ইতিহাস গড়েছেন মোদি: বিপ্লব, নিশ্চিত থাকুন, ভালোর জন্যই ওয়াকফ সংশোধনী: মুখ্যমন্ত্রী!!

 ইতিহাস গড়েছেন মোদি: বিপ্লব, নিশ্চিত থাকুন, ভালোর জন্যই ওয়াকফ সংশোধনী: মুখ্যমন্ত্রী!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভালো কাজ করলে বিরোধীরা এর বিরোধিতা করবেই। বৃহস্পতিবার ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে জনজাগরণ তৈরি করার লক্ষ্যে আয়োজিত এক কর্মশালায় এমনটাই বলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা।তিনি বলেন, এর আগেও তিন তালাক প্রথা বাতিল, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারার অবলোপন সবেতেই বিরোধিতা হয়েছে। তিন তালাক প্রথা বাতিলের সময় বিরোধীরা ভেবেছিলেন দেশজুড়ে হয়তো আগুন জ্বলবে। কাশ্মীরের ৩৭০ ধারার ক্ষেত্রেও অনুরূপ চিন্তাভাবনা ছিলো।কই কিছুই তো হয়নি।কর্মশালায় উপস্থিত মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তাই তিনি বললেন, নিশ্চিত থাকুন, প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন যা-ই করেছেন, তা মানুষের ভালোর জন্যই করেছেন। আপনাদের যেমন ভালো হবে, দেশেরও ভালো হবে।
সম্প্রতি ওয়াকফ বিলে সংশোধনী আনার পর দেশজুড়ে তুমুল হই-হট্টগোল পড়ে যায়। বিরোধিতা শুরু হয়ে যায় বিরোধীদের। এই অবস্থায় সংশোধনী এই আইন নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজধানী আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত এক কর্মশালা থেকে মুখ্যমন্ত্রী তাই বললেন, ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে সবক্ষেত্রেই বিভ্রান্তি ছড়ানোর ভূমিকায় দেখা দিয়েছে বিরোধীদের।মুখ্যমন্ত্রী এ দিন গরিব হিতৈষী – নারী বান্ধব এবং সর্বোপরি মুসলিম কল্যাণে কার্যকরী ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে জনজাগরণ তৈরি করার লক্ষ্যে আয়োজিত কার্যক্রম থেকে বলেন, ১৯৯৫ সালে তৈরি হওয়া ওয়াকফ আইনের দুর্বলতার দরুন এতদিন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর গরিব মুসলমানরা। একইসাথে কতিপয় নেতা কর্তৃক ওয়াকফ সম্পত্তির অপব্যবহার, ৪০ নং ধারার অপব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গা জবরদখল সহ আরও বেশি অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগের নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যেই পাস হয় ওয়াকফ সংশোধনী ২০২৫।
তিনি বলেন, মানুষও এখন বুঝতে পারে যে, প্রধানমন্ত্রী সবকা সাথ সবকা বিকাশের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগিয়ে যেতে চাইছেন। আর এতে বাধা সৃষ্টি করে বিভ্রান্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের কোনও দেশেই ওয়াকফ বোর্ড নেই। এদিক থেকে এই দেশে যখন আছে তখন ওয়াকফের নামে লুটের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে ধর্মপ্রাণ কিছু ব্যক্তি। স্বাভাবিকভাবেই সার্বিক জনগণের স্বার্থে সংশোধনী আনার প্রয়োজন হয়। এই সংশোধনী আনার ফলে এখন থেকে গরিব অংশের মুসলিম জনগণও উপকৃত হবেন।

সংশোধিত আইন নিয়ে মুসলমান সমাজের নাগরিকদের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত জনজাগরণ অভিযানে সম্বোধন করতে গিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন,ওয়াকফের কাছে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও তার সমস্ত সুযোগ নিয়ে আসছে অল্প কিছু লোক। এক সুফল থেকে বঞ্চিত দেশের অধিকাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকের স্বার্থেই ওয়াকফ সংশোধনী এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওয়াকফ সম্পদের অবৈধ ব্যবহার প্রসঙ্গে কংগ্রেস ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে একহাত নিলেন শ্রীদেব।