিকার ভঙ্গ হয়েছে বলে আমি মনে করি। রতনবাবুর বক্তব্য শুনে অধ্যক্ষ তার অভিযোগ গ্রহণ করেন এবং সিপিএম মুখপত্র ও মুখপত্রের সম্পাদকের বিরুদ্ধে ‘প্রিভিলেজ মোশন’-এর নোটিশ ইস্যু করার রুলিং দেন। এরপর অধ্যক্ষ বলেন, বিধানসভার আইন মোতাবেক একই দিনে একটির বেশি প্রিভিলেজ গ্রহণ করতে পারি না। তাছাড়া পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল -নাথের নোটিশটি যেহেতু আমি আগে পেয়েছি, তাই সেটিকেই উত্থাপনের সম্মতি দিয়েছি।
অধ্যক্ষের এই বক্তব্যের পরই অধিবেশন সরগরম হয়ে ওঠে। বিরোধী সিপিএম বিধায়করা উঠে দাঁড়িয়ে একযোগে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। জিতেন্দ্রবাবু অধ্যক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এইভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবেন না। এইভাবে হয় না। অধ্যক্ষ বলেন, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার প্রশ্নই আসে না। আইনের বাইরে গিয়ে তো আমি কিছু করতে পারবো না। বিধানসভার যে রুলস আছে, আমাকে সেই রুলস মেনেই কাজ করতে হবে। এখানে পক্ষপাতিত্বের কোনও সুযোগ নেই। অধ্যক্ষ বলেন রতনলাল নাথ অভিযোগ জমা দিয়েছেন ২৫ মার্চ বেলা ১২টা ১০ মিনিটে।জিতেন্দ্রবাবু আপনার অভিযোগ পেয়েছি দুপুর ১টা ২০ মিনিটে।ফলে আগে যেটা পেয়েছি, সেটাই গ্রহণ করেছি। এরপর সভা আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সিপিএম বিধায়করা ওয়েলে নেমে প্রতিবাদে সরব হন। প্রায় দশ মিনিট তীব্র হট্টগোল চলে। এরপর সিপিএম বিধায়করা ওয়াক আউট করেন। সিপিএম বিধায়করা ওয়াক আউট করার পর কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এতদূর না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে শেষ করার দাবি জানান। এই ব্যাপারে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী যেন ইতিবাচক পদক্ষেপ নেন। সুদীপবাবুর এই বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমিতো সেদিনই চেষ্টা করেছিলাম। আপনারা নিশ্চয়ই সবাই লক্ষ্য করেছেন যে, ওইদিন তীব্র বাদানুবাদের মধ্যে আমি কিছু বলার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু ওরা তো কথাই শোনেনি।
এই বিষয়ে পরে পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিতেন্দ্রবাবুরা মানুষকে বিভ্রান্ত করে সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে রাজ্যে আগুন লাগাবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এদের এই উদ্দেশ্য সফল হবে না। রাজ্যবাসী এদের ভালো করেই জানে। মানিক সরকার এবং বাদল চৌধুরীরা থাকলে তারা এই সিদ্ধান্ত নিতেন না। জিতেন্দ্রবাবু দীর্ঘদিন বিধায়ক ছিলেন। মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। কিন্তু বিধানসভার রুলস সম্পর্কে কিছুই জানেন না। জানলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করছেন। বিধানসভার আইনে আছে, একটি অধিবেশনে একটাই প্রিভিলেজ আনা যায়। দ্বিতীয়ত, কোনও সদস্য বা সদস্যার বিরুদ্ধে প্রিভিলেজ আনলে, আগে অধ্যক্ষকে যার বিরুদ্ধে প্রিভিলেজ আনা হচ্ছে সেই সদস্য বা সদস্যার শুনানি গ্রহণ করতে হবে। এর বাইরে অধ্যক্ষের যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আসলে ওদের বলার মতো কিছুই নেই।তাই নানাভাবে নাটক মঞ্চস্থ করছে।সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে,এই ইস্যুতে আজ বিধানসভার দ্বিতীয়বেলায় মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা প্রধান বিরোধী দলকে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে হাউসে আসার আহ্বান জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের পীঠস্থান হচ্ছে বিধানসভা। এখানে নানা ইস্যুতে বাকবিতণ্ডা হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। তাছাড়া এটা বাজেট অধিবেশন। রাজ্যবাসীর স্বার্থে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতেও হবে। এখানে বিরোধীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব পালন থেকে তারা বিরত থাকবেন কেন?তাই আমি বলবো হাউসে আসুন। আলোচনা হোক, বিতর্ক হোক।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.