বড় দায়িত্ব ভারতের!!

স্বাধীনোত্তর ভারতের ইতিহাসে টাকার অঙ্কে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে বৃহত্তম প্রতারণা মামলা প্রকাশ্যে আসার সাত বছর পর সম্প্রতি বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার হয়েছেন মেহুল চোক্সী।হিরার রাজধানী বলে পরিচিত অ্যান্টার্প থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে সে দেশের পুলিশি।পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ১৩,৮৫০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি মামলায় সিবিআইয়ের এফআইআরে মূল দুই অভিযুক্ত গুজরাটের দুই প্রখ্যাত হিরা ব্যবসায়ী মেহুল চোক্সী ও তার ভাগ্নে নীরব মোদি।পিএনবি আর্থিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে ২০১৮ সালের গোড়ায়।তার আট দিন আগেই সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে নিঃশব্দে দেশান্তরী হন মেহুল।মামার সাত দিন আগে দেশ ছেড়ে লন্ডনে পালান নীরবও।সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। আশ্রয় দূরস্থান,২০১৯ সালের মার্চে পিএনবি কেলেঙ্কারিতেই লন্ডনে ধরা পড়েন নীরব মোদি।সেই থেকে তার ঠিকানা লন্ডনের একটি জেল।সেখানে সাতবার তার জামিনের আবেদন নাকচ হয়েছে।মেহুল এবং নীরব, অভিযুক্ত দুই ঠগের বিরুদ্ধে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রতারণা মামলা চললেও, নীরবকে এখনও দেশে ফেরাতে পারেনি কেন্দ্র।এখন মেহুলকে ফেরানো সম্ভব কি না, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।এখানেই ভারত সরকারের বড় দায়িত্ব, দেশের সামনে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি প্রমাণ করার।
মেহুলের গ্রেপ্তারিকে সরকারের বড় সাফল্য বলে দাবি করেছে কেন্দ্র। দাবি করা হয়েছে,ভারতের অনুরোধেই তাকে গ্রেপ্তার করেছেন সে দেশের কর্তৃপক্ষ। অনেকের হয়তো স্মরণে আছে, ২০১৫ সালের নভেম্বরে ৭ লোককল্যাণ মার্গে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আয়োজিত এক সভায় স্বর্ণ ও অলঙ্কার শিল্পের তাবড় রথী-মহারথীদের সঙ্গে দর্শকাসনে বসেছিলেন মেহুল চোক্সীও।প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে ‘হমারে মেহুল ভাই’ বলে সম্মোধন করেছিলেন।ফলে এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে একাধিক দুর্নীতির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে ইউপিএ সরকারের পতন ঘটার পরে দেশকে সুদিনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদি সরকার ক্ষমতায় এলেও, মেহুল ও নীরব পিএনবি লুটের খেলা বহাল তবিয়তে জারি রেখেছিলেন।এতেও ভুল নেই যে, মেহুল চোক্সী, নীরব মোদিরা মোদি সরকারের আমলেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।এই দুই হীরা বারমাসীর মন্ত্রেই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ছিল।নীরব মোদি দেশ ছেড়ে পালানোর আগে দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম-এ নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যাওয়া শিল্প মহলের প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন তিনি।
সম্প্রতি মুম্বাইয়ের কুখ্যাত ২৬/১১ হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী তাহাউর হুসেন রানাকে আমেরিকা থেকে ভারতে ফিরিয়ে এনে কেন্দ্র বাহবা কুড়োনোর চেষ্টা করেছে। এই আবহেই বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার হয়েছেন চোক্সী। তবে শুধু গ্রেপ্তারির খবর ফলাও করে জাহির করে কিছু হবে না।২০২১ সালে মেহুল চোক্সী ডমিনিকান রিপাবলিকে গ্রেপ্তার হলে তাকে ধরতে ৪৪ কোটি টাকা খরচ করে প্রাইভেট জেটে চড়ে সে দেশে পাড়ি দিয়েছিল সিবিআই।তবু তাকে ধরা যায়নি। চোক্সী হোক বা নীরব মোদি কিংবা বিনয় মিত্তাল অথবা বিজয় মালিয়া; যারা এ দেশের লক্ষ কোটি টাকা তছরুপ করে, এই সরকারের নাকের পাশ দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন, আজও সরকার তাদের দেশে ফেরাতে পারেনি। অতএব বেলজিয়ামে মেহুলের গ্রেপ্তারি টেলিভিশনের সান্ধ্যবাসরে বিতর্কের উৎকৃষ্ট বিষয় হলেও, এ দেশের সাধারণ জনতার এতে কানাকড়িও লাভহবে কি? সেটাই প্রশ্ন। ২০১৪ সালের পর থেকে যত আর্থিক অপরাধী দেশ থেকে পালিয়েছেন, তেমনটা আগে কখনও হয়নি।২০১৮ সালে মেহুলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করে পিএনবি। তার ভিত্তিতে সিবিআই তদন্ত শুরু হয়। পরে তদন্তে নামে ইডিও। পিএনবির অভিযোগ, জাল নথি এবং চিঠি দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে, কানাকড়িও শোধ দেননি মেহুল। যার জেরে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিপুল ক্ষতি হয়। ইডি পরে জানায়, বেআইনিভাবে বিদেশি অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করেছেন চোক্সী। পিএনবি মামলায় মুম্বাইয়ের আদালত গত বছর ফেব্রুয়ারীতে চাক্সীর সংস্থার তেরোটি সম্পত্তি নিলামে তোলার নির্দেশ দেয়।
তাহাউর রানার সহযোগী ডেভিড হোলম্যান হেডলি বা চোক্সীর ভাগ্নে নীরব এখনও ভারতের নাগালের বাইরে। ভারত সরকারের বড় দায়িত্ব চাক্সীকে ভারতে ফেরানো।শুধু চোক্সী একা নন, বিজয় মালিয়া, নীরব নাদি, ললিত মোদি, নীশল মোদি, বিনয় মিশ্র, আনমোল বিষ্ণোই, শাল্ডি ব্রার, অর্শ দল্লা, হাজরা ইকবাল মেমন, বিনয় মিত্তাল-সহ দেশান্তরী ভিযুক্তের তালিকাটি দীর্ঘতর। এদের সকলকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া রু করা ভারত সরকারের সামনে বড় দায়িত্ব।