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০০৬ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের সময়ে সাচার কমিটির রিপোর্টেই স্পষ্টভাবে উল্লিখিত,যে ওয়াকফের ৮০ শতাংশ জমি কিছু অল্প সংখ্যক মানুষের স্বার্থে অনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার কোনও সুফল সাধারণ মুসলিমরা পাচ্ছে না। তবুও রাজনৈতিক স্বার্থে একটা ক্ষুদ্র অংশকে তোষণ করতে গিয়ে কংগ্রেস সমগ্র অংশের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়েছিলো। কিন্তু ভারতীয় রেল ও আর্মির পর তৃতীয় সর্ববৃহৎ সম্পদ ওয়াকফের কাছে থাকলেও তাকে সার্বিক কল্যাণে কাজে লাগনো হয়নি। ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে যেখানে বাৎসরিক আয় ১২৬ থেকে ১৫০ কোটি, সেখানে রেল থেকে আসে ২.৪ লক্ষ কোটি। পাশাপাশি ১২.৫ লক্ষ রোজগার তৈরি হয়েছে। কিন্তু ওয়াকফ সম্পদ ব্যবহারে তার ধারেকাছেও নেই আয়। না আছে কোনও মেডিক্যাল কলেজ সহ অন্য কোনও জনকল্যাণকারী পদক্ষেপ।
এ দিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে নিশানা করে তিনি বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তির ৫০ শতাংশ উত্তরপ্রদেশে।কিন্তু সেখানে এই বিলের বিরোধিতায় কোনও বৃহত্তর বিরোধ বা উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ২৬ হাজার চাকরি হারানোর ঘটনা ঘুরিয়ে দিতে মমতা ব্যানার্জী স্পন্সরড দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। মানুষ এদেরকে ক্ষমা করবে না।
তিনি বলেন, ওয়াকফ বিলের পদক্ষেপ নিয়ে নরেন্দ্র মোদি ইতিহাস তৈরি করেছেন।একটা সময়ে কমিউনিস্টরা রাজ্যের মানুষকে বিজেপির বিরুদ্ধে উস্কে দিতো। কিন্তু সোনামুড়ায় খাস জমিতে মসজিদ ছিলো, বর্ডার ফেন্সিং করার সময়ে, তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে ত্রিপুরা সরকার এই বাবদ ৯০ লক্ষ টাকা দিয়েছে।কিন্তু ২০১৩ সালে কংগ্রেসের সময়ে সংশোধনী অনুসারে ওয়াকফ সম্পত্তি দাবি করলেই হতো, এমনকী ক্ষতিপূরণ পর্যন্ত দেওয়া হতো না। ওয়াকফ বোর্ডে সাধারণ মুসলিমদের জায়গা পর্যন্ত ছিল না। আহনি সহায়তারও সুযোগ ছিল না। বিহারের অধিকাংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের প্রতিনিধি পর্যন্ত ছিল না। আর এই বিলের ফলে অধিকাংশ সাধারণ মুসলিমরা এর সুফল পাবে। মহিলা প্রতিনিধি থাকবে ৩ জন।তিনি বলেন, দিল্লীর মানসিঙ হোটেলের বাৎসরিক ভাড়া যদি ১৫০ কোটি হতে পারে,তাহলে বেঙ্গালুরুতে বাণিজ্যিক এলাকায় হোটেল ভাড়া কীভাবে ১২ হাজার মাসিক হতে পারে? প্রশ্ন তোলেন তিনি। প্রসঙ্গ উল্লেখ করে, কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টিকে একহাত দেন। পাশাপাশি সম্প্রতি কৈলাসহরে ওয়াকফ বিলের বিরোধিতায় বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান শ্রীদেব।
কর্মশালায় ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে অন্যদের মধ্যে প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে সর্বভারতীয় সম্পাদক অনিল কে এন্টনি, ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান মবশ্বর আলি, সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, প্রদেশ সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি বিল্লাল মিয়া, জয়দুল হেসেন সহ সংখ্যালঘু অন্য নেতা-নেত্রী, প্রদেশের নেতা-নেত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালাশেষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে সর্বভারতীয় বিজেপি’র সম্পাদক অনিল কে এন্টনি বলেন, সংশোধনী এই আইন মূলত সংখ্যালঘু গরিব অংশের জনগণের কথা মাথায় রেখেই কার্যকর হতে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিরোধীরা। এ অবস্থায় মানুষকে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু অংশের জনগণকে সজাগ এবং সচেতন করে তুলতেই এ জাতীয় কর্মশালার আয়োজন করা হয়।তার কথায়,সংসদে এই বিলটি ইতিমধ্যেই পাস হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু লাগু হবার পালা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.