প্রশ্নের মুখে বৈধ সীমান্ত বাণিজ্য, আমদানির তুলনায় রপ্তানি নামমাত্র, পরিস্থিতি চিন্তাজনক!!
অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ!!

আর ও একবার ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘আপনি মোড়ল’ ঢঙে হস্তক্ষেপ করেছে আমেরিকা, এবং এমনভাবে করেছে যাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নরেন্দ্র মোদি সরকারের অস্বস্তি বাড়ে।অতি সম্প্রতি আমেরিকার ফেডারাল সরকারের গঠিত একটি কমিশন ভারতের গুপ্তচর সংস্থা (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং)-এর উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশ তারা আদৌ মানবে কি না, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে মার্কিন সরকারের উপরেই।কারণ, ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম নামের এই কমিশনের সুপারিশ মান্য করা ট্রাম্প প্রশাসনের বাধ্যতামূলক নয়।কমিশনের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বের নানা প্রান্তে খলিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যা এবং হত্যার চেষ্টায় জড়িত রয়েছে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’। স্মরণে থাক, ২০২৩ সালের পর থেকেই আমেরিকা এবং কানাডা খালিস্তানপন্থী নেতাদের উপরে হামলা নিয়ে র-এর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে চলেছে এবং পাল্টা সে দাবি বারংবার নস্যাৎ করেছে নয়াদিল্লী। আমেরিকান ওই কমিশনের রিপোর্টে এ যাত্রায় বলা হয়েছে,২০২৩ সাল থেকে ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতার অবনতি হচ্ছে। ভারতে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণও বৃদ্ধি পেয়েছে। রিপোর্টে এমনকী নামোল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রচার পর্বে সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন করেছেন মোদি এবং বিজেপি। রিপোর্টটি প্রকাশের পরেই ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র পত্রপাঠ সেটিকে পক্ষপাতমূলক বলে আখ্যা দিয়ে পাল্টা বলেছেন, ‘অন্যবারের মতো এবারও এই কমিশনের রিপোর্ট পক্ষপাতমূলক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
এবারই প্রথম নয়, আগেও ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করেছে আমেরিকার বিভিন্ন সংগঠন ও কমিশন।বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন, নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইন, গো-হত্যা প্রতিরোধের মতো আইন ভারত সরকার জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে এবং এর জেরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিশানা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছিল আমেরিকা।গত বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে,
আরও এক ধাপ এগিয়ে ভোট যাতে নিরপেক্ষ হয়, তা নিয়ে সওয়াল করে আমেরিকা।সে সময় প্রকৃত বন্ধুর মতো ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রকের তরফে পাল্টা বলা হয়, ভারতের জাতীয়তাবাদ ও ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা কম আমেরিকার, তাই ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে আমেরিকা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। আমেরিকার অভিযোগকে ‘অবমাননাকর’ বলেও আখ্যা দেয় রাশিয়া।
কারণ কী? ভিন্ন, তদুপরি মিত্রভাবাপন্ন দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন সংগঠন এবং বিবিধ কমিশনের এত বিষোদগার কেন? যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিধর দেশ ঠিকই, কিন্তু তাই বলে যে কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তাদের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ মোটেই বিধেয় নয়। ভারতের কাছে আমেরিকা ঠিক কী চায়? সোমালিয়া-ইথিওপিয়া কিংবা ভুটান-বাংলাদেশের মতো তাদের সামনে নতজানু হয়ে থাকবে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাবেক্ষা বৃহৎ ও শক্তিধর দেশটিও? গত মাসেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ওয়াশিংটন সফর সেরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুল্ক নিয়ে যাবতীয় চাপানউতোরের আবহে দুই পক্ষই পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় করার বার্তা দিয়েছে। শীর্ষস্তরের বৈঠকান্তে যৌথ বিবৃতি জারি হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসার পরেই, সমস্ত কূটনৈতিক শিষ্টাচার জলাঞ্জলি দিয়ে ভারত সম্পর্কে ট্রাম্পের মুখে ছুটেছে বেলাগাম বিদ্রূপ ও কটাক্ষ। একেবারে নাম করে তিনি অভিযোগ করেন, ভারতে ভোটারদের বুথমুখী করতে তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ১৮২ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন! এর আগে টাম্প ভাবতকে ‘শুল্কের রাজা’ বলে কটাক্ষ করেছেন।পরিস্থিতি শান্ত করতে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে তড়িঘড়ি আমেরিকা পাঠিয়েও ট্রাম্পের মন পায়নি ভারত। চলতি মাসের গোড়ার দিকে মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের ভাষণে ট্রাম্প জানিয়ে দেন,২ এপ্রিল থেকে ভারতের ক্ষেত্রেও চালু হবে পারস্পরিক শুল্কনীতি।
এবার মার্কিন কমিশনের রিপোর্টের কড়া জবাব দিয়েছে সাউথ ব্লক-ও। আমেরিকার এই তথাকথিত ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কমিশনটি গোটা বিশ্বের কাছে ‘উদ্বেগের বিষয়’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ এনেছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই রিপোর্ট যথা পূর্বং পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বাস্তবচিত্রের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমেরিকা বিলক্ষণ জানে, ভূরাজনৈতিক গুরুত্বে ভেনিজুয়েলা আর ভারত এক নয়। বিশেষত গোটা বিশ্বে চিনের আধিপত্য খর্ব করতে ভারতকে পাশে পাওয়া ছাড়া কিন্তু আমেরিকার গত্যন্তর নেই।এই সারসত্য ভুলতে বসলে তাদেরই ক্ষতি